মিডল অর্ডার ফেরত ওপেনার

ক্রিকেট খেলাটা যে শুধু রান করা আর উইকেট নেয়ার থেকে অনেক বেশি জটিল এটা বাইরে থেকে বোঝা মুশকিল। ক্রিকেটটা খুব নিখুঁত ভাবে খেলতে হয়। মাঠে ছোট্ট একটা ভুল সিদ্ধান্ত অনেক বড় ক্ষতি করে দিতে পারে। যেমন কোন বোলারকে দিয়ে এক ওভার কম বা বেশি বল করানো, কিংবা ভুল সময়ে বোলিং দেয়া, ফিল্ডিং পজিশন কিংবা ব্যাটিং অর্ডার সবকিছুই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বের অনেক নামী দামী ব্যাটসম্যান আছেন যারা তাঁদের ব্যাটিং অর্ডার পাল্টে ফেলেও সাফল্যটা পেয়েছেন। অনেক ব্যাটসম্যান আছেন যারা আগে ব্যাটিং করতেন মিডল অর্ডারে। তবে পরে ওপেনার হিসেবে খেলে পুরো ক্রিকেট দুনিয়ায় রাজত্ব করেছেন। এমন ব্যাটসম্যানদের নিয়েই এই তালিকা।

  • বীরেন্দ্র শেবাগ (ভারত)

ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল ওপেনার বীরেন্দ্র শেবাগ। বিশেষ করে রঙিন পোশাকে বোলারদের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। ওপেনিং পজিশনে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে পুরো দুনিয়া শাসন করেছেন। অথচ নিজের অভিষেক ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ব্যাট করতে নেমেছিলেন ছয় নম্বরে। তবে সেই ম্যাচে সেঞ্চুরি করার পর তাঁকে পাঠানো হয় ওপেনিং পজিশনে। এরপর আর কখনো পিছনে ফিরে তাকাননি এই ব্যাটসম্যান। লম্বা সময় ভারতের হয়ে ওপেন করেছেন।

  • সনাথ জয়াসুরিয়া (শ্রীলঙ্কা)

পুরো ক্রিকেট দুনিয়ায় ওপেনিং এর সংজ্ঞা বদলে দিয়েছিলেন সনাথ জয়াসুরিয়া। মূলত একজন অলরাউন্ডার হিসেবেই শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলতে এসেছিলেন। মূলত ৫-৬ নম্বরে ব্যাটিং করতেন। পরে পিঞ্চ হিটার হিসেবে তাকে ওপেন করতে নামানো হতো তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিং এর কারণে। এরপর তো বিশ্বের অন্যতম সেরা ওপেনারেই পরিণত হলেন জয়াসুরিয়া।

  • রোহিত শর্মা (ভারত)

২০১৩ সালকে বলা হয় রোহিত শর্মার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। এর আগে সাধারণ আর সব ব্যাটসম্যানের মতই ছিলেন রোহিত। তবে সেবছর ধোনি তাঁকে উপরের ব্যাট করতে নিয়ে আসেন। এরপর থেকে বিশ্বের সেরা ওপেনারদের কাতারে নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন তিনি। ওয়ানডে ক্রিকেটে তাঁর নামের পাশে আছে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি।

  • ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (নিউজিল্যান্ড)

নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম অধিনায়কদের একজন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। দেশটির সেরা ব্যাটসম্যানদেরও একজনও তিনি। যদিও ক্যারিয়ারের শুরুতে ব্যাটিং অর্ডারের নিচের দিকে ব্যাটিং করতেন। নয় নম্বরে নেমেও দুইটি হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। এরপর ওপেন করতে নেমে বিপক্ষ দলের বোলারদের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন। ওপেনার হিসেবে কিউইদের হয়ে ১০৭ ওয়ানডে ম্যাচে ১০২.৭৫ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন।

  • ক্রিস গেইল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

ক্রিস গেইলও তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে। তবে পরে তাঁর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং এর কারণে তাঁকে ওপেনার হিসেবে নামানো হয়। তারপর তো বিশ্বক্রিকেটের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম হয়ে উঠেন ক্রিস গেইল। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে লম্বা সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রাজত্ব করেছেন। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেরও সবচেয়ে বড় আকর্ষণে পরিণত হয়েছিলেন ইউনিভার্স বস।

  • তিলকারত্নে দিলশান (শ্রীলঙ্কা)

শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের ম্যাচ উইনার ছিলেন তীলকারত্নে দীলশান। ওপেন করতে নেমে দেশটিকে কত ম্যাচের ভীতই না গড়ে দিয়েছেন। বল হাতেও ছিলেন বেশ কার্যকর। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং দলকে একটা ভালো শুরু এনে দিত। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর শুরুটাও হয়েছিল মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবেই। ওপেনিং করতে নামার আগে তিনি শ্রীলঙ্কার হয়ে মোট ৮৭ টি ম্যাচ ছয় নম্বরে খেলেছেন। পরে ওপেনার হিসেবে মোট ২১ টি সেঞ্চুরি করেছেন এই ব্যাটসম্যান।

  • শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)

ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম ব্যাটসম্যান ওপেনার হিসেবেও ছিলেন তাঁর সময়ের সেরাদের একজন। প্রায় দুই যুগ ধরে ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক হয়েছিল ৫ নম্বরে। মিডল অর্ডারে খেলে নিজের প্রথম ৭৮ ওয়ানডে মক্সাচেও কোন সেঞ্চুরি পাননি। অথচ ওপেন করার পর ৪৯ টি ওয়ানডে সেঞ্চুরি নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ করেছেন শচীন রমেশ টেন্ডুলকার।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link