কাটার মাস্টার! নামটা শুনলেই হাল্কা গড়নের, শ্যামলা বর্ণের যে চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে তা হল মুস্তাফিজুর রহমান। একটা সময় ছিল যখন ইকোনমিক বোলিং মানেই দা ফিজ! মুস্তাফিজের হাতে বল মানেই ব্যাটারদের অসহায়ত্ত্ব। তবে সময় বদলেছে , সেই সাথে বদলেছে মুস্তাফিজের কাটারের ধার। ফিজের ঝুলিতে এখন টুকটাক উইকেটের সাথে আসে এক গাদা রান।
আইপিএলে একটা ইয়র্কার ঠেকাতে গিয়ে আন্দ্রে রাসেলের মাটিতে লুটিয়ে পড়ার দৃশ্য নিশ্চয়ই ভুলে যাওয়ার নয়। ভারতের সাথে দূর্ধর্ষ মুস্তাফিজ এখন কেবলই স্মৃতি। যার কাটারে একের পর এক আটকা পড়েছিলেন রোহিত, রাহানে, রায়না , অশ্বিন, জাদেজার মত ব্যাটাররা।
পাকিস্তানের বিপক্ষে মুস্তাফিজের টি-টুয়েন্টি অভিষেক ম্যাচের বোলিং ফিগারটাও ছিল মনে রাখার মত, ৪-০-২০-২। প্রথম স্পেলে ২ ওভারে দিয়েছিলেন মাত্র ৫ রান! শেষ ওভারেও ধরে রেখেছিলেন সেই ধারাবাহিকতা। পরবর্তীতে দেশের হয়ে কিংবা ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে, প্রতিবারই আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন এই কাটার মাস্টার।
হারতে থাকা ম্যাচগুলোতে দলের অধিনায়ক যখন তার হাতে বল তুলে দিয়েছেন তখনই তার মিতব্যয়ী বোলিং দিয়ে দলকে জিতিয়েছেন। তবে সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোর পরিসংখ্যান বলে ভিন্ন কথা।সর্বশেষ ৫ ম্যাচের মুস্তাফিজের বোলিং ফিগার দেখে চোখ কপালে উঠার মত।
সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) এবং চলমান বাংলাদেশ- শ্রীলঙ্কা সিরিজ মিলিয়ে সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচে মুস্তাফিজের বোলিং ফিগার যথাক্রমে ১/৪২, ০/৪২, ২/৩১, ১/২৮, ২/৪৬। বর্তমানে নিজেকে ঠিকঠাক মেলে ধরতে পারছেন না মুস্তাফিজ। ধারাবাহিকতা হারাচ্ছেন বারংবার।
ফিজের ক্যারিয়ারে অন্যতম বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ইনজুরি। চোটের কারণে বেশ কয়েক দফা হাসপাতালের বিছানাতেই বিশ্রাম করে কেটেছে। তার বোলিং এর এই দুরবস্থার জন্য শুধু মাত্র কাটারেই ভরসাও কম দায়ী নয়। তাছাড়া মুস্তাফিজ অনেক বেশি স্লোয়ার বলের উপর নির্ভরশীল।
ব্যাটারদের কাছে এখন আর তিনি দূর্বোধ্য নন। ঠিক সে কারণেই বেশ দেখে শুনে তার বলে খেলতে পারেন ব্যাটাররা। যা তার নামের পাশে যুক্ত করছে বিশাল সব রান। বোলার হিসেবে তা বড্ড বেমানান। মুস্তাফিজ এখনও বাংলাদেশের আস্থার জায়গা। ঠিক সে কারণেই জেগেছে শঙ্কা।
এ বছরের জুনে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে বসতে চলেছে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসর। বরাবরের মতই টি-টোয়েন্টিতে মিতব্যয়ী বোলারদের কদর সবচেয়ে বেশি। তাই মুস্তাফিজের প্রতি একটু বাড়তি প্রত্যাশা থাকে সকলের। তাছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের টু-পেসড উইকেটে মুস্তাফিজ হতে পারেন তুরুপের তাস।
কিন্তু তার বর্তমান ফর্ম ভীষণ চিন্তার কারণ। মুস্তাফিজের ফিরে আসা তাই ভীষণ প্রয়োজন। সে কারণেই টিম ম্যানেজমেন্টের বাড়তি নজর দেওয়া উচিত তার উপর। নতুবা আরও একটি বিশ্বকাপে, বাংলাদেশের ভরাডুবি হতে পারে সুনিশ্চিত।