দুই ভাইয়ের বয়সের ব্যবধান ছিল বছর দেড়েকের। আর পাঁচটা দাদা – ভাইয়ের গল্পের মত ছোট ভাই ‘ধিশাল’-এর দস্যিপনার চোটে মা – বাবা সারাদিন নাকাল হতেন। বড় ভাই ছিল ধীর, স্থির। স্বভাবে বিপরীত মেরুর বাসিন্দা হলেও দুই ভাইয়ের ধ্যান জ্ঞান জুড়ে ছিল – ক্রিকেট। বড় ভাইটির নাম মাহেলা জয়াবর্ধনে – তাঁর পরিচয় নিশ্চয়ই আর নতুন করে বলার কিছু নেই।
আরো পড়ুন
- মায়াবী মাহেলা বৃত্তান্ত
- শিল্পীর ক্যানভাসে রানের ঝর্ণাধারা
- মাহেলা মোমেন্ট
- গ্রেটনেসের শিরোপায় সিক্ত দুই বন্ধু
- সেটা অবশ্যই তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস
দুই ভাই একই স্কুলে পড়তো। স্কুলের অনূর্ধ্ব-১৫ দলে বড় ভাইয়ের নেতৃত্বে খেলতো বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান ছোট ভাই।
একদিন স্কুলে বছর পনেরোর ধিশাল মাথা ঘুরে পড়ে গেল। প্রাথমিক চিকিৎসার পর ব্রেন টিউমার ধরা পড়লো। সরকারি প্রযুক্তিবিদ বাবা সম্পত্তি বিক্রিবাটা করে, এদিক ওদিক থেকে ধার দেনা করে ছোট ছেলেকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে ছুটলেন বিলেতে।
বিলেত থেকে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হয়ে দেশে ফেরার পর মারণ রোগ আবার কিশোর ধিশালের শরীরে থাবা বসালো। পরবর্তী চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে ১৯৯৫ সালের আট মার্চ মাত্র ১৬ বছর বয়সে ধিশাল বাবা – মাকে ছেড়ে, প্রিয় ক্রিকেট ব্যাটটাকে ফেলে রেখে, সর্বোপরি প্রিয়তম দাদাকে ছেড়ে জীবনের ইনিংসের শুরুতেই চিরতরে আউট হয়ে গেল।
১৮ মার্চ সদ্য প্রয়াত ধিশালের বড় ভাইয়ের নেতৃত্বে স্কুল টিমের আন্তঃ স্কুল টুর্নামেন্টে খেলতে নামার কথা, এদিকে সে প্র্যাকটিসে অনুপস্থিত। এমতাবস্থায় স্কুলের প্রিন্সিপাল বাড়িতে ছুটে এসে আবার মাঠে ফিরতে পরামর্শ দিলেন। কিন্তু, ছোট ভাইয়ের শোকে বিহ্বল বড় ভাই সেই প্রস্তাব সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করল।
অবশেষে ‘ওয়েলাওয়াত্তা মন্দির’-এর পুরোহিত প্রতিদিন মন্দিরের এক কোনায় মনমরা হয়ে বসে থাকা ছেলেটার অশান্ত মনটাকে উপশম করলেন – ‘Your brother loved you to play cricket. I don’t think he would be happy if you stopped because of his death, so why don’t you play in his honour?’
পুরোহিতের কথা শুনে খেলতে রাজি হয়ে ছেলেটি বাড়ি ফিরে ম্যাচের আগের দিন রাতে বিছানার পাশে প্রানপ্রিয় ভাই ধিশালের ছবি নিয়ে শুতে গেল। তারপর থেকে যে স্তরেই হোক যতদিন বড় ভাইটি ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে নেমেছে ততদিন ম্যাচের আগের রাতে ভাইয়ের ছবিকে ঘরের টেবিলে রেখে আর ভাইয়ের স্মৃতিকে বুকে নিয়ে প্রতিবার তার ক্রিকেট পাগল ভাইয়ের হয়ে ব্যাট করতে নেমেছে।
জয়াবর্ধনে বলেছিলেন, ‘আমি জানি ধিশাল ক্রিকেট ভালবাসতো। আমি জানি ও খেলতে চাইতো শ্রীলঙ্কার হয়ে। এটা আসলে আমরা দু’জনেই এক সাথে চাইতাম। এখন আমি ক্রিকেটে যাই করি না কেন – সবই ওর জন্য। সত্যি কথা বলতে, আমি যখন ফেলি, বাইশ গজে অনুভাব করে ধিশালকে, মনে হয় ও আমার সাথেই আছে।’
হয়তো সেই কারণেই যখনই ধিশালের দাদা ব্যাট হাতে নামতো মনে হত স্বয়ং ঈশ্বর ওর উপর ভর করেছেন।