নিলামের ডামাডোলে চাপা!

খেলোয়াড় ধরে রাখার নিয়ম ছাড়াও আইপিল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এবারের দলগুলোর স্যালারী পার্সে থাকবে ৯০ কোটি রুপি করে। অর্থাৎ দলগুলো মোট ৯০০ কোটি রুপী নিয়ে মাঠে নামবে খেলোয়াড় ক্রয়ের উদ্দেশ্যে। তবে এত অর্থের ছড়াছড়ির মাঝেও এমন কিছু খেলোয়াড় রয়েছন যারা কিনা হয়ত পাবেন না আশানুরূপ অর্থকড়ি।

মেগা নিলাম নিয়ে হাজির হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষনীয় ফ্রাঞ্চাইজ ভিত্তিক ক্রিকেট লিগ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ(আইপিএল)। এবারের আসরে যেমন দলে সংখ্যা বেড়েছে। আগের আটিটি দলের সাথে এবার যুক্ত হবে আরো দুই ফ্রাঞ্চাইজির দল লখনৌ ও আহমেদা বাদ। এতে করে নিলামে অর্থের ছড়াছাড়ির সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

আগামী বছরের জানুয়ারিতেই বসতে চলেছে এই মেগা নিলাম। নিলামের আগে আইপিএল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে এবারের খেলোয়াড় ছাড়া কিংবা ধরে রাখার নিয়ম-কানুন। এবারের মৌসুমে প্রতিটি দল নিজেদের চারটি করে খেলোয়াড়কে নিজেদের শিবিরে রেখে বাকিদের ছেড়ে দিতে পারবে। এক্ষেত্রে দু’জন করে দেশী ও বিদেশী কিংবা একজন বিদেশী খেলোয়াড় রাখতে পারবে দলগুলো। নতুন দলগুলোর জন্যে বলবৎ হবে দ্বিতীয় নিয়ম।

খেলোয়াড় ধরে রাখার নিয়ম ছাড়াও আইপিল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এবারের দলগুলোর স্যালারী পার্সে থাকবে ৯০ কোটি রুপি করে। অর্থাৎ দলগুলো মোট ৯০০ কোটি রুপী নিয়ে মাঠে নামবে খেলোয়াড় ক্রয়ের উদ্দেশ্যে। তবে এত অর্থের ছড়াছড়ির মাঝেও এমন কিছু খেলোয়াড় রয়েছন যারা কিনা হয়ত পাবেন না আশানুরূপ অর্থকড়ি। এবারের তালিকা তেমন পাঁচজন খেলোয়াড়কে নিয়েই গড়া।

  • ক্রিস গেইল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) 

সদ্য সমাপ্ত হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কিংবা আইপিএলের ত্রোয়দশতম আসরের পারফর্ম বিবেচনায় হয়ত কোন সাধারণ মানে খেলোয়াড় হলে দলই পেতেন না ক্রিস গেইল। কেননা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পাঁচ ম্যাচে তিনি রান করেছেন মাত্র ৪৫টি অপরদিকে আইপিএলের সম্প্রতি শেষ হওয়া আসরে তিনি প্রায় ১২৫ এর কাছাকাছি স্ট্রাইকরেটে ১০ ম্যাচে রান করছেন ১৯৩।

কিন্তু যেহেতু তিনি ‘ইউনিভার্স বস’ এবং নিজের দিনে কি পরিমাণ ভয়ঙ্কর হতে পারেন তিনি তা হয়ত সকলেরই জানা, তাছাড়া ১২টি আসরে ১৪৮.৯৬ স্ট্রাইকরেটে করা ৪৯৬৫ রানের আইপিএল ইনিংস তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিং এর স্বপক্ষেই কথা বলে।

তাই হয়ত দল এবারেও পেয়ে যাবে ক্যারিবিয়ান এই ব্যাটিং দানব। কিন্তু বয়স এবং সাম্প্রতিক পারফর্মেন্স বিবেচনায় তিনি হয়ত নিলামে শোরগোল ফেলে দেওয়ার মতো পারিশ্রমিক পাবেন না এবারের আইপিএলে। যদিও তিনি আবুধাবি টি-টেন লিগে ২৩ বলে ৪৯ রানের অপরাজিত এক ইনিংস খেলে এখন নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ ঠিকই রেখে যাচ্ছেন।

  • সুরেশ রায়না (ভারত)

ভারত জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার সুরেশ রায়না ২০২১ সালেও ছিলেন চেন্নাই সুপার কিংস শিবিরে। এবছরের আইপিএলের শিরোপা উঠেছে তাঁদের ঘরেই। তবুও দলের এই শিরোপা জয়ে রাইনার অবদান নজরকাড়া নয়। তিনি মাত্র ১৬০ রান তুলতে সক্ষম হয়েছেন তিনি, নিজের খেলা ১২ ম্যাচ থেকে। স্ট্রাইক রেট ছিল ১২৫।

এই ১২ ম্যাচের মধ্যে একটি মাত্র ম্যাচে রায়নার ব্যাট হেসেছিল এবারের আসরে। চেন্নাইয়ের প্রথম ম্যাচে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ৩৬ বলে ৫৪ রানের ইনিংসটাই এবারের আসরের তাঁর করা সেরা ব্যাটিং প্রদর্শন। তাছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার পর তাঁর শর্ট বলের দূর্বলতা যেন আরো স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে সকলের সামনে।

তাঁর দূর্বলতা এবং অফ ফর্মের পাশাপাশি তাঁর বয়সও একটা চিন্তার বিষয়। এই বছরেই ৩৫ এ পা রাখছেন রাইনা। এতগুলো নেগেটিভ দিক নিয়ে তিনি যদি প্রত্যাশা করেন এবারের আসরে একটা বিশাল অঙ্কের পারিশ্রমিক তিনি পেতে চলেছেন তাহলে নির্ঘাত তিনি ‘বোকার স্বর্গ’-এ বাস করছেন। হয়ত তিনিও জানেন এবার হয়ত তাঁর কপালে জুটবে না কারিকারি অর্থ।

  • স্টিভেন স্মিথ (অস্ট্রেলিয়া)

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথেরও এবারের আইপিএল যাত্রা খুব একটা সুখকর হয়নি। তিনি আইপিএলের ২০২১ আসরে প্রতিনিধিত্ব করেছেন দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে। আট ম্যাচে ১৫২ রান তুলতে সক্ষম হয়েছেন স্মিথ। কিন্তু স্ট্রাইক রেটটা ঠিক মানানসই নয়। ১১২ এর একটু বেশি। এমন স্ট্রাইকরেটে একজন বিদেশি খেলোয়াড় খেলাতে হয়ত অনেক ফ্রাঞ্চাইজিই চাইবেন না। কেননা একাদশে বিদেশি খেলোয়াড়দের কোটা সীমিত।

অবশ্য ২০২০ আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে মোটামুটি ভাল সময়ই পার করেছিলেন স্মিথ। প্রায় ১৩১ এর স্ট্রাইকরেটে ৩১১ রান সংগ্রহ করেছিলেন তিনি ১৪ ম্যাচ থেকে। কিন্তু তাঁর ব্যাটিং স্ট্রাইল নিসঃন্দেহে ফ্রাঞ্চাইজিদের নিরুৎসাহিত করবে স্মিথের পেছনে খুব বেশি অর্থ ব্যয়ে। তিনি খুব ধীরেসুস্থে নিজের ব্যাটিংটা গুছিয়ে খেলতে পছন্দ করেন। মারকাটারি ব্যাটিং এর দেখা মেলেনি কখনো স্মিথের কাছ থেকে। তাছাড়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তিনি ছিলেন অনুজ্জ্বল।

  • আজিঙ্কা রাহানে (ভারত)

এমন এক সময় ছিল যখন ভারতের টেস্ট দলের সহ-অধিনায়ক আজিঙ্কা রাহানেকে ছিলেন আইপিএলের ফ্রাঞ্চাইজিদের পছন্দের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা একজন খেলোয়াড়। তিনি তাঁর ব্যাটিং প্রদর্শন দিয়ে প্রমাণও করেছেন কেন তিনি ছিলেন পছন্দ তালিকায়।

২০১২ ও ২০১৫ আইপিএল আসরে তিনি যথাক্রমে রান করেছিলেন ৫৬০ ও ৫৪০। ২০১৩, ১৪ ও ১৬ তে তাঁর রান সংখ্যা ছিল পাঁচ শত থেকে খানিক কম। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে জাতীয় দলে তিনি অনিয়মিত হলেও আইপিএলে ছিলেন ম্যাচ জেতানোর কারিগর।

কিন্তু সেসব দিন হয়েছে গত। টি-টোয়েন্টিতে তো বটেই তিনি নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন সাদা পোষাকের ক্রিকেটেও। দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে রাহানের ক্রিকেট ক্যারিয়ার। গত দুই মৌসুমের আইপিএলে তিনি ছিলেন নিষ্প্রভ ২০২০ এ দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে রান করছেন মাত্র ১১৩টি। স্ট্রাইকরেট ১০৬.৬০। সেই ১১৩ এর মধ্যে ৬০ রান এসেছিল একটি মাত্র ইনিংস থেকে। ২০২১ বলার মতো নেই কিছুই। তাই তাঁর পেছনে ফ্রাঞ্চাইজিরা অর্থ খরচে হতে পারেন কৃপণ তা বলাই যায়।

  • হরভজন সিং (ভারত) 

অভিজ্ঞ হরভজন সিং ২০২১ মৌসুমের আইপিএলে কোলকাতা নাইট রাইডার্স শিবিরে ছিলেন। রীতিমত সবাইকে অবাক করে দিয়েই তাঁকে দলে ভেড়ায় কোলকাতা। এবারের আইপিএলের প্রথম ভাগে তিন ম্যাচ খেলে ছিলেন উইকেটশূন্য রান দিয়েছেন নয়ের ইকোনমি রেটে। দ্বিতীয় ভাগে একাদশের জায়গা হারান নবাগত বরুণ চক্রবর্তীর কাছে।

কিন্তু ৪১ বছর বয়সী স্পিন বোলার হরভজন সিং একজন অভিজ্ঞ ক্যাম্পেইনার। তাছাড়া তিনি রয়েছেন আইপিএলে উইকেট শিকারিদের তালিকার উপরের দিকেই। তাঁর ঝুলিতে রয়ছে ১৫০ উইকেট। ১৬৩ ম্যাচে ৭.০৭ ইকোনমি রেটে তিনি এই রেকর্ড সংখ্যক উইকেট নিজের নামে করে নিয়েছেন।

তবে তারুণ্যের আলোক ঝলকানিতে তাঁর মত অভিজ্ঞ কিন্তু বয়স্ক খেলোয়াড়দের দলে ভেড়াতে হয় বেশ হিসেব-নিকেশ কষবেন ফ্রাঞ্চাইজিগুলো। সুতরাং হরভজন সিং যে খুব বেশি পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না এবারের আসরে তা নির্দ্বিধায় বলাই যায়। এমনও হতে পারে তিনি নাও পেতে পারেন দল।

অভিজ্ঞতার বিচারে এই পাঁচজন খেলোয়াড় সংয়সম্পূর্ণ। তবুও অভিজ্ঞতার থেকেও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সবাই প্রত্যাশা করে তুলকালাম ব্যাটিং তাণ্ডব ও টপাটপ উইকেট শিকারের। তো এমতবস্থান এই পাঁচ জনের আইপিএল ভাগ্যের একটা চিত্র পাওয়া যেতে পারে ২০২২ এর জানুয়ারিতে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...