বালোতেল্লি-মানচিনি, ভিন্ন এক গুরু-শিষ্য

সেদিনও হয়ত বালোতেল্লি মাথার উপর ছায়া হয়েই হাজির হবেন রবার্তো মানচিনি। 

মারিও বালোতেল্লি কখনোই ভাল ছেলে হতে পারেননি। ক্যারিয়ার জুড়ে নেতিবাচক হেডলাইনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সতীর্থদের সাথেও ছিল সম্পর্কে টানাপোড়েন। তবে একজন তাকে ভালবেসে গেছেন অকৃত্রিমভাবে। তিনি ইতালিয়ান কোচ রবার্তো মানচিনি।

রবার্তো মানচিনির হাত ধরেই উত্থান ঘটে মারিও বালোতেল্লি। বেশ ভরসা করে তাকে বিশ্ব ফুটবলের মঞ্চে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মানচিনি। তবে সে ভরসার ঠিকঠাক প্রতিদান হয়ত কখনও দিতে পারেননি বালোতেল্লি। তার মধ্যে প্রতিভা দেখেছিল মানচিনির জহুরির চোখ। কিন্তু সেই প্রতিভার প্রতি সুবিচার কখনও করতে পারেননি বালোতেল্লি। হতাশ করেছেন তিনি তারই পিতৃতুল্য কোচকে।

এমনকি তাদের মধ্যে ঝামেলাও হয়েছে বেশ কয়েক বার। মানচিনি একদফা তো বালোতেল্লি কলারও ধরেছিলেন। অনুশীলনে সতীর্থকে বাজে ট্যাকেল করায় রীতিমত তেড়ে গিয়েছিলেন মানচিনি। এমনকি একদফা মানচিনি বলেছিলেন যে বালোতেল্লির সাথে কেউ যদি বেশি কথা বলে তবে তার মনোবিশেষজ্ঞ প্রয়োজন হবে। বালোতেল্লি ঠিক এতটাই অদ্ভুত এক চরিত্র ছিলেন।

১৭ বছরের এক কিশোর ফুটবলারকে মানচিনি নিজে স্যান সিরো-তে জায়গা দিয়েছিলেন। ইন্টার মিলান সিনিয়র দলের হয়ে খেলার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। শেফিল্ড ইউনাইটেডের বিপক্ষে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ দিয়ে শুরু হয় বালোতেল্লি ক্যারিয়ার। এরপর অবশ্য তাকে পেছন দিরে তাকাতে হয়নি। মানচিনির হাত ধরে ইউরোপীয় ফুটবলের রঙিন ভুবনে পদচারণা শুরু হয় মারিও বালোতেল্লির।

সিসিলিতে জন্ম নিয়েছলেন বালোতেল্লি। মা-বাবা ছিলেন ঘানার। তবে বড় হয়েছিলেন তিনি এক আশ্রয় কেন্দ্রে। সে ছেলে তার ফুটবলীয় প্রতিভায় নজর কেড়েছিলেন মানচিনির। তাইতো শৈশব থেকে ধুঁকতে থাকা বালোতেল্লির জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মানচিনি।

যদিও মানচিনিকে বড্ড পীড়া সইতে হয়েছে। বালোতেল্লি যে কখনোই আর বাকি ফুটবলারদের মত ছিলেন না। উদ্ভট সব আচরণ তিনি করেছেন তার ক্যারিয়ার জুড়ে। প্রতিপক্ষের সাথে হাতাহাতি থেকে শুরু করে মারামারি। ফুটবল মাঠের বাইরে নানা অপ্রীতিকর ঘটনার সাথে বহুবার জড়িয়ে গিয়েছিলেন বালোতেল্লি। তবুও ভালবাসা দিয়ে, বাবার মত আগলে রাখার চেষ্টা করে গেছেন মানচিনি।

ইন্টার মিলার থেকে ম্যানচেস্টার সিটিতে চলে যান মানচিনি। সেখানেও তিনি নিয়ে যান বালোতেল্লিকে। ম্যানচেস্টার তখন সবে মাত্র ইউরোপীয় ফুটবলের মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছিল। সে সময়ে মানচিনির উপর আস্থা রেখে বালোতেল্লিকে প্রিমিয়ার লিগে নিয়ে আসে সিটি। সেখানেও বেশ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে বালোতেল্লি ফেলেছিলেন মানচিনিকে।

তবে ফুটবল মাঠে বালোতেল্লি ছিলেন ভীষণ কার্যকর। তার করা ১৬ গোলের কল্যাণেই ম্যানচেস্টার জিতেছিল নিজেদের প্রথম প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা। সেই মানচিনির অধীনেই বালোতেল্লি দেখিয়েছিলেন ঝলক। মানচিনি অবশ্য বেশ দুশ্চিন্তায় ছিলেন বালোতেল্লিকে নিয়ে। একবার তিনি বলেছিলেন, ‘সে (বালোতেল্লি) যদি বিশ্বের একজন সেরা খেলোয়াড় না হয়, তবে সে দোষ তার (বালোতেল্লি)।’

উগ্র মেজাজের বালোতেল্লি অবশ্য নিজের হাতে ধরেই ক্যারিয়ারকে একটা চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। উশৃঙ্খল জীবনের জন্যই ক্যারিয়ারটাকে কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারেননি বালোতেল্লি। তবুও মানচিনি তার উপর থেকে সরিয়ে নেননি নিজের আস্থার হাত।

বরং চার বছর বাদে তাকে ডেকে আনেন ইতালিয়ান জাতীয় দলে। ২০১৮ সালে বালোতেল্লিকে জাতীয় দলে ডাকেন মানচিনি। সেবার মানচিনির অধীনে সৌদি আরবের বিপক্ষে ২-১ গোলে জয়লাভ করা ম্যাচেও গোল করেছিলেন বালোতেল্লি। তারপর ২০২২ সালেও তিন দিনের ক্যাম্পে ডাক পেয়েছিলেন ইতালিয়ান এই স্ট্রাইকার। তবে আর কখনও তিনি জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপাতে পারেননি।

যদিও এখন মানচিনি ও বালোতেল্লি রয়েছে বহুদূরে। তবুও তারা আবারও কোন এক পতাকাতলে একত্রে হাজির হবেন না, সে সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বরং সেদিনও হয়ত বালোতেল্লি মাথার উপর ছায়া হয়েই হাজির হবেন রবার্তো মানচিনি।

Share via
Copy link