সান্ধুর ইন ডিপার, কীর্তির শ্যুটার এবং…

নয় নয় করে ১৯৮৩র বিশ্বকাপ জয়ী দলে শীর্ষ আটজন ছাড়াও কয়েকজন ছিলেন তবে তুলনামূলক ভাবে কিছুটা নিস্প্রভ। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নামটি সবাই জানেন – সুনীল মনোহর গাভাস্কার। তবে সেই টুর্নামেন্টে তেমন মনোহরণ করতে পারেননি সানি। গোটা টুর্নামেন্টে তার গড় দুই অংক ছোঁয় নি, যদিও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে ২৫ রানের একটি অমুল্য ইনিংস খেলে ভারতের জয়ের পথ প্রশস্ত করেছিলেন।

কীর্তি আজাদ নিজের নামের প্রতি খুব একটা সুনাম করতে না পারলেও সেই সেমিফাইনালেই বথাম নামের সুপারম্যানকে শ্যুটার দিয়ে পরাস্ত করে প্যাভিলিয়নের পথ দেখানোর গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেছিলেন। বলটি নাকি টার্নও নিয়েছিল।

দলের অন্য স্পিনার রবি শাস্ত্রী অবশ্য বেশি ম্যাচ খেলেছিলেন কীর্তির তুলনায়। কয়েকটি ম্যাচে ব্যাট হাতে ওপেনিংও করেছিলেন। তবে ব্যাটিং– বোলিং কোনটাতেই যে খুব মারকাটারি কিছু সাফল্য পেয়েছিলেন সেটা বলা যাবে না। তবে বিশ্বকাপের খামতি রবি সুদে আসলে মিটিয়ে দিয়েছিলেন ভারতের ১৯৮৫ সালের বেনসন অ্যান্ড হেইজেস কাপ জয়ে। তবে সে আলাদা কাহিনী।

খেলোয়াড় হিসেবে দিলীপ ভেঙসরকারের কাছেও বিশ্বকাপের স্মৃতি সুখের নয়। প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে মহিন্দারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মাঝ পথে মার্শালের ভয়াবহ বাউন্সারে আহত হয়ে রক্তাক্ত দিলীপ মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। আর সেই বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেননি তিনি।

শ্রীকান্তের স্কয়ার ড্রাইভ, কপিলের পেছনে ছুটে ক্যাচের মতোই আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে বলবিন্দর সিং সান্ধুর ইন স্যুইংয়ে গ্রিনিজের জাজমেন্ট দিয়ে অফ স্ট্যাম্প খোয়ানোর দৃশ্য। এই দৃশ্য ইমরানের বলে ভিশির অনুরূপ ভাবে আউট হওয়ার দু:খ অনেকটাই ভোলাতে পেরেছিল ভারতের ক্রিকেট প্রেমীদের। গোটা টুর্নামেন্টে সান্ধু খান আটেক উইকেট নিলেও তার গড় এবং ইকোনমি দেখলে তাকে খুব একটা সফল বলা যাবে না।

এছাড়াও দলে ছিলেন সুনীল ওয়ালসন। পুরো বিশ্বকাপে অবশ্য একটি ম্যাচেও ভারতের হয়ে মাঠে নামার সুযোগ পান নি তিনি। এই জন্য তার হৃদয়ে একটা চাপা ক্ষোভ থাকাটা স্বাভাবিক। তবে অন্যদিক দিয়ে ভাবলে তার ভাগ্যকে হিংসেও হয়। কোটি কোটি ভারতীয় তার জায়গায় নিজেকে পেলে ধন্য হয়ে যেত।

আজ পেছনের দিকে তাকিয়ে মনে হয় ভারতের বিশ্বকাপ জয় একটি দা ভিঞ্চি বা মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর অমর শিল্পের মত। সেই ছবির মূল চরিত্র অবশ্যই কপিল, মহিন্দার, যশপাল, বিন্নি, মদনলাল, কিরমানিরা, কিন্তু সেই ছবিতে সঠিক জায়গায় সান্ধু, শ্রীকান্ত, সানি, কীর্তিরা না থাকলে সেই শিল্প সম্পূর্ণ হত না।

তাই ১৯৮৩’র বিশ্বজয় কোন একটা ক্রিকেটার বা কয়েকজন ক্রিকেটারের সাফল্যের ওপর নির্ভর ছিল না, তা সম্ভব হয়েছিল প্রত্যেকটি ক্রিকেটার সময় মত দলের পক্ষে যা প্রয়োজনীয় সেই কাজ সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করেছিলেন বলেই। এটাই দরকার। দলের, দেশের এবং পরিবারের – সবার সাফল্যেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link