পাকিস্তান ক্রিকেটের ‘গোল্ডেন বয়’ ফিক্সিং কান্ডে জড়িয়ে পড়েছে – এমন খবর নাড়িয়ে দিয়েছিল পুরো দেশকে। মোহাম্মদ আমিরকে যে সময় ভাবা হত দেশের ভবিষ্যৎ, সেসময় তাঁর নিজের ভবিষ্যৎ আটকা পড়েছিল কারাগারে। তবু কেউ কেউ সব প্রতিকূলতা সরিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল তাঁকে নিয়ে, স্বপ্ন দেখেছিল তাঁকে আবার মাঠে দেখার।
আমির সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন, পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আবার ফিরেছিলেন বাইশ গজে। এরপর অবশ্য আরো জল গড়িয়েছে। ৩২ বছর বয়সে তাঁকে আরও একটি প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখতে হয়েছে, চার বছর আগে নেয়া অবসর ভেঙে এখন বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।
এই পেসারকে নিয়ে যারা সবচেয়ে বেশি আশাবাদী তাঁদেরই একজন তাঁর ছোটবেলার কোচ আসিফ বাজওয়া। সাজা কাটিয়ে আমিরের ক্রিকেটে ফেরার পুরোটা সময় পাশে ছিলেন তিনি, নিজের পকেটের টাকা খরচ করে তাঁর অনুশীলনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
আসিফের পরিশ্রম বৃথা যায়নি, নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হতেই পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) এই বাঁ-হাতিকে সুযোগ দিয়েছিল দলে ফেরার। কিন্তু সেসময় হাফিজ, আজহারের মত কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার তাঁকে মেনে নিতে পারেননি। যদিও সব বাঁধা ডিঙিয়ে একাদশে জায়গা করে নেন তিনি।
তবু এই তারকার দুর্দিন শেষ হয়নি, কখনও কোচের সাথে ঝামেলা হয়েছে কখনও আবার টিম ম্যানেজম্যান্টের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি। যৌক্তিক কারণও ছিল, ম্যাচের পর ম্যাচ তাঁকে টানা খেলানো হয়েছিল। ওয়ার্কলোড ম্যানেজ করতে টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন, তখন আবার বলা হয়েছে টেস্টে না খেললে জাতীয় দলে খেলতে পারবেন না।
এক রকম ক্ষুব্ধ হয়েই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারকে বিদায় বলে দিয়েছিলেন আমির। তাতেও বিতর্ক ছাড়েনি তাঁকে, বাবর আজমের সঙ্গে তাঁর কাল্পনিক বিবাদকে ঘিরে কত কত আলোচনা চলেছে। আর এই দু:সময়ে আসিফ বাজওয়া ছায়া হয়ে ছিলেন তাঁর পাশে; তিনি দেখেছেন তাঁর শিষ্য কিভাবে লড়াই করে যাচ্ছে অদৃশ্য শক্তির সাথে, সেই সাথে নিজেও সর্বোচ্চ সহায়তা করেছেন।
চলতি শতাব্দীতে পাকিস্তানের দুইটি স্মরণীয় ম্যাচ ২০০৯ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল আর ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল – দুই বারই মোহাম্মদ আমির নিজ হাতে ম্যাচের ভাগ্য লিখে দিয়েছিলেন। ফিনিক্স পাখির মত বারবার ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসা এই তারকা এবারও তেমন কিছু করবেন?