জহুরির চোখে আটকে থাকা রত্ন

জহুরির চোখ স্বর্ণ চেনে। মহেন্দ্র সিং ধোনি নিশ্চয়ই কোন অংশে জহুরির থেকে কম নন। চোখের পলকে যে বলে দিতে পারে ব্যাটারকে ফিরতে হবে নাকি প্যাভিলনে, সে নিশ্চয়ই একটা খেলোয়াড়ের সম্ভাবনাও পরিমাপ করতে পারবে। সেটাই করেছিলেন তিনি মাতিশা পাথিরানার ক্ষেত্রে।

লাসিথ মালিঙ্গার কথা নিশ্চয়ই ভুলে যাওয়ার নয়। লংকান কিংবদন্তির ব্যতিক্রমী বোলিং অ্যাকশন তাকে পরিচিতি পাইয়ে দিয়েছে। তবে তিনি কিংবদন্তি হয়েছেন নিজের সামর্থ্য আর সক্ষমতার প্রমাণ রেখেই। তার এক প্রভাব রয়েছে পুরো একটা জেনারেশনের উপর। তার সেই ব্যতিক্রমী বোলিং অ্যাকশন অনুসরণ করে বোলিং করেনি এমন তরুণ খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

সেই ব্যতিক্রমী ‘স্লিঙ্গা’ অ্যাকশনের বাহক হয়েই হাজির হয়েছেন তরুণ লংকান পেসার মাতিশা পাথিরানা।একটিমাত্র ভিডিও দেখেই যার জন্যে রীতিমত ছুটে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির। তিনি যাকে পরিচয় করিয়ে দিতে চেয়েছেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চে। ২০২১ সালেই তাকে রিজার্ভ দলে রাখতে চেয়েছিলেন ধোনি, তেমনটিই জানিয়েছেন মাতিশার কোচ বিলাল ফ্যাসি।

তিনি বলেন, ‘তার তখন ১৭ কি ১৮ বছর বয়স এবং মহামারী তখন মাত্রা ছাড়িয়েছে এমন সময়ে ধোনি পাথিরানাকে ভ্যাকসিন নিয়ে এরপর আরব আমিরাতে চেন্নাই দলের সাথে যুক্ত হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লেখে। তার একটা ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়, যেখানে সে ব্যাটারকে ইয়োর্কার দিয়ে কুপকাত করেছিল। এরপরই চেন্নাই সুপার কিংস তার প্রতি আগ্রহ দেখায়।’

রীতিমত স্কুল ক্রিকেটে খেলার সময় থেকেই বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করতে শুরু করেন পাথিরানা। বিশেষত মালিঙ্গার মত করা বোলিং অ্যাকশনের জন্যে। তবে তার বাবার দাবি পাথিরানা ছেলেবেলায় প্রথম বল ধরেই এমন অ্যাকশনে বল করতে শুরু করেন। কোন খেলোয়াড়কে অনুসরণ করার আগেই পাথিরানা রপ্ত করে ফেলেন এমন ভিন্নধর্মী বোলিং অ্যাকশন। এরপর তো ক্রমশ তিনি নজড় কেড়েছেন।

শ্রীলঙ্কার স্কুল ক্রিকেট থেকে শুরু করে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ অবধি খেলে ফেলেছেন এই তরুণ। সবখানেই মোটামুটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তিনি। ২০২১ সালে আইপিএলে তিনি যোগ দিতে পারেননি। তবে ২০২২ সালে ঠিকই তিনি যোগ দিয়েছিলেন চেন্নাই শিবিরে। সেবার অভিষেকও হয় তার। আর অভিষেকটা তিনি রাঙিয়ে রাখেন নিজের আপন রঙে।

সেবার শুরুটা তিনি করেছিলেন শুভমন গিলের উইকেট তুলে নিয়ে। একেবারে আইপিএল ক্যারিয়ারের প্রথম বলেই তিনি তুলে নিয়েছিলেন উইকেট। সেবার দুইটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। অভিজ্ঞতার বিচারে তিনি পিছিয়ে গিয়েছিলেন। তবে এই আসরে যেন তিনি আরও খানিকটা পরিণত। বয়সটা বেড়েছে তার। যদিও এই মৌসুমে নিজের প্রথম ম্যাচটা খুব একটা ভাল কাটেনি।

ম্যাচের বোলিং ফিগার দেখলে যে কেউ নিঃসন্দেহে তেমনটাই বলবে। ৪২ রান দিয়ে দুই উইকেট নিয়েছেন তিনি। শুরুর স্পেলে দেদারছে রান হজম করেছেন। তবে ইনিংসের শেষভাগে তিনি ফিরে এসেছেন দূর্দান্তভাবে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে শেষ দিকে ১৮তম ও ২০তম ওভার করেন পাথিরানা। শেষের দুই ওভারে তিনি রান দিয়েছেন কেবল ১৪টি।

তার হাত ধরেই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় চেন্নাই। অমন কঠিন মুহূর্তে তার উপরে ভরসা রেখেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। কেননা তার তো জহুরির চোখ। সেই চোখ নিশ্চয়ই ধোকা দিতে পারে না। ধোকা দেয়নি। পাথিরানা আস্থার প্রতিদান রেখেছেন। শেষের দিকে তুলে নিয়েছেন দুইটি উইকেট। তাছাড়া আঁটসাঁট লাইন আর লেন্থে তিনি নাভিশ্বাস তুলেছেন ব্যাঙ্গালুরুর ব্যাটারদের।

কি বৈচিত্র্যময় এক জীবন পাথিরানার! পুরো পরিবার যেখানে সংগীতের আরাধরা করে, সেখানে পাথিরান বেছে নিয়েছেন ক্রিকেটকে। শুধু বেছে নিয়ে ক্ষান্ত নন তিনি। নিজের বোলিং অ্যাকশন আর ধূর্ত বুদ্ধিমত্তা দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করছেন। সেই সাথে তার সক্ষমতা ও স্পৃহা তাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে বিশ্ব ক্রিকেটে। ‘বেবি মালিঙ্গা’ খ্যাতি অর্জন তিনি করে ফেলেছেন।

তবে এই পরিচয়ে বড় নিশ্চয়ই হতে চাইবেন না। নিজের আলাদা একটা পরিচয় তিনি লিখে রেখে যেতে চাইবেন বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে। সেই পথে যোগ্য লোকের হাতেই যেন পড়েছেন তিনি। ধোনি তো জানেন ঠিক কি করে একেবারে শূন্য থেকে শিখরে উঠতে হয়। তিনি নিজেই তো সে পথটা পাড়ি দিয়েছেন। নিশ্চয়ই তার পছন্দের তরুণকেও সে পথটাই বলে দিতে চাইবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link