ছিলেন ব্যাটিং অলরাউন্ডার। জাতীয় দলে এসে পুরোদস্তুর বোলার হয়ে গেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। একদিকে সাকিব আল হাসানের ছায়া, আরেকদিকে ব্যাটিংয়ের সুযোগ না পেলা; সবমিলিয়ে মিরাজ কিছুতেই অলরাউন্ডার হতে পারছিলেন না।
অবশেষে এই ২০২১ সালে ঘুরে দাড়ালেন। বছরের শুরুতেই তুলে নিলেন টেস্ট সেঞ্চুরি। এরপর আরও একটি ফিফটি পেয়েছেন। বছরের শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসেও ৩৮ রান করে অপরাজিত রইলেন। আরও দুটো ইনিংসে বোলিং এবং একটা ইনিংসে ব্যাট করতে পারার কথা তার এই বছরে। তার আগেই দেখা যাচ্ছে, এ বছরে টেস্টে বিশ্বের শীর্ষ তিন অলরাউন্ডারের একজন আমাদের মিরাজ।
ফেব্রুয়ারিতে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে বছরটা শুরু করেছিলেন মিরাজ। ওই টেস্টেই দুই ইনিংসে ৪টি করে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন। সেটা ছিলো অলরাউন্ডার মিরাজের প্রদর্শনী। এরপর বছর জুড়েই এটা ধরে রেখেছেন তিনি।
বছরের এই শেষ সময়ে এসে দেখা যাচ্ছে, এই বছরে আজ পর্যন্ত মিরাজের রান ২৯৪। আর চট্টগ্রাম টেস্টের আগ পর্যন্ত তার সংগ্রহ ২৩ উইকেট।
এই ২০২১ সালে ২০-এর বেশি উইকেট নিয়েছেন, এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান জেসন হোল্ডারের। তিনি ২১ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ৩৫৫ রান করেছেন এ বছর। এ ছাড়া ২০-এর বেশি উইকেট নিয়েছেন, এমন অলরাউন্ডারদের মধ্যে ২৫০-এর বেশি রান আছে আর রবিচন্দ্রণ অশ্বিনের। আজ পর্যন্ত অশ্বিন এই বছরে ৩৯ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ৩০৫ রান করেছেন।
ফলে অলরাউন্ডারশিপ বিচারে এ বছরের দ্বিতীয় সেরা জায়গাটা দিতে হবে মিরাজকে।
অবশ্য বিশ্ব ক্রিকেটে একই বছরে এরকম রান করা ও উইকেট নেওয়ার অজস্র উদাহরণ আছে। ইয়ান বোথাম ১৯৮২ সালে ৪৭ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি হাজারের উপরে রান করেছিলেন। বাংলাদেশেও মিরাজের চেয়ে ভালো উদাহরণ বেশ ক টি আছে।
ঠিক ধরেছেন, সেই কাজগুলো করেছেন সাকিব আল হাসান; যে কোনো ফরম্যাটে ইতিহাসের অলরাউন্ডারদের একজন।
সাকিব পাঁচটি পঞ্জিকাবর্ষে ৩০০-এর উপরে রান এবং ২৫-এর উপরে উইকেট নিয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৭ সালে ৬৬৫ রান করেন এবং ২৯ উইকেট নেন। মিরাজ নিজে ২০১৮ সালে ৪১ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ২৬২ রান করেছিলেন।
ফলে পরিসংখ্যানগুলো নতুন না হলেও মিরাজের জন্য এটা অন্য ধরণের এক পথচলা। কারণ এই বছরে তিনি টেস্টে একটা সেঞ্চুরি, একটা ফিফটি পেয়েছেন। আশা করা যায়, তিনি সাকিবের পথে চলা শুরু করবেন।
অন্তত এই বছরে আর ছয়টি রান করলেন ৩০০ রান আর ২০-এর বেশি উইকেটের মালিক হয়ে যাবেন। আমরা নিশ্চয়ই তখন মিরাজকে অলরাউন্ডারই বলে মানবো।
অলরাউন্ডার স্বীকৃতির বড় বিষয় হলো বোলিং ও ব্যাটিং গড়ের পার্থক্য। এটা যত কমবে, তত আপনি ভালো অলরাউন্ডার। এই বছরে যারা দুই শতাধিক রান ও দেড় শতাধিক উইকেট নিয়েছেন, তাদের সবাইকে বিবেচনায় নিলে মিরাজের গড়ের পার্থক্য সবচেয়ে কম: ৩.৯৬।
বুঝতেই পারছেন, অলরাউন্ডার তাঁকে বলা যায়।