বয়স ভিত্তিক পর্যায়ে মেহেদী হাসান মিরাজের পরিচয় ছিলো একজন জাত অলরাউন্ডার হিসাবে। অনূর্ধ্ব -১৯ বিশ্বকাপেও খেলেছেন স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসাবেই। বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে সফলও ছিলেন মিরাজ। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার আগে ও পরে তাকে অলরাউন্ডার হিসাবেই গণ্য করতো সবাই। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মিলিয়ে যেতে থাকে তাঁর অলরাউন্ডার পরিচয়।
মিরাজ জাতীয় দলে আসার পর পুরোপুরি পাল্টে যান। মিরাজ পাল্টে যান; নাকি তাকে পাল্টানো হয়েছে এটা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু সব তর্ক বিতর্ক ছাপিয়ে মিরাজ হয়ে ওঠেন এমন একজন ক্রিকেটার, যে বল হাতে দুর্দান্ত ও সহজাত প্রতিভা এবং দলের প্রয়োজন ব্যাটিং করতে পারেন টুকটাক।
তবে টাইমিং, প্লেসমেন্ট ও ফ্লিক শট, কবজির মোচড়, লেগ স্ট্যাম্প থেকে সুইপ, অফ স্ট্যাম্প থেকে সুইপ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন এক মিরাজকে। প্রথম টেস্টে আট নাম্বারে নেনে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করার পর আজ দলের বিপর্যয়ে খেলেছেন ৫৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। দিন শেষে মিরাজ জানিয়েছেন ব্যাটিং নিয়ে সিনিয়রদের দেওয়া পরামর্শ ও সমর্থনেই উন্নতি করছেন তিনি।
মিরাজ বলেন, ‘আমি কষ্ট করছি। এছাড়া সবাই আমাকে আমার ব্যাটিং স্কিল নিয়ে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। এই টেস্টে সবাই আমাদের পেছন থেকে উৎসাহ দিয়েছে। আমাদরে সিনিয়র খেলোয়াড়, আমাদের মুমিনুল ভাই আমাকে সাপোর্ট করেছে। মুশফিক ভাইও আমাকে অনুশীলনের সময় নানা রকম টিপস দিয়েছিলেন।’
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ২৪ টেস্টে ৩ হাফসেঞ্চুরি ও ১ সেঞ্চুরিতে ২০.৬৪ গড়ে করেছেন ৬৩৮ রান। ৪৪ ওয়ানডেতে ১ হাফসেঞ্চুরির সাহায্যে ১৭.৮৬ গড়ে করেছেন ৩৯৩ রান। আর ১৩ টি-টোয়েন্টিতে মিরাজের ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ৯৩ রান।
মিরাজের পরিসংখ্যান দেখে অনেকের অভিযোগ থাকতে পারে; থাকতে পারে হতাশাও। তবে মিরাজ জানিয়েছেন খেলতে খেলতে উন্নতি হচ্ছে এবং দলে আরো অবদান রাখতে পারবেন তিনি । মিরাজ বিশ্বাস করেন ব্যাটিংয়ে আরো ভালো করার সামর্থ্য রয়েছে তাঁর।
তিনি বলেন, ‘বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংটা ভালো করতে পারলে এটা দলের জন্য সহায়ক। আমি যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করেছিলাম, তখন বোলার হিসেবেই শুরু করেছিলাম। ব্যাটিংয়ে ভালো কিছু করতে পারিনি। আমি নিজেও বিশ্বাস করি আমি ভালো ব্যাটিং করতে পারি। দূর্ভাগ্যবশত আমি ভালো করতে পারিনি। শুরুতে আন্তর্জাতিক মানের বোলারদের বিপক্ষে ভালো খেলতে পারিনি। এখন খেলতে খেলতে হচ্ছে। আশা করি সব সময়ের দলে ব্যাটিংয়ে কন্টিবিউশন করতে পারবো।’
ব্যাটসম্যান মিরাজকে নিয়ে শুরুতে মানুষের যে আগ্রহ ছিলো সেটা আবার জাগিয়ে দিয়ে তুলেছেন এই সিরিজে। ব্যাটসম্যান সত্ত্বা জাগিয়ে তুললেও পরিসংখ্যান নিয়ে না ভেবে ক্যারিয়ার লম্বা করাই একমাত্র লক্ষ্য মিরাজের।
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতের কথাতো কেউ বলতে পারে না। তবে আমার স্বপ্ন ক্যারিয়ারটাকে অনেক দূর নিয়ে যেতে। কত উইকেট থামতো, কত রান করতো এটাতো আগে থেকে বলা সম্ভব নয়। লক্ষ্য কখনো সেটআপ করলে আমার জন্য চাপ হয়ে যায়। চলছে, চলবে। যতদিন ক্রিকেট খেলবো, ভালো কিছুই হবে ইনশাল্লাহ।’