দেব-পোশাকের বিকিকিনি

ডিয়েগো আমান্ডো ম্যারাডোনা, আর্জেন্টাইন এই ফুটবলার ছিলেন একজন জাদুকর। পায়ের কারুকাজে, শৈলীতে তিনি ফুটবলের উথাল-পাতাল প্রেমে মজিয়েছিলেন গোটা দুনিয়াকে। ৬০ বছরের জীবনে উল্কার গতিতে ছুটেছেন, জীবনকে উপভোগ করেছেন প্রাণভরে।

আর ডিয়েগো ম্যারাডোনার বিখ্যাত একটি মুহূর্ত ছিল ‘হ্যান্ড অব গড’ খ্যাত গোল। সেই ম্যাচের জার্সিটি এবার বিক্রি হলো আকাশ ছোঁয়া মূল্যে। বুধবার লন্ডনের এক নিলামে ম্যারাডোনার জার্সিটি বিশ্বরেকর্ড ৯.২৮ মিলিয়ন ইউএস ডলার বা বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ৮০ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে।

এতদিন ম্যাচ খেলা কোনো জার্সির সর্বোচ্চ দামে বিক্রির রেকর্ড ছিল ৫.৬৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০১৯ সালে বাবে রুথের ১৯২৮-১৯৩০ মৌসুমে পরা নিউইয়র্ক ইয়াঙ্কিসের জার্সিটি বিক্রি হয়েছিল এই দামে। এছাড়া যেকোনো ক্রীড়া স্মারকের সর্বোচ্চ দামে বিক্রির রেকর্ডটি ছিল ২০১৯ সালে হাতে আঁকা অলিম্পিকের ঘোষণাপত্রের। সেটি নিউইয়র্কে বিক্রি হয়েছিল ৮.৮ মিলিয়ন ইউএস ডলারে।

ম্যারাডোনা’র জার্সিটি ছাপিয়ে গিয়েছে আগের সব মাইলফলক। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দামী ক্রীড়া স্মারক ‘হ্যান্ড অব গড’ জার্সিটি।

এই জার্সি পরে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আলোচিত গোলটি করেছিলেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি।

সেই বিখ্যাত গোলটি মাথা কিংবা পা দিয়ে নয়, বরং মাথায় কাছে হাত নিয়ে ফ্লিক করে ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক পিটার শিলটনকে পরাস্ত করেছিলেন ম্যারাডোনা। গোলের পরে ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রা হ্যান্ডবলের অভিযোগ করলেও তাতে সায় দেননি ম্যাচ পরিচালনায় থাকা রেফারিরা।

ম্যাচের পর অবশ্য ম্যারাডোনা নিজেই হাত দিয়ে গোল করার কথা স্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘ওটা ছিল আমার হাতের কিছু অংশ এবং ঈশ্বরের হাতের কিছু অংশ।’

ঈশ্বরের হাত-ই বটে, কারন মাঠে থাকা রেফারি আর এত এত ক্যামেরা’র চোখ ফাঁকি দিয়ে হাত দিয়ে গোল করা কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।

ওই একই ম্যাচে ম্যারাডোনা আরেকটি গোল করেছিলেন অবিশ্বাস্য দক্ষতায়। ছয়জন ইংলিশ ফুটবলারকে ড্রিবলিংয়ে বোকা বানিয়ে করা সেই গোলটি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে সেরাদের একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তাছাড়া পরে ফিফা গোলটি শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবেও নির্বাচন করে।

ইংল্যান্ডের সাবেক মিডফিল্ডার স্টিভ হজ ১৯৮৬ সালের সেই ম্যাচ শেষে ম্যারাডোনার সাথে জার্সি অদলবদল করেছিলেন। তারপর থেকেই বিখ্যাত এই জার্সিটি তিনি নিজের মালিকানায় রাখেন।

তিনি জার্সিটির জন্য সম্ভাব্য সব ‘বিড’ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং প্রদর্শনের জন্য ২০০২ সাল জাতীয় ফুটবল মিউজিয়াম কতৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছিলেন জার্সিটি। স্টিভ হজ নিলামে আগ্রহী না থাকলেও গত ৬ এপ্রিল নিলামকারক প্রতিষ্ঠান সোথবি বিখ্যাত জার্সিটি নিলামের জন্য ঘোষণা করে।

সোথবির অন্যতম সংগ্রাহক ওয়াকটার জানান, এই ঐতিহাসিক শার্টটি কেবল একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের একটি স্মারক নয়, এটি কেবল খেলার ইতিহাসের নয়। একই সাথে জার্সিটি বিশ শতকের ইতিহাসও বহন করে।

জার্সিটির সর্বনিম্ন মূল্য ৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার ধরা হলেও সোথবি অবশ্য সর্বোচ্চ মূল্য ৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার থেকে ৭.৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার অনুমান করেছিল। ২১ এপ্রিল নিলাম শুরু হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে, প্রথম ‘বিড’ করা হয়েছিল যা ছিল ৪.৯৯ মিলিয়ন ইউএস ডলার। তখনই ভ্যাট এবং আনুষাঙ্গিক সব খরচ মিলিয়ে, দামটি রুথের জার্সির আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

তবে এত বড় একটি নিলাম একেবারে বিতর্কহীন ছিল না। যখন সোথবি নিলামের ঘোষণা দেন, তখন ডিয়েগো ম্যারাডোনার মেয়ে দালমা ম্যারাডোনা দাবি করেন যে এটি আসলে সঠিক জার্সি নয়। তিনি বলেন, ‘মি. হজ আসলে সেই ম্যাচে ম্যারাডোনার প্রথমার্ধে পরে থাকা জার্সিটি নিয়েছেন। বিখ্যাত দুইটি গোল করা’র সময় ম্যারাডোনা দ্বিতীয় আরেকটি জার্সি পরে ছিলেন।’

তবে সোথবি ফটোম্যাচিং এর মাধ্যমে এই অভিযোগ মিথ্যা প্রমান করে। তারা জানায় হজের কাছে থাকা জার্সিটি সঠিক জার্সি ছিল, এবং এটি পরেই ম্যারাডোনা শতাব্দীর আলোচিত দুইটি গোল করেছিলেন।

গত ৪ মে, বুধবার অনলাইন নিলামের সময়সীমা শেষ হয়। তাতে এমনই বিরাট অঙ্কের দাম ওঠে ‘হ্যান্ড অব গড’ খ্যাত জার্সিটির। তবে সেটি কে কিনেছেন, তা এখনও জানায় নি কতৃপক্ষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link