সুযোগ এসেছে, সুবাস ছড়িয়ে দাও

কথায় আছে, সুযোগ নাকি সবার দরজাতেই টোকা দেয়। শুধু দরজা খুলে তাকে সাদরে আমন্ত্রণ জানাতে হয়। কথার সাথে বাস্তবের মিল আছে বৈকি। কমবেশি সবার দরজায় কড়া নেড়ে যায় কতশত ‘সুযোগ’। কিন্তু সবাই পারে না তাকে নিজের মত করে আমন্ত্রণ জানাতে,সবাই পারে না সুযোগের সর্ব্বোচ্চ ব্যবহার করতে। কিভাবেই বা পারবে, সবাই তো আর উসমান খাজা নয়।

কথায় আছে, সুযোগ নাকি সবার দরজাতেই টোকা দেয়। শুধু দরজা খুলে তাকে সাদরে আমন্ত্রণ জানাতে হয়। কথার সাথে বাস্তবের মিল আছে বৈকি। কমবেশি সবার দরজায় কড়া নেড়ে যায় কতশত ‘সুযোগ’। কিন্তু সবাই পারে না তাকে নিজের মত করে আমন্ত্রণ জানাতে,সবাই পারে না সুযোগের সর্ব্বোচ্চ ব্যবহার করতে। কিভাবেই বা পারবে, সবাই তো আর উসমান খাজা নয়।

১৯৮৬ সালের পাকিস্তানের ইসলামাবাদে জন্ম উসমান খাজা’র তবে মাত্র ১০ বছর বয়সে পরিবারের সাথে পাড়ি জমান অস্ট্রেলিয়ায়। তখন থেকেই বাসার পাশের মাঠে নিয়মিত ক্রিকেট খেলা শুরু করেন খাজা। আর এরপর ক্রিকেটের প্রতি এক গভীর প্রেম ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয় তাঁর।

তবে দুর্ভাগ্যবশত ইংরেজি না জানার কারণে স্থানীয় শিশুদের সঙ্গে মেশাটা কঠিন হয়ে পরে তাঁর জন্য। তাছাড়া পাকিস্তানে বেড়ে উঠার কারনে অস্ট্রেলিয়ার সংস্কৃতির সাথে তাল মেলানোও খুব একটা সহজ ছিল না। সবমিলিয়ে শুরুতেই একটি বিরূপ পরিবেশে নিজেকে আবিষ্কার করেছলো খাজা।

বড় হওয়ার সাথে সাথে ক্রিকেটে খাজার প্রতিভা উন্মোচন হতে থাকে। তবু ভীনদেশী আর ভিন্নধর্মের খাজাকে সহজভাবে বরন করে নেয়নি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। দমে যাননি তিনি, চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। অসাধারন ব্যাটিং পারফরম্যান্স দ্বারা সকল প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে নিজেকে প্রমান করেছেন।

২০০৬ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে অজিদের হয়ে ডাক পান তিনি। সেই বিশ্বকাপে অজিদের ওপেনিংয়ে দায়িত্বে ছিলেন উসমান খাজা। সেখান থেকেই অজি ক্রিকেটে তার পথচলা শুরু হয়। এর ঠিক ৪ বছর পর অর্থাৎ ২০১১ সালে অ্যাশেজের জন্য দলে ডাকা হয় খাজাকে এবং ওই সিরিজেই তার অভিষেক ঘটে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলে।

উসমান খাজার টেস্ট ক্যারিয়ারকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যার প্রথমভাগ অভিষেকের পর থেকে ২০১৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এসময় সর্বমোট ৯টি টেস্ট খেলেন খাজা তবে ব্যাটিং গড় ছিল না অজি ব্যাটসম্যান-সুলভ। করতে পারেননি একটি শতকও। আর অর্ধশতক করতে লেগেছিল ছয় ম্যাচ। এমন পারফরম্যান্স দিয়ে তো অস্ট্রেলিয়া দলে টিকে থাকা যায় না। তাই দল থেকে বাদ পড়তে হয়েছিলো উসমান খাজাকে।

এরপর আবারও একবার ফিরেছিলেন ২০১৫-তে। এবার আর কোন ভুল করেননি খাজা। প্রত্যাবর্তনের ম্যাচেই ব্রিসবেনে খেলেছিলেন ১৭৪ রানের এক অতিমানবীয় ইনিংস। একটানা ২০১৯ পর্যন্ত ছিলেন অজি দলে। এসময়ে ৬০ ইনিংসে ৪৫ এর কাছাকাছি গড়ে আড়াই হাজারের বেশি রান সংগ্রহ করেন খাজা।

টানা চারটি সহ মোট আটটি শতক এবং বারোটি অর্ধশতক করেছিলেন। ২০১৫ থেকে ২০১৯ এ সময়ে অস্ট্রেলিয়া টেস্ট দলের সর্ব্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় সবার উপরে স্টিভ স্মিথ আর তার পরের নামটাই উসমান খাজা’র। কিন্তু ২০১৯ অ্যাশেজের বাজে ফর্ম আবারো দল থেকে ছিটকে দিয়েছিলো খাজাকে।

আরো একটা অ্যাশেজ,খাজার জন্য আবারো তৈরি হলো মঞ্চ। তবে এবার ভিলেন নন,তিনি নায়ক। বছরটা ২০২২। কোভিড আক্রান্ত ট্রাভিস হেডের পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পান খাজা৷ রাজসিক প্রত্যাবর্তন করে সিডনিতে করেন ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি।

৩৫ বছর বয়সে এসেও খাজা যে ফুরিয়ে যাননি তাই প্রমাণ করেন ইংলিশদের বিপক্ষে। এরপরই খাজার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে অপূর্ণ ইচ্ছে পূর্নতা পায়। অস্ট্রেলিয়া দলের সঙ্গী হয়ে; পর্যটক নন বরং একজন ক্রিকেটার হিসেবে তিনি ফিরেন জন্মস্থানে।

পাকিস্তানীরাও ভালবসা দিয়ে বরন করে নেয় ঘরের ছেলেকে। কিন্তু খেলার মাঠে জন্মভূমিকে ছাড় দেননি খাজা। দুর্দান্ত ব্যাটিং পারফরম্যান্স দিয়ে স্মরনীয় এই সফরকে করেন আরো স্মরণীয়। রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে করেন ৯৭। মাত্র তিন রানের জন্য সেদিন সেঞ্চুরি মিস করলেও করাচিতে দ্বিতীয় টেস্টে আর সেই ভুল করেননি। ৩৬৯ বলে খেলেন ১৬০ রানের এক দানবীয় ইনিংস। ২০২২ সালে তার ব্যাটিং গড়টা চোখ কপালে তুলে দেয়ার মতই; ১০০ এর বেশি।

মানবজীবনের মত খেলোয়াড়ী জীবনেও থাকে উত্থান-পতন। ফর্মের লুকোচুরি খেলায় কখনো কখনো বাদ পড়তে হয় দল থেকে। কিন্তু একবার বাদ পড়া মানেই সব শেষ নয়। বাদ পড়ার পরেও ফিরে আসা যায়; অপেক্ষায় থাকতে হয় পরবর্তী সুযোগের।

বাদ পড়ার পর কিভাবে ফিরতে হয়, সুযোগ পেয়ে কিভাবে কাজে লাগাতে হয় তার সবচেয়ে আদর্শ দৃষ্টান্ত নিশ্চয়ই উসমান খাজা। বিধাতা যখনই সুযোগকে খাজা’র দরজায় পাঠিয়েছেন তখনই তাকে দু’হাতে লুফে নিয়েছেন এই পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত অজি ওপেনার। সুযোগের সদ্ব্যবহার করাকে এক কথায় হয়তো “উসমান খাজা” বলাই যায়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...