কারও জন্য তিনি স্রেফ ঘৃণার পাত্র, কারও জন্য তিনি ঈশ্বরতুল্য। কারও জন্য নিন্দিত, কারও কাছে নন্দিত। তিনি দেশের জন্য লাল কার্ড খেতে রাজি থাকেন। আবার কামড় দিয়ে বিশ্বের জন্য বিস্ময়কর এক বিরক্তির কারণ বনে যান।
সব মিলিয়ে তিনি জটিল এক চরিত্র, আজব একটা অধ্যায় – যার পুরোটাই রহস্যে ঘেরা। লুইস সুয়ারেজ আসলে কেমন – সেটা নিয়ে গোটা ফুটবল বিশ্বই দ্বিধান্বিত। তবে, তিনি সত্যিকারের ফাইটার। সত্যিকারের ম্যাচ উইনার।
লিভারপুল, উরুগুয়ে কিংবা বার্সেলোনা – যখন যেখানে খেলেছেন নিজেকে উজার করে দিয়েছেন। তিনি পাগলাটে হতে পারেন কিন্তু, ডি-বক্সে তিনি সত্যিকারের এক প্রতিভা। বার্সেলোনার এমএসএন ট্রায়োর একজন তিনি।
নিজের প্রজন্মের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ট হিসেবেই বিবেচিত হয়েছেন তিনি। জাতীয় দলের জার্সিতে ১৪২ ম্যাচে সর্বোচ্চ ৬৯ গোল করে তিনি অবসরে যাচ্ছেন। তিনি প্রোলিফিক একজন গোল স্কোরার ছিলেন সব পর্যায়ের ফুটবলেই।
২০০৭ সালে উরুগুয়ের জাতীয় দলে তার অভিষেক হয়েছিল। ২০১৪ বিশ্বকাপে ইতালির জর্জিও চিয়েলিনিকে কামড় দিয়ে চার ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সুয়ারেজ। তার ক্যারিয়ারের এই কালো অধ্যায় মোছা সম্ভব নয়। সুয়ারেজ কেন কামরান? – এই প্রশ্নেরও কোনো উত্তর মিলবে না।
২০১১ কোপা আমেরিকা জয়ী উরুগুয়ে দলের সদস্য ছিলেন ইন্টার মিয়ামির এই ফরোয়ার্ড। এই টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হয়েছিলেন। নয়টি বড় টুর্নামেন্টে তিনি দক্ষিণ আমেরিকার প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
পুরো ক্যারিয়ারে সাফল্য যেমন এসেছে, নানা সময়ে সমালোচনাও তার পিছু ছাড়েনি। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে কামড়ের ঘটনায় টুর্নামেন্ট থেকে নিষিদ্ধ হবার আগে ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাকে ঘানার বিরুদ্ধে গোল-লাইনের উপর থেকে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে ইচ্ছা করে হ্যান্ডবল করে তিনি সমালোচিত হয়েছিলেন।
সুয়ারেজ লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লেও ঐ ঘটনায় প্রাপ্ত পেনাল্টি থেকে ঘানা সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। পরবর্তীতে পেনাল্টি শুট আউটে ঘানাকে বিদায় করে উরুগুয়ে সেমিফাইনালে খেলেছিল।
ক্লাব ফুটবলেও বিতর্ক তার নিত্য সঙ্গী ছিল। ২০১১ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ফরাসি স্ট্রাইকার প্যাট্রিস ইভরার বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণের কারনে ইংলিশ কর্তৃপক্ষ তাকে আট ম্যাচ নিষিদ্ধ করেছিল।
২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের বাঁধা পেরোনোর ক্ষেত্রে উরুগুয়ের অন্যতম শক্তি ছিলেন এই সুয়ারেজ। সর্বশেষ ২০২৪-এর কোপা আমেরিকাও খেলেছেন, গোলও করেছেন।
কানাডার বিপক্ষে তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ম্যাচে সুয়ারেজ ক্যারিয়ারের ৬৯ তম গোলটি করেছিলেন। কে জানতো, সেটাই পাগলাটে এই প্রতিভার শেষ আন্তর্জাতিক গোল হয়ে থাকবে!