হলিউডি সূর্যাস্তের প্রশস্ত পথ

অনেকেই ভেবেছিলেন নতুন এক টুর্নামেন্টে নতুন দলের দায়িত্ব ওয়ার্নের হাতে তুলে দেওয়াটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে কিনা। কিন্তু বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্ব আর বল হাতে ম্যাজিকাল স্পিনে প্রথম আসরে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখান ওয়ার্ন। ২০০৮ সালে রাজস্থানের হয়ে আইপিএলে খেলেছিলেন সাবেক ভারতীয় তারকা ইউসুফ পাঠান। ওয়ার্ন সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, ‘তাঁর মতো অন্য কেউই নেই। তাঁর অধীনে যারাই খেলেছে সবাই বুঝতে পেরেছে তাঁর চিন্তাভাবনা এবং কৌশল প্রশংসনীয়।’

সাল ২০০৮। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) উদ্বোধনী আসর। আইপিএল নিয়ে তখনো মানুষের মনে নানান প্রশ্ন। এর কার্যকারিতা, গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও ছিল সংশয়। বেশ কিছু তারকা ক্রিকেটারদের ভিড়ে তখন রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে খেলেন শেন ওয়ার্ন। ভারতীয়দের টপকে অধিনায়কের দায়িত্বটাও পান তিনি। ওয়ার্নের হাত ধরে দল সফল হতে পারবে কিনা, ভারতের মাটিতে ওয়ার্নের পারফরম্যান্স সবকিছু নিয়েই বেশ আলোচনা চলছিল। কিন্তু টুর্নামেন্ট শেষে সব প্রশ্নের জবাব তিনি দিয়ে দেন এক শিরোপা জয়ে!

  • আইপিএলের শুরু ও ওয়ার্ন কথন

আইপিএলকে হাইলাইট করতে তখন ভিন্ন কোনো গল্প কিংবা রূপকথার গল্পের মতো কিছু দরকার ছিল। আসরের অন্যতম সেরা এবং বড় তারকা ছিলেন ওয়ার্ন। নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রথম আসরেই রাজস্থানের হয়ে জিতলেন শিরোপা। প্রথম আসরেই যেন আইপিএলের ভ্যালু অনেক উপরে। তখন প্রায় এক-দেড় বছর ক্রিকেট খেলেননি তিনি। এর আগে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটও খেলেননি। এমনকি ভারতের মাটিতেও সেভাবে সফল ছিলেন না তিনি। তবুও আইপিএলের প্রথম আসরেই অনবদ্য পারফরম্যান্সে শিরোপা জেতেন ওয়ার্ন।

অনেকেই ভেবেছিলেন নতুন এক টুর্নামেন্টে নতুন দলের দায়িত্ব ওয়ার্নের হাতে তুলে দেওয়াটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে কিনা। কিন্তু বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্ব আর বল হাতে ম্যাজিকাল স্পিনে প্রথম আসরে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখান ওয়ার্ন। ২০০৮ সালে রাজস্থানের হয়ে আইপিএলে খেলেছিলেন সাবেক ভারতীয় তারকা ইউসুফ পাঠান। ওয়ার্ন সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, ‘তাঁর মতো অন্য কেউই নেই। তাঁর অধীনে যারাই খেলেছে সবাই বুঝতে পেরেছে তাঁর চিন্তাভাবনা এবং কৌশল প্রশংসনীয়।’

  • ভার্সন ২.০: অধিনায়ক ওয়ার্ন

ওয়ার্নের ক্যাপ্টেন্সির বিশেষত্ব কি? যারা ওয়ার্নের অধীনে খেলেছে কিংবা অধিনায়কত্ব কাছ থেকে বুঝতে পেরেছে – ওয়ার্ন সব সময়ই ক্রিকেটকে দাবার মতো দেখতো। প্রতিপক্ষের চিন্তাভাবনার চেয়ে একধাপ এগিয়ে থাকতে চাইতো। সে বুঝতে পারতো কখন কিভাবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে হবে। অন্য অধিনায়করা টিম মিটিংয়ে কৌশল আলোচনা করলেও ওয়ার্ন মাঠেই নিজের কৌশল তৈরি করতেন!

  • কড়া শিক্ষক

ওয়ার্ন স্বভাবগতভাবে মজার হলেও তিনি ছিলেন স্কুলের কড়া হেডমাস্টারের মতো। রাজস্থানের প্রথম আসরের উইকেটরক্ষক ব্যাটার মাহেশ রাওয়াত বলেন, ‘মুম্বাইয়ের বিপক্ষে ম্যাচে আমাদের পরদিন ফ্লাইট ছিল জয়পুরের। ওয়ার্ন আমাদের বললো সকাল বেলা সবাইকে সুইমিংপুলে দেখতে চায়। আমি, রবীন্দ্র জাদেজা, ইউসুফ পাঠান সহ ৫ জন আমরা ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেইনি। পরদিন জয়পুর পৌঁছে টিম হোটেল থেকে যখন আমরা কয়েক কিলোমিটার দূরে হঠাৎ ওয়ার্ন বাস থামিয়ে দিল! এবং আমাদের মানিব্যাগ নিয়ে দুইজন সিকিউরিটি সাথে দিয়ে বললো বাকি পথ দৌড়ে যেতে!’

ওয়ার্ন সব ম্যাচেই জিততে চাইতো। এবং পরিশ্রম করতে পছন্দ করতো। রাজস্থানের সে সময়ের বেশ কিছু খেলোয়াড়ের ভাষ্যমতে, ম্যাচের আগে ওয়ার্ন নেতিবাচক কথা একদমই পছন্দ করতো না। দলে খুব বড় বড় নাম না থাকলেও সবাই জানতো আমরা জিততে পারি কারণ ওয়ার্ন আছে দলে!

  • লিগ্যাসি অব ওয়ার্ন

আইপিএলের উদ্বোধনী আসরে শিরোপা জয়ে বোলিং এবং অধিনায়কত্ব ছাড়াও ব্যাট হাতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন ওয়ার্ন। সেই আসরের ওয়ার্নের কিছু সেরা পারফরম্যান্স ফিরে দেখা যাক –

ক্ল্যাসিকস বনাম কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব, জয়পুর

দিল্লির বিপক্ষে ৯ উইকেটের বড় পরাজয়ের পর কিছুটা চাপেই ছিল রাজস্থান। যুবরাজ, সাঙ্গাকারা, জেমস হোপসের উইকেট নিয়ে ১৯ রানে ৩ উইকেট শিকার করে দলকে জয় এনে দেন ওয়ার্ন।

ডেকান চার্জার্স , হায়দ্রাবাদ

শেষ ওভারে ডেকান চার্জারসের প্রয়োজন ছিল ১৭ রানের। ওয়ার্ন তখন ক্রিজে, রাজস্থানের জয়ের আশা নেই বললেই চলে। অ্যান্ড্রু সায়মন্ডসের বলে শেষ তিন বলে চার ও ২ ছক্কায় ওয়ার্নের ৯ বলে ২২ রানে ২ উইকেটের অবিশ্বাস্য এক জয় তুলে নেয় রাজস্থান!

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু, জয়পুর

জয়পুরে ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে দুর্দান্ত এক জয় পায় রাজস্থান রয়্যালস। ৬৫ রানের জয়ের পথে ওপেনিংয়ে অস্নদকরের ফিফটির পর বল হাতে ২৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দলকে জয় এনে দেন ওয়ার্ন।

দিল্লি ডেয়ারডেভিলস (সেমিফাইনাল)

গ্রুপ পর্বে ১৪ ম্যাচের ১১ জয়। কেউ প্রত্যাশা না করলেও ওয়ার্ন বাহিনী দাপট দেখিয়েই সেমিতে। দিল্লির বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই ৯ উইকেটে হেরেছিল রাজস্থান। সেই প্রতিশোধটা সেমিতেই নেয় ওয়ার্ন বাহিনী। দিল্লিকে ১০৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে যায় রাজস্থান। ৪ ওভারে ২১ রানে ২ উইকেট নেন ওয়ার্ন।

চেন্নাই সুপার কিংস (ফাইনাল)

এক রান, এক বল, এক শিরোপা। উদ্বোধনী আসরেই ওয়ার্নের নেতৃত্বে চেন্নাই সুপার কিংসকে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় রাজস্থান রয়্যালস। শিরোপা জয়ের সাথে সাথে পূর্ণতা পেল ওয়ার্নের লিগ্যাসি!

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...