আহমেদাবাদে ধোঁয়াশার ১৪০ ওভার

আহমেদাবাদের এই আলোচিত স্টেডিয়ামটার নাম নিয়ে ধোঁয়াশা সহজে কাটবে বলে মনে হয় না। শুরুতে নাম ছিল মোতেরা, পরে একটা সময় গুজরাট স্টেডিয়াম নামেও পরিচিত ছিল। আর দু’দিন আগ পর্যন্তও নাম ছিল সর্দার প্যাটেলের নাম। একদিন আগে নামটা পাল্টে রাখা হয় ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নামে। ফলে, নাম নিয়ে ধোঁয়াশার কোনো শেষ নেই!

শুধু নাম দিয়ে নয়, স্টেডিয়ামের উইকেটও যথেষ্ট ধোঁয়াশা সৃষ্টি করছে। শুরুতে ইংল্যান্ড দল যেটাকে পেস ট্র্যাক ভেবে মাঠে নেমেছিল – সেটা আসলে র‌্যাংক টার্নার বলে প্রমাণিত হল। সেকারণেই কি না ম্যাচের আয়ু দু’দিনেরও কম। আর স্বভাবতই ব্রিটিশরা স্পিনের সামনে দাঁড়াতেই পারলো না।

ইতিহাসে মাত্র ‍দু’দিনের মধ্যে টেস্ট ম্যাচ শেষ হওয়ার নজীর খুব বেশি নয়। ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের তৃতীয় এই টেস্ট ম্যাচের আগে সর্বশেষ এই ঘটনা ঘটে মাত্র ২১ বার।

সর্বপ্রথম এই ঘটনা ঘটে সেই ১৮৮২ সালে। আর সর্বশেষ ঘটে ২০১৮ সালে। সর্বশেষ ঘটনাটির সাথে জড়িয়ে আছে ভারতের নাম। সেবার আফগানিস্তানের অভিষেক টেস্টটা ভারত শেষ করে ফেলে মাত্র দু’দিনের মধ্যে।

আফগানিস্তানের পর এবার ভারতের শিকার ইংল্যান্ড। আর এই ইংল্যান্ডকে ভারত এবার যথারীতি স্পিন বিষে নীল করেছে। প্রথম ইনিংসে মাত্র ১১২ রানে অলআউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড। অক্ষর প্যাটেল ছয় আর রবিচন্দ্রন অশ্বিন তিনটি করে উইকেট নেন।

প্রথম ইনিংসে ভারতের শুরুটা হয়েছিল রোহিত শর্মার হাফ সেঞ্চুরি দিয়ে। তবে, সেই ইনিংসে মাত্র চার ভারতীয় ব্যাটসম্যান পৌঁছেছেন দুই অংকের ঘরে। ইংল্যান্ডের জ্যাক লিচ চার উইকেট পান, অন্যদিকে পার্ট টাইমার অফস্পিনার জো রুট নিয়ে ফেলেন পাঁচ উইকেট। সেটাও মাত্র আট রান দিয়ে।

তবে, দ্বিতীয় ইনিংসে আবারো রূদ্রমূর্তিতে ফিরে আসে ভারত। ইংল্যান্ডকে অলআউট করে মাত্র ৮১ রানে। বাঁ-হাতি স্পিনার অক্ষর প্যাটেল আবারো নায়ক বনে যান। এবার তিনি নেন পাঁচ উইকেট। অভিজ্ঞ অশ্বিন নেন চার উইকেট।

পরবর্তীতে, চতুর্থ ইনিংসে ভারতের জন্য জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ৪৯ রানের। না, এবার আর ইংল্যান্ডের স্পিনাররা বা কোনো বোলারই তেমন একটা ত্রাস সৃষ্টি করতে পারেনি। ভারত বিনা উইকেটেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়। রোহিত শর্মা ২৫ ও অপর ওপেনার তরুণ শুভমান গিল ১৫ রান করে অপরাজিত থাকেন।

তৃতীয় সেশনের শুরুতেই ম্যাচের ইতি হয়। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসের মেয়াদ ছিল মাত্র ৭.৪ ওভার। আর পুরো ম্যাচের মেয়াদ মাত্র ১৪০ ওভার। তাতে, ১০ উইকেটের বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লো বিরাট কোহলির দল।

সব মিলিয়ে নিজেদের ইতিহাসে আরেকটি সংক্ষিপ্ততম টেস্ট ম্যাচ দেখলো ভারত। এখন পর্যন্ত ভারতের যে দু’টি টেস্ট শেষ হয়েছে দু’দিনে – দু’টিতেই জয়ী ভারত।

গেল ১০০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত টেস্টে দুই দিনে হারলো ইংল্যান্ড। শেষবার এই ঘটনা ঘটে ১৯২১ সালে। সেবারও এবারের মতই প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড করে ১১২ রান। কাকতালের এখানেই শেষ নয়, ১০০ বছর আগেও ১০ উইকেটেই হেরেছিল ইংলিশরা।

সংক্ষিপ্ততম ম্যাচের গল্পগুলো আবার খুব ভুতুড়ে। ১৯৩১-৩২ মৌসুমে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়া দল দক্ষিণ আফ্রিকাকে ইনিংস ও ৭২ রানের ব্যবধানে হারায়। ম্যাচটা শেষ হয় মাত্র একদিন ও এক ঘণ্টায়। অস্ট্রেলিয়া নিজেদের একমাত্র ইনিংসে করে ১৫৩ রান, আর দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের দু’টি ইনিংসে করে যথাক্রমে ৩৬ ও ৪৫ রান। এবার অন্তত তা হল না বলে রক্ষা!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link