কব্জির মোচড়ে একটা ফ্লিক। ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগ দিয়ে তা সীমানার বাইরে। এই শটটা যেন বাংলাদেশী দর্শকদের এক আবেগের জায়গা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাট থেকেই ৫২ হাজার বর্গমাইলে ছড়িয়েছে তা। ২০১৭ সালে নিদাহাস ট্রফিতে সেই আবেগের জন্ম।
সেই একই শটের পুনরাবৃত্তি করলেন তিনি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চে। সিলেট স্ট্রাইকার্সের রিচার্ড এনগারাভার বলটার শেষের পরিণতিও হয়েছে সীমানার বাইরে। স্মৃতি রোমন্থের সাথে সাথে নতুন করে জোরাল করেছেন নিজের প্রত্যাবর্তনের দাবি।
আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ফিরবেন কিনা, সে নিয়ে ছিল দ্বিধা। তবে সংশয়ের কালো মেঘ থেকে রানের বর্ষণ হচ্ছে। অঝোড় ধারায় যেন বৃষ্টি হয়েই ঝড়ছে রান। ১৬৫ এর বেশি স্ট্রাইকরেটে কার্য্যকর সব ইনিংসই উপহার দিচ্ছেন রিয়াদ। একটি অর্ধশতকের দেখাও পেয়ে গেছেন।
জাতীয় দলের মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দায়িত্ব থাকে ম্যাচ শেষ করে আসার। ইনিংসের শেষের দিকে দ্রুত কিছু রান যোগ করা। জয়ের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাট চালিয়ে ম্যাচ জেতাবেন দলকে। সে রোলের খেলছেন তিনি ফরচুন বরিশালের হয়ে। বেশ ভালই করছেন তিনি। অন্তত স্ট্রাইকরেট আর মোট রান সে কথাই বলে।
সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে তার খেলা ২৪ বলে ৫১ রানের ইনিংসটি জয়ের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়টা রয়েছে একেবারে তার অনুকূলে। ওয়ানডে বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে তাকে দলে নেওয়া নিয়েও হয়েছিল জলঘোলা। তবে তিনি ফিরেছেন। প্রতাপের সাথেই ফিরেছেন।
ডুবতে থাকা নৌকার উড়তে থাকা পাল হয়েই বিচরণ করেছেন তিনি বিশ্বকাপের মঞ্চে। একটি শতক ও একটি অর্ধশতকের কল্যাণে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি। স্রোতের বিপরীতে হেঁটে ৩২৮ রান করেছিলেন তিনি।
আরও একটি বিশ্বকাপ দোরগোড়ায় অপেক্ষমান। এমন একটি বিশ্বকাপের আগে আবারও আলোচনায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এবারের আলোচনা অবশ্য যৌক্তিক। রিয়াদ শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এরপরই তিনি এক প্রকার নির্বাসিত। স্ট্রাইকরেটের অভিযোগ গায়ে চাপিয়ে তার বদলে বাজিয়ে দেখা হয়েছে বহু তরুণ খেলোয়াড়কে।
তবে একরাশ আক্ষেপই উপহার দিয়েছেন সকলে। ঠিক সে কারণেই আরও একবার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ফেরার রাস্তাটা পরিষ্কার হয়ে গেল। তাছাড়া বিসিবির প্রধান নির্বাহী জালাল ইউনুসও যে শুনিয়েছেন আশার বাণী। তিনি বলেন, ‘সুযোগ পাবে কি পাবে না এই প্রশ্নটা উঠছে না। সে ভাল করছে, সে ভাল পারফরম করছে। এখন সে পারফরমার। অটোমেটিকালি সে দলে চলে আসবে।’
সেটাই বরং হওয়া উচিত। স্রেফ বয়সের দোহাই দিয়ে একজন পারফরমারকে দলের বাইরে রাখাটা অযৌক্তিক। তাছাড়া যেই স্ট্রাইকরেট নিয়ে ছিল সমস্যা, সেই স্ট্রাইকরেটে যে এসেছে আমুল পরিবর্তন। অভিজ্ঞতা আর খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসার পুরষ্কারটা তো প্রাপ্য তার। শেষ বেলায় আরও একটি স্বর্ণালী পালক জুড়ে নেওয়ার সুযোগটা মাহমুদউল্লাহ আদায় করেই নিচ্ছেন।