গ্রেট অলরাউন্ডার যিনি টেস্ট খেলেননি

তাঁর বোলার হিসাবে আসল কৃতিত্ব হলো স্লোয়ার বলের উদ্ভাবন ও প্রয়োগ। পেস বোলিং এ আজ এই বলের প্রয়োগ যত্রতত্র। কিন্তু সে যুগে এ বল সেভাবে প্রয়োগ হতো না। সীমিত কয়েকজন ব্যবহার করলেও সর্বত্র ব্যবহার হতো না। তাঁর আসল অস্ত্র ছিলো স্লোয়ার ইয়ার্কার আর তীব্র গতির বাউন্সার। একদিনে স্লোয়ার ইয়ার্কারের সফল প্রয়োগকর্তা তিনিই। বলা যায় স্টিফেনসন এ বলকে যথার্থ শৈল্পিক রূপ দেন। সে দিক এখন আর আলোচিত হয় না।

ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় যে কত কাহিনী লুকিয়ে আছে তা কল্পনার বাইরে। আজকের গল্প অবশ্য খুব বেশিদিন আগের নয় বরং সাম্প্রতিক অতীতের।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস ব্যাটারির কথা আমরা সকলে জানি। সেখানে যে কত নামজাদা ফাস্ট বোলার এক সময়ে খেলেছেন তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু ১৯৭৫-১৯৯৪ পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস বোলিং লাইন আপের বাইরের রিজার্ভ বেঞ্চ এমনকি ঘরোয়া ক্রিকেটেও এমন সব খেলোয়াড় ছিলেন যে তাঁরা হাসতে হাসতে অন্য দেশের হয়ে নিয়মিত টেস্ট বা একদিনের ম্যাচ খেলতে পারতেন। কিন্তু দল তখন এমন ছিলো যে ফাস্ট বোলার হিসাবে প্রথম দলে সুযোগ পাওয়াই দুষ্কর ছিল।

আজ যাঁর কথা বলবো তিনি ফ্রাঙ্কলিন স্টিফেনসন। ওয়েস্ট ইণ্ডিজের সেরা ফাস্ট বোলিং অলরাউন্ডার মানা হয় তাঁকে। জোরে বলের এক সেরা প্রতিভা ছিলেন তিনি। তার সাথে ছিলেন মিডল বা লোয়ার অর্ডারের হার্ড হিটিং ব্যাটসম্যান।

১৯৭৮ সালে এই তরুণ প্রতিভা ইংল্যান্ডে বয়সভিত্তিক দলের হয়ে সফর করতে গিয়ে প্রথম নজরে আসেন। এরপর তিনি যোগ দেন অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়ায় প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায়। সাফল্য আসে। তারপর আসেন বার্বাডোজে নিজ দেশে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলতে। পরে ইংল্যান্ডে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে গ্লস্টারশায়ারের হয়ে খেলেন।

ইতোমধ্যে ১৯৮২-৮৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অ্যালভিন কালীচরণের দলের হয়ে সফর করার কারণে তিনি নির্বাসিত হন। দেশের হয়ে টেস্ট খেলার সুযোগ হারান অনেকের মতোই। এসময় তিনি অরেঞ্জ ফ্রি স্টেটের হয়ে খেলেন । তারপর নটিংহ্যামশায়ারের লিগে খেলতে থাকেন।

তাঁর বোলার হিসাবে আসল কৃতিত্ব হলো স্লোয়ার বলের উদ্ভাবন ও প্রয়োগ। পেস বোলিং এ আজ এই বলের প্রয়োগ যত্রতত্র। কিন্তু সে যুগে এ বল সেভাবে প্রয়োগ হতো না। সীমিত কয়েকজন ব্যবহার করলেও সর্বত্র ব্যবহার হতো না। তাঁর আসল অস্ত্র ছিলো স্লোয়ার ইয়ার্কার আর তীব্র গতির বাউন্সার। একদিনে স্লোয়ার ইয়ার্কারের সফল প্রয়োগকর্তা তিনিই। বলা যায় স্টিফেনসন এ বলকে যথার্থ শৈল্পিক রূপ দেন। সে দিক এখন আর আলোচিত হয় না।

১৯৮৮ সালে নটিংহ্যামশয়ারের হয়ে তিনি এক সিজিনে ১০০০ রান ও ১০০ উইকেট লাভের বিরল কৃতিত্ব অর্জন করেন। সেই মৌসুমেই ইয়র্কশায়ারের বিরুদ্ধে তিনি দুই ইনিংসে শতরান ও ম্যাচে ১১ উইকেট লাভের বিরলতম এক কৃতিত্ব অর্জনে সমর্থ হন। এ কৃতিত্ব ইতিহাসে বার্নাড বোসানকোয়েজ আর জিওফ হার্স্ট ছাড়া আর করোর নেই।

ওই মৌসুমে তিনি তিনবার ম্যাচে দশ উইকেট লাভ করেন। ২২ ম্যাচে ১০১৮ রান আর ১২৫ উইকেট নেন। একমাত্র নিউজিল্যান্ডের স্যার রিচার্ড হ্যাডলি ছাড়া ১৯৬৯ সাল এর পরবর্তীকালে এ কৃতিত্ব আর কারো নেই।

১৯৮৯ সালে তিনি উইজডেন ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার হন। ১৯৮৯ সালে নির্বাসনের নিষেধাজ্ঞা উঠলেও তাঁর আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলার সুযোগ আসেনি। ব্যাটে বলে কাউণ্টি ক্রিকেটে সাফল্যের ধারা তিনি বজায় রেখেছিলেন। ১৯৯৪ সালে সাসেক্স এর হয়ে তাঁর অতুলনীয় প্রদর্শন ছিলো।

১৯৯৫ সালে খেলার জগত থেকে সরে আসেন তিনি। আজও তাঁকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এক সেরা প্রতিভা মানা হয় যিনি আন্তর্জাতিকে অঙ্গনে খেলার সুযোগ পাননি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...