কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়?

জাতীয় দলের ডাক পাওয়ার প্রহর গুণছিলেন গত দুই-তিন বছর ধরেই। কিন্তু বরাবরই যেন ব্রাত্য থেকেছেন সরফরাজ খান। বারবার উপেক্ষিত হওয়ায় মুম্বাইয়ের এ ব্যাটার ক্ষোভও ঝেড়েছিলেন প্রকাশ্যে। তবে অবশেষে জাতীয় দলের দ্বার উন্মোচিত হলো সরফরাজের জন্য। ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের দলে ডাক পেয়েছেন তিনি।

বিরাট কোহলি আগেই জানিয়েছিলেন, সিরিজের প্রথম দুটি টেস্ট তিনি খেলবেন না। তাঁর জায়গায় নাম্বার চারে তাই সুযোগ হয়েছিল লোকেশ রাহুলের। সুযোগ পেয়েই অবশ্য কাজে লাগিয়েছেন এ ব্যাটার। প্রথম ইনিংসে ৮৬ রান করে দলকে বড় রানের ভিত্তি তিনিই গড়ে দিয়েছিলেন। তবে হায়দ্রাবাদের সে টেস্টে চোট পেয়ে দ্বিতীয় টেস্ট থেকে ছিটকে গিয়েছেন এ ব্যাটার। ইনজুরির মিছিলে তাঁর সঙ্গী হয়েছেন আবার অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজাও।

তাই অগত্যাই সরফরাজ খানকেই বেছে নিতে হয়েছে নির্বাচক প্যানেলকে। অবশ্য গত দুই তিনি বছর ধরেই তো জাতীয় দলের জায়গা পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন এ ব্যাটারই। যেভাবে মৌসুমের পর মৌসুম ব্যাট করেছেন, তাতে লাল বলের ক্রিকেটে তাঁকে ভারতের জার্সি গায়ে দেখতে না পারাটা বিস্ময়করই ছিল বটে। তবে কোনো এক অজানা কারণে প্রায় সিরিজেই উপেক্ষিত ছিলেন এ ব্যাটার।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, দ্বিতীয় টেস্টের দলে ঢুকে পড়া সরফরাজের অভিষেক কি এ ম্যাচ দিয়েই হবে? সেই সম্ভাব্যতা কী বলছে? মিডল অর্ডার এই ব্যাটারের সঙ্গে দ্বিতীয় টেস্টের দলে ডাক পেয়েছেন অলরাউন্ডার সৌরভ কুমার ও ওয়াশিংটন সুন্দর। আর আগে থেকেই দলে আছেন রজত পাতিদার। মূলত তাঁর লড়াইটা হবে রজত পাতিদারের সাথে।

এ দিক দিয়ে পাতিদার আগে থেকেই দলে থাকলেও পরের ম্যাচে সরফরাজকে দেখার সম্ভাবনাই বেশি। কেননা, প্রথম টেস্টে ইংলিশ স্পিনাররা বেশ ভুগিয়েছে রোহিত শর্মার দলকে। আর সরফরাজ স্পিনারদের বিপক্ষেই বেশি সাবলীল। সম্প্রতি ইংল্যান্ড লায়ন্সের বিপক্ষে ভারত ‘এ’ দলের হয়ে ১৬০ বলে ১৬১ রানের ইনিংস খেলেন ডানহাতি এই ব্যাটার। তাই আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া টেস্টে ভারতের একাদশে সরফরাজের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনাই জোরালো।

অবশ্য জাতীয় দলের হয়ে খেলার রাস্তাটা সরফরাজ গত দুই তিনি বছর ধরেই তৈরি করে আসছেন। ২০২০ সালের পর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সরফরাজ ২০০০-এর বেশি রান করেছেন, গড় ৮২.৪৬। এ সময়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এমন গড়ে এত রান বিশ্বের আর কোনো ক্রিকেটার করতে পারেননি। এ ছাড়া টানা ২ মৌসুমে রঞ্জি ট্রফিতে ৯০০ এর বেশি রান করেছেন। সব মিলিয়ে লাল বলের ক্রিকেটে ভারতের ভবিষ্যৎ হওয়ার পথে রয়েছেন সরফরাজ।

২০০৯ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে ভারতের হ্যারিস শিল্ড আন্তস্কুল টুর্নামেন্টে ৪৩৯ রানের ইনিংস খেলে লাইম লাইটে এসেছিলেন তিনি। সে দিনের সেই শিশুটিই এখন ভারতের জার্সি গায়ে টেস্ট খেলার দ্বারপ্রান্তে। এমন একট দিনের অপেক্ষাতেই তো ছিলেন সরফরাজ খান। কিছুটা দেরিতে হলেও সেই স্বপ্ন অবশেষে পূরণ হতে যাচ্ছে। এটাই বা কম কীসে!

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link