জীবনের শেষে স্বপ্নের শুরু

২০১৭ সালের কথা। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) নিলামের সময় খুব হৈচৈ হল। কোথাকার কোন মোহাম্মদ সিরাজকে দুই কোটি ষাট লাখ রুপি দিয়ে কিনেছে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। অথচ, ভিত্তিমূল্য ছিল মাত্র ২০ লাখ রুপি। ছেলেটার বাবা চালায় অটো রিকশা। অনেক সংগ্রাম করে বড় হয়েছেন। শূণ্য থেকে বৃহৎ হওয়ার অনবদ্য এক গল্প ছাপা হয়েছিল অসংখ্য গণমাধ্যমে।

সিরাজ সেসময় বলেছিল, ‘বাবাকে এই বয়সে আর রিকশা চালাতে হবে না।’ কণ্ঠে ছিল বিরাট এক তৃপ্তি, সারাজীবন সংগ্রামের স্বস্তি।

সিরাজের বাবা হলেন মোহাম্মদ গাউস। তিনিই সংসারকে টেনে নিয়ে গেছেন। হাসিমুখে পরিশ্রম করে কেবল পরিবারের মুখে অন্নই যোটাননি। এমন বাবাদের ছেলের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নকে বিলাসিতা মনে হয়। মোহাম্মদ গাউস তেমন ছিলেন না।

ছেলে হতে চায় পেসার। তার জুতোয় লাগবে দামী স্পাইক। যে করেই হোক, তার অর্থ ঠিকই যোগার করে এনেছেন গাউস। ছেলেও তার প্রতিদান দিয়েছে।

আইপিএলে সুযোগ পেয়ে সিরাজ বলেছিলেন, ‘বাবা আমাদের পরিবারের সবার খরচ বহন করতে সারাজীবন অনেক কষ্ট করেছেন। আমার বয়স এখন ২৩। আমি এখন পরিবার সামলাতে পারবো। বাবাকে বলে দিয়েছি, এখন আরাম করো। আরো বলেছি, একটা বাড়ি বানিয়ে দেবো হায়দ্রাবাদে।’

বাড়ি ঠিকই বানিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু বাড়িতে থাকার মানুষটি আর নেই। জীবন নদীর ওপারে চলে গেছেন মোহাম্মদ গাউস। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে। মাত্রই তো ছেলেটা জাতীয় দলে খেলতে শুরু করলো, কিসের এত তাড়া!

ভারতীয় দল এখন অস্ট্রেলিয়ায়। টেস্ট খেলতে সিরাজ এখন ডাউন আন্ডারে। আছেন জৈব সুরক্ষা বলয়ে। বাবাকে শেষবারের মত দেখতে পাবেন না। ভারতের জার্সি গায়ে তোলার স্বপ্নটা পূরণ করবেন বাবাকে হারানোর শোক বুকে চাপা দিয়ে।

আইপিএল চলার মাঝপথেই শুনেছিলেন বাবার অসুস্থতার কথা। আরব আমিরাতে বসে জানতে পারলেন বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেই বিরাট টেনশনের মধ্যেও তিনি পারফরম করে গেছেন, বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য। সীমিত ওভারে অভিষেক আগেই হয়েছে। এবার সাদা পোশাকের দুয়ারটাও খোলা। হবে বাবার চূড়ান্ত স্বপ্নপূরণ, সিরাজ তাই ফিরবেন না, শেষবারের মত দেখবেন না বাবাকে।

কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে চার ওভারে মাত্র আট রান দিয়ে নেন তিন উইকেট। এর মধ্যে দু’টি ছিল মেইডেন ওভার। পাওয়ার প্লে’র প্রথম ছয় ওভারেই করেছিলেন তিন ওভার। তাতে রান দিয়েছেন মাত্র তিনটি। আজকের ব্যাটিং উইকেটের যুগে রীতিমত অবিশ্বাস্য এক ফিগার।

বাবা হাসপাতালে শুয়ে পত্রিকা পড়তেন। ছেলেকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘সবগুলো খবরের কাগজে তোমার ছবি ছাপা হয়েছে।’

আজ আবারো শুধু ভারত নয়, বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মাধ্যমে থাকবেন সিরাজ। কিন্তু, খবরের বিষয় তিনি নন, তাঁর বাবা। কিন্তু, খবরগুলো পড়ার জন্য সেই মানুষটি নেই।

আহারে জীবন!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link