২০২১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি সেঞ্চুরি করেছিলেন। সারাদিন ব্যাটিং করে দুইশোর মত বল খেলে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন। দিনের প্রায় শেষ তখন। তবুও প্রতিটা রানের জন্য ছুটছিলেন দ্বিমুথ করুনারত্নে। এমন একটা দিন কাটানোর পর শেষ দিকে এসে যেকোন ব্যাটসম্যান নিজের উইকেটটা বাঁচিয়ে খেলতে চাইবেন যেন পরেরদিন আবার শুরু করতে পারেন। তবে করুনারত্নে দেখিয়েছিলেন তাঁর ব্যাটে রানের কী প্রচণ্ড ক্ষুধা।
করুনারত্নের ব্যাটে রানের এই ক্ষুধা কখনোই কমেনি। সেটা প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ হোক কিংবা ভারত। আজ যেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে তিনি লড়াই করেছেন তা অবিশ্বাস্য। শ্রীলঙ্কার আর একজন ব্যাটসম্যানও তাঁকে সঙ্গটা দিতে পারেনি। তবুও একপ্রান্ত থেকে লড়ে গিয়েছেন চেন্নাস্বামীর মরা পিচে। একেবারে খড়কুটো ধরে হলেও দলকে তীরে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।
পারেননি দলের বন্দরে নিয়ে যেতে। পরাজিত যোদ্ধাদের নাকি কেউ মনে রাখেনা। তবে দ্বিমুথ করুনারত্নকে আপনার মনে রাখতে হবে। কেননা গত কয়েকবছরে টেস্ট ক্রিকেটে তিনি বিশ্বের সেরা ওপেনারদের একজন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আর করুনারত্নের ব্যাটে এই ধারটা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
হয়তো বলা যেতে পারে করুনারত্নেকে বিশ্বসেরাদের একজন বলা বাড়াবাড়ি। টেস্ট ক্রিকেটে এত নামী দামী সব ওপেনার থাকতে তাঁকে কেন আলোচনায় আনতে হবে। তবে লংকান এই ওপেনার নিজেকে আলোচনায় আনতে বাধ্য করছেন। কেননা তিনি কোন পরিস্থিতিতে খেলছেন, কোথায় খেলছেন সেটাও জানা জরুরি।
গত বছর শ্রীলঙ্কার হয়ে মোট ৭ টি টেস্ট খেলেছেন। হয়তো বিশ্বাস করতে কঠিন হবে তবুও সত্য যে করুনারত্নে প্রায় ৭০ গড়ে ব্যাটিং করেছেন গতবছর। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৯০২ রান। এবছরও দ্বিমুথ বোধহয় সেখান থেকেই শুরু করলেন।
আর করুণারত্নে নিজের অধিকাংশ ম্যাচ কোথায় খেলেছেন সেটাও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এই ওপেনার তাঁর ক্যারিয়ারে মোট ৭৬ টা টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। যেখানে তাঁর ব্যাটিং গড় ৪০ ছুঁই ছুঁই। আর এরমধ্যে ৪৭ টাই তিনি খেলেছেন উপমহাদেশের ক্রিকেটে। মানে শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, ভারতের মত কন্ডিশনে। যেখানে প্রায় অধিকাংশ ইনিংসেই দলীয় রান ৩০০ ছোয় না। আর এখানেও তিনি ব্যাটিং করেছেন ৪৬ গড়ে।
এই উইকেটে ব্যাটিং করেই দ্বিমুথ বিশ্বসেরাদের সাথে লড়ছেন। যেমন আজকের ম্যাচটার কথাই ধরা যাক। চেন্নাস্বামীর উইকেট, দর্শক, মহল সবকিছুই ছিল ভারতের পক্ষে। শ্রীলঙ্কা এক ইনিংসে করেছে ১০৯ রান আরেকটাতে ২০৮। তবুও এরমাঝেই নিজের একটি সেঞ্চুরি বাড়িয়ে নিয়েছেন দ্বিমুথ। টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে খেললেন ১৭৪ বলে ১০৭ রানের ইনিংস।
অথচ এই টেস্টে দুই দলের আর কোন ব্যাটসম্যানই সেঞ্চুরির দেখা পাননি। গতকাল ঋষাভ পান্ত, শ্রায়স আইয়ারদের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ক্রিকেট দুনিয়ার প্রশংসা কুড়িয়েছে। এই পিচে হাফ সেঞ্চুরি করাই নাকি কঠিন কাজ। আর সেই পিচেই চতুর্থে ইনিংসে একেবারে পিওর টেস্ট ক্রিকেটটা খেলে দেখালেন করুনারত্নে।
দ্বিমুথ করুনারত্নের কাছে আসলে পিচ, কন্ডিশন কোনকিছুই ঘটনা না। তাঁর ব্যাটে রানের প্রচণ্ড ক্ষুধা। আর সেই ক্ষুধা তিনি যেকোন জায়গায়, যেকোন প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই মেটাবেন এবং সেটা টেস্ট ক্রিকেটের মেজাজেই। টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিমুথ করুনারত্নে যেন সেরা হয়েই ছাড়বেন।