তিনটি বল, তিনটি ছক্কা

গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েল শাদাব খানের বলে রিভার্স স্যুইপ করতে গিয়ে হ্যারিস রউফের হাতে ধরা পড়লেন। ১৭৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে অজিরা ৯৬ রানেই হারিয়ে ফেললো ৫ উইকেট।

তখন ১৩ ওভারের খেলাও শেষ। শাদাব খান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেমি ফাইনালের সেরা বোলিং স্পেল করে শেষ করেছেন, চার ওভারে ২৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট। সেই সময় অজিদের সাত নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামলেন ম্যাথু ওয়েড।

অন্য যেকোনো দিন হলে হয়তো ম্যাচটা শাদাব খানের নামেই লেখা থাকতো। তবে দুবাইয়ের এই সেমিফাইনাল ম্যাথু ওয়েড লিখে রাখলেন নিজের নামে, বাঁধাই করে। ১৯তম ওভারে শাহীন শাহ আফ্রিদিকে মারা তিনটি ছয় যেনো এখন ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় পোস্টার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অজিদের সবচেয়ে বড় হিরোও এখন ম্যাথু ওয়েড।

অথচ কয়েক ওভার আগেও চিত্রটা ভিন্ন ছিল। ম্যাচ জেতার জন্য মারকাস স্টনিস ও ম্যাথু ওয়েডই ছিলেন শেষ স্বীকৃত জুটি। শেষ ৭ ওভারে ৮১ রান করতে হতো তাঁদের। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ বোলিং করে আসা শাহীন শাহদের বিপক্ষে কাজটা বেশ কঠিন ছিল। সেই সময় মাঠে থাকা অনেক অজি দর্শক নাকি আশাও ছেড়ে দিয়েছিলেন। কেউ কেউ মাঠ থেকে বের হয়ে যেতেও নিয়েছিলেন।

অজিদের হয়ে সাত নম্বরে নামলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত ওপেন করেন ম্যাথু ওয়েড। ২০১৮ থেকে এখন পর্যন্ত ৪৩.২২ গড়ে এবং ১৫৮.৩৪ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন। তবে অজিদের হয়ে নিজেকে সেভাবে প্রমাণ করতে পারছিলেন না। এমনকি শেষ ২০ ম্যাচে একটা হাফ সেঞ্চুরিও করতে পারেননি। ব্যাটিং স্ট্রাইকরেটও আছি ১২০ এর আশেপাশে।

ফলে অস্ট্রেলিয়ার সামনে বিশ্বকাপ দলের জন্য অন্য কিপার ব্যাটসম্যান নেয়ারও সুযোগ ছিল। খানিকটা অনিশ্চয়তার মধ্যেই দলে সুযোগ পেয়েছেন। তবে এবার অস্ট্রেলিয়া তাঁকে চিন্তা করেছে ফিনিশার হিসেবে। সেখানেই অস্ট্রেলিয়াকে প্রতিদান দেয়া শুরু করেন ওয়েড। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি লো স্কোরিং ম্যাচে ১০ বলে ১৫ রান করে দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন। সেখানেও তাঁর সাথে ছিলেন স্টনিস।

বৃহঃষ্পতিবার রাতে আবারো একসাথে মাঠে নামলেন দুইজন। দুজন মিলে উড়তে থাকা পাকিস্তানে দুবাইয়ের দর্শকদের সামনে মাটিতে নামিয়ে আনলেন। শেষ ১৮ বলে অজিদের দরকার ছিল ৩৭ রান। হাসান আলীর অফ কাটার বলটার জন্য শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন ওয়েড। তারপর লং অনের উপর দিয়ে বিশাল এক ছক্কা। হাসান আলীকে নিজের লাইন চেঞ্জ করতে বাধ্য করে আবার শর্ট ফাইন লেগ ও ডিপ স্কয়ার লেগের মাঝ দিয়ে বল সীমানার বাইরে পাঠালেন ওয়েড।

এবার আবার ম্যাচে ফেরত এলো অজিরা। সেমিফাইনালে যাওয়ার জন্য শেষ ১২ বলে অজিদের প্রয়োজন তখন ২২ রান। ১৯ তম ওভারে বল করতে এলেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। পুরো টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। যেকোনো ব্যাটসম্যান হলেই হয়তো এই ওভারটা সামলে খেলার চেষ্টা করতেন। শেষ ওভারটা টার্গেট করতেন।

তবে রাতটা ম্যাথু ওয়েডের সেটা বোধহয় তিনি জানতেন। পাকিস্তানের সেরা পেসারকেই আক্রমণ করলেন। আফ্রিদিও টানা ইয়র্কার করার পরিকল্পনা নিয়েই এলেন। দ্বিতীয় বলটা আফ্রিদি ইয়র্কারে ফেলতে পারেননি। একটু আগে পায়ের সামনে পড়া বলটা ওয়েডও কানেক্ট করতে পারলেন না ঠিক করে।

ডিপ উইকেটে হাসানের সামনে ক্যাচ উঠলো। তবে হাসান তাঁদের ফাইনালের টিকিট ফেলে দিলেন। পুরো দুবাই স্টেডিয়ামে তখন পিন পতন নীরবতা। শেষ নয় বলে অজিদের প্রয়োজন ১৮ রান। মাত্র নয় ১৮ রান করা অসম্ভব নয় তবে বেশ কঠিন। তাও সেমিফাইনাল ম্যাচের চাপ নিয়ে। ম্যাথু ওয়েড বোধহয় একটু মুচকি হাসবেন এরকম শুনলে। তাঁর দরকার মাত্র তিনটি বল, তিনটি ম্যাক্সিমাম। ব্যস! ১৮ রান।

শাহীন এখনো ইয়র্কারের খোজেই ছিলেন। সেটা ওয়েড আগে থেকেই বুঝে জায়গা করে নিয়ে শর্ট ফাইন লেগের উপর দিয়ে বল দর্শকদের কাছে পাঠালেন। এরপর মিড উইকেটের উপর দিয়ে আবার ছয়। শেষ বলটা প্রায় ইয়োর্কারই ছিল এবার স্কুপ করে উইকেটরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে শেষ ছয়। ১৮ রান সহজই তো, মাত্র তিনটা ছয়।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link