তাঁর ব্যাটিংয়ের চেয়ে রহস্যময় ব্যাপার বোধকরি বাংলাদেশ ক্রিকেটে আর নেই। নিজের দিনে লিটন দাস কি করতে পারেন – সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শিল্পের তুলি কিংবা নান্দনিক ঝড় – সব উপমাই যেন এসব দিন লিটনের ব্যাটিংয়ের সামনে ঠুনকো মনে হয়।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এবার তেমনই একটা ইনিংসের দেখা মিলল। এখানে একটা ধন্যবাদ চট্টগ্রামের মাঠকর্মীরা পেতেই পারেন। আগের দিনেই বলে রেখেছিলেন তাঁরা – উইকেট হবে ব্যাটিং সহায়ক।
আর ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ব্যাটিংটা লিটনের সুবাদে যেন আরও সহজ হয়ে গেল। ৩১ বলে ৬০ রান করেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক।
৭.৫ ওভারের উদ্বোধন জুটি থেকে কুমিল্লা পায় ৮৬ রান। সেখানে ব্রিটিশ অলরাউন্ডার উইল জ্যাকসের অবদান মাত্র ১৬ বলে ২২ রান। ওভার প্রতি যে ১১ করে রান এই সময় তুলেছে কুমিল্লা – তাঁর প্রায় পুরোটাই লিটন দাসের কল্যানে পাওয়া।
টুর্নামেন্টের শুরুটা একদমই মন মত হয়নি লিটনের। নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন। প্রথম ক’টা ম্যাচে রানই পাচ্ছিলেন না। ইমরুল কায়েসকে সরিয়ে তাঁকে অধিনায়ক করা হয়। নাফিসা কামালের করা ভরসার প্রতিদান দিতে পারছিলেন না একদমই।
তবে, আস্তে আস্তে সেই রানক্ষরাটা কাটিয়ে উঠলেন। তবে, সেই রানটাও ঠিক লিটন সুলভ হচ্ছিল না। রান আসল, ওপেনার সুলফ বড় কিছু ইনিংসও খেললেন – কিন্তু মোনালিসাময় সেই নান্দনিকতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
সেই অচলায়তনটা ভাঙল চট্টগ্রামে গিয়ে। সাগরিকার উইকেট এমনিতেই ব্যাটিং বান্ধব। লিটনের শৈল্পিক তুলির আচড়ে সেই চট্টগ্রামে ঝরলো রানের ঝর্ণাধারা। এমন লিটনকেই নিশ্চয়ই বারবার দেখতে চাইবে বাংলাদেশ।
একদিন আগেই তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক বনে গেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। অথচ, বিশ্বকাপের কিছুদিন আগেও এই মঞ্চটা তৈরি ছিল লিটন কুমার দাসের জন্য। ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়, আফগানদের বিপক্ষে রেকর্ড ব্যবধানে জয় – সবই ছিল লিটনের পক্ষে।
কিন্ত, বিশ্বকাপের আগে রানের সংকট আর মিডিয়া সামলানোর অদক্ষতা সামনে চলে আসে। ফলাফল, শান্তকে সহ-অধিনায়ক করেই বিশ্বকাপ খেলে বাংলাদেশ দল। এরপর অধিনায়ক হিসেবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে স্মরণীয় সাফল্যের পর আর শান্তকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
লম্বা মেয়াদে বাংলাদেশের অধিনায়ক হওয়ার সুযোগ হারিয়েছেন লিটন। সেই আক্ষেপটা এবার নিয়মিত রান হয়ে ঝরে পড়ুক ব্যাটে, আপাতত সেটাই প্রত্যাশা।