টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হবার আগে একটা ভয় ছিল। এছাড়া শেষ ওয়ানডে ম্যাচে আফগানিস্তানের জয় সেই ভয়টা আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল। এছাড়া মিরপুরের উইকেটে আফগানিস্তানের স্পিন আক্রমণ ছিল বড় দুশ্চিন্তার কারণ। তবে সেই আফগান জুজু একাই উড়িয়ে দিয়েছেন লিটন কুমার দাস। ব্যাট হাতে দারুণ এক ইনিংস খেলে জয়ের ভিত্তিটা গড়ে দিয়েছেন।
টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে দারুণ ছন্দেই ছিলেন। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে লিটনের সেরা রূপটা দেখা যাচ্ছিল না। আজ অবশ্য এই ফরম্যাটেও অসাধারন এক ইনিংস খেললেন। এই ইনিংস স্বস্তি দেয় কিনা এমন প্রশ্ন ছিল ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে। তবে লিটন জানিয়েছেন তাঁর নাকি অস্বস্তিই ছিল না কখনো। তিনি বলেন,’ প্রথমত অস্বস্তি বা এরকম কোন কিছু ছিল না। যে ভূমিকা কোন কোন দিন সফল হবেন কোন কোন দিন হবেন না। ওটা অতীত। এখন এই ম্যাচে সুযোগ পেয়েছি, তো ভালো খেলার চেষ্টা করেছি।’
তবে লিটন মনে করেন ব্যাট হাতে ভালো সময় কাটালে ফরম্যাটটা আসলে আর খুব বেশি বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না। ব্যাট হাতে দারুণ ফর্মে আছেন বলেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও রান পেলেন। লিটন বলেন, ‘ডিফরেন্ট বল গেইম। টি-টোয়েন্টিতে রাশ থাকে বেশি। ওয়ানডে আপনার কাছে এনাফ সময়, টেস্টে অনেক সময়। সংস্করণটা আসলেই ভিন্ন। আপনি যদি ভালো টাচে থাকেন যেকোন সংস্করনই সহজ হয়ে যায়।’
ওদিকে ম্যাচ শুরুর আগে ভাবা হচ্ছিল লিটন ওপেন করবেন। তবে তিনি নামলেন তিন নাম্বার পজিশনে। নিজের পজিশন নিয়ে অবশ্য খুব বেশি চিন্তিত নন তিনি। লিটন বলেন, ‘দেখেন আমি ব্যাটিং পজিশন নিয়ে কখনই আর্গুমেন্ট বা কোন কিছুতে যেতে চাই না। আমি যখন দলে খেলি আমার প্রথম প্রায়োরিটি থাকে দলকে সাহায্য করব। সেটা যদি আমাকে টিম ম্যানেজমেন্ট বলে একে ব্যাট করতে একে, সাতে ব্যাট করতে সাতে। এখন সেটা কি আমার উপর দিয়ে যাচ্ছে কিনা। যদি আমাকে কেউ বলে সাতে ব্যাট করার জন্য। টিম ম্যানেজমেন্ট ভালো বুঝবে আমি ওই জায়গার প্লেয়ার কিনা, সেখানে আমাকে খেলানো উচিত হবে কিনা। তারা যদি ভাবে ওয়ান থেকে তিনে খেলালে ভাল হবে। আমি চেষ্টা করেছি খেলার।’
বিশ্বকাপের পর টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ পড়েছিলেন এই স্পিনার। সেই ক্ষতটা অবশ্য এখনো শুকোয়নি এই ব্যাটসম্যানের। সেই সময় তাকে বাদ দেয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে লিটন বলেন, ‘ব্রেক না ড্রপ। ব্রেক কি? আমি কি অনেক ক্রিকেট খেলে ফেলেছি যে ব্রেক নিব।’
পাল্টা প্রশ্ন আসলো, ‘শুনলাম ছুটি নিয়েছিলেন বিশ্বকাপের পর…’। শুনে আসলে লিটন বেশ ক্ষেপেই গিয়েছিলেন, ‘আপনি পুরো নিউজ আগে ভালো করে জানবেন তারপরে প্রশ্ন করবেন। আমি বিশ্বকাপের পর এসে সরাসরি জাতীয় লিগের ম্যাচ খেলেছি ছুটি নিলাম কখন?’
ওদিকে এই ম্যাচ জয়ের পিছনে বড় অবদান আছে স্পিনার নাসুম আহমেদেরও। মাত্র ১০ রান দিয়ে চার উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়টা নিশ্চিত করেছেন তিনিই। নাসুমের বোলিং নিয়েও বেশ প্রশংসা করছিলেন লিটন। জানান নাসুম শুরুতে উইকেট এনে দিতে না পারলে খেলাটা অন্যরকমও হতে পারতো।
নাসুমের বোলিং নিয়ে লিটন বলেন, ‘আমরা যে রানটা করেছি আমরা সবাই টিম মিটিংয়ে বলেছিলাম মিরপুরের জন্য এই রান খুব বেশি না আবার খুব খারাপ না । আমি আগেও বলেছি ১৮০ হলে ব্যাটসম্যানরা ফ্লোতে খেলে। টেস্টে হলে ব্যাটসম্যানরা চিন্তা করে মারব কি মারব না। উইকেট দেব না। নাসুম যে বল করেছে আসলে গেম চেঞ্জিং বল। ও যদি আর্লি ব্রেক থ্রো না দিত তাহলে হয়ত ভিন্নরকম বল গেম হতো। আমি মনে করি উইকেট বেটার ছিল। সে জায়গা থেকে নাসুম যে বল করেছে সেটা অসাধারণ।’
এছাড়া নাসুমের বোলিংও নাকি লিটনের বেশ আলাদা মনে হয়। নেটে এই স্পিনারকে খেলার অভিজ্ঞতা জানাচ্ছিলেন লিটন। তিনি বলেন, ‘ও বেসিক বাঁহাতি স্পিনারের মতো আমার মনে হয় না কখনই। কারণ আমি ওকে নেটে খেলি। ও সব সময় কিছু একটা ভিন্ন রকম চেষ্টা করে। টি-টোয়েন্টিতে এই জিনিসটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বোলার যদি একই ছন্দে বল করে ব্যাটসম্যানদের পিক করা খুব সহজ হয়ে যায়।’