মিরাজ, টক অব দ্য টাউন

প্রকৃতি নাকি শূন্যস্থান পছন্দ করে না; কেউ বিদায় নিলে ঠিকই অন্য কেউ আসে দৃশ্যপটে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট থেকে যেদিন বিদায় নিবেন সাকিব আল হাসান, সেদিন কে আসবে তাঁর জায়গায় - এমন প্রশ্ন কত বারই তো মাথায় এসেছে। ব্যাটে, বলে সাকিবের মত এমন সমান আধিপত্য কে দেখাতে পারবেন - উত্তর জানার চেষ্টা বহুবারই করা হয়েছে।

প্রকৃতি নাকি শূন্যস্থান পছন্দ করে না; কেউ বিদায় নিলে ঠিকই অন্য কেউ আসে দৃশ্যপটে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট থেকে যেদিন বিদায় নিবেন সাকিব আল হাসান সেদিক কে আসবে তাঁর জায়গায় – এমন প্রশ্ন কতবারই তো মাথায় এসেছে। ব্যাটে, বলে সাকিবের মত এমন সমান আধিপত্য কে দেখাতে পারবেন – উত্তর জানার চেষ্টা বহুবারই করা হয়েছে।

সাকিব আল হাসানের মত আরেক জন সাকিব নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে না, তবে ব্যাটিং আর বোলিংয়ে সমান তালে পারফর্ম করে বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীদের চিন্তা লাঘব করেছেন আরেক তরুণ অলরাউন্ডার। তিনি মেহেদি হাসান মিরাজ; ২০১৬ সালে অভিষেক ম্যাচে বল হাতে জাদু দেখিয়েছিলেন তিনি, সেই থেকে তাঁকে ভাবা হত বোলার। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ব্যাটার মিরাজও বেরিয়ে এসেছেন আলোতে।

বিশেষ করে ২০২২ সাল যেন অন্য রকম কেটেছে মেহেদি হাসান মিরাজের। নিজের স্পেশালিষ্ট স্পিনার তকমা ঝেড়ে ফেলে হয়ে উঠেছেন নির্ভরযোগ্য অলরাউন্ডার। দুর্দান্ত একটা বছর পার করার পর পুরষ্কারও পেয়েছেন হাতে-নাতে। ক্রিকেটের বাইবেল খ্যাত উইজডেনের বর্ষসেরা ওয়ানডে একাদশে জায়গা পেয়েছেন এই বাংলাদেশী। এর আগে আরেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রতিষ্ঠান ইএসপিএন, ক্রিকইনফোর নির্বাচিত বর্ষসেরা একাদশেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।

পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। এই ফরম্যাটে বছর জুড়ে ১৫টি ম্যাচ খেলা মিরাজ ৬৬ গড়ে ৩৩০ রান করেছেন; আর বল হাতে ওভার প্রতি ৫.৪৪ রান খরচ করে নিয়েছেন ২৪ উইকেট। এমন দারুণ একটি বছর শেষ করার পর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) ঘোষিত বর্ষসেরা ওয়ানডে একাদশে সুযোগ পাওয়া মিরাজের জন্য স্বাভাবিকই বটে। চমকপ্রদ কিছু না ঘটলে এই টাইগার তারকার নাম থাকবে আইসিসির দলে।

সদ্য বিদায়ী বছরের মার্চ মাসে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আফিফ হোসেনকে সাথে নিয়ে অবিশ্বাস্য এক জুটি গড়েছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। দলকে হারের কিনারা থেকে টেনে তুলে পৌঁছে দিয়েছিলেন জয়ের বন্দরে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও ব্যাট হাতে দৃঢ়তা দেখিয়েছিলেন মিরাজ। আর বছরের শেষ ওয়ানডে সিরিজে ভারতের বিপক্ষে জয়ের নায়ক ছিলেন এই ডানহাতি।

আর বল হাতে তো বরাবরের মতই পারফর্ম করেছেন মেহেদি মিরাজ। ১৫ ম্যাচে মাত্র দুইবার কোন উইকেট পাননি তিনি; বাকি সব ম্যাচেই প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের চাপে রেখেছিলেন এই অফস্পিনার। বল হাতে ২৮ এর একটু বেশি গড় সেটির প্রমাণই দেয়।

সাদা পোশাকে অবশ্য মেহেদি হাসান মিরাজের ব্যাটিং সত্তা পুরোপুরি প্রকাশ পায়নি। তবে ঐতিহাসিক কিউই বধের ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৪৭ করে নিজের সামর্থ্য দেখিয়েছিলেন তিনি। আর বোলার মিরাজ তো ২০২২ সালে দেশের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক। মাত্র আট ম্যাচে ৩৩.২৩ গড়ে ৩১ উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন খুলনার এই ক্রিকেটার।

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ঠিক মানায় না মেহেদি মিরাজকে; ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে তাঁকে সুযোগ দেওয়া যাবে না এমন একটা অলিখিত নিয়ম ছিলই। সেখানেও শিকল ভেঙেছেন তিনি। ওপেনার হিসেবেই ফিরেছেন জাতীয় দলে; আহামরি কিছু করতে না পারলেও অন্তত আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন তিনি।

তড়িৎ-গতির ফিল্ডিং, ঠিক সময়ে ব্রেক থ্রু আর লোয়ার মিডল অর্ডারে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান – ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার হয়ে উঠেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। বোলিং, ফিল্ডিং তো আছেই; ব্যাটিংয়ের উন্নতির ধারা ধরতে রাখতে পারলে সাকিব আল হাসানের মতই বিশ্ব ক্রিকেটে দাপট দেখাতে পারবেন এই ডানহাতি।

বর্তমানে আইসিসির ওয়ানডে অলরাউন্ডার র‍্যাংকিংয়ে তিন নম্বরে আছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। মিরপুর টেস্টের পর সাকিব আল হাসান বলেছিলেন আগামী বছর আরো ভাল করবে বাংলাদেশ। দেশের সবচেয়ে বড় পোস্টার বয়ের এই বাসনাকে বাস্তবে রূপান্তর করার জন্য নিশ্চয়ই নিজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সকে আরো উপরে নিয়ে যেতে চাইবেন মিরাজ। তাঁর এই বাসনা পূর্ণ হলে লাভটা আসলে বাংলাদেশেরই হবে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...