ব্যাট হাতে অসাধারণ এক ইনিংস। তার ফলে ভারতকে নিশ্চিত হার থেক জয়ের তীরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি যে কোহলির নিজেরই বিশ্বাস হতে চাইবে না তাই স্বাভাবিক। ম্যাচ শেষে যখন ম্যাচসেরার পুরষ্কার নিতে এলেন, কিছুটা আবেগ-উচ্ছ্বাসের মিশেলে যেন বিভ্রান্তই ছিলেন। হয়তো বিশ্বাস করতে পারছিলেন না নিজেকে। তখন বললেন, ‘আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি’। অবশ্য এমন একটি দুর্দান্ত পারফর্মেন্স হজম হতে একটু সময় লাগবে তাই স্বাভাবিক।’
তবে এটি যে বিরাটের ক্যারিয়ার সেরা টি-টোয়েন্টি ইনিংস একথা বিরাটও অকপটে স্বীকার করতে বাধ্য হবেন। মোহালির সেই ৮২ রানের ইনিংসটি অসাধারণ হলেও অন্তত তাৎপর্য ও গুরুত্বের বিবেচনায় সেই মোহালির ইনিংস থেকেও এগিয়ে থাকবে পাকিস্তানের বিপক্ষে আজকের ইনিংসটি।
৫২ বলে ৮২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। কিন্তু এই ইনিংসটির মর্ম যেন পরিসংখ্যানেরও উর্ধ্বে। একেবারে প্রায় হারতে বসা একটা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে কিভাবে জয় ছিনিয়ে আনতে হয় প্রতিপক্ষের ডেরা থেকে, সেটি শেখালেন বিরাট কোহলি।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে সে কি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই! এই মুহূর্তে মনে হয় এই বুঝি পাকিস্তান জিতবে, পর মুহুর্তেই আবার চিন্তাটা ভারতের দিকে যায়। একেবারে শেষ বল অব্দি ম্যাচের উত্তেজনাটা বজায় ছিল। নিঃসন্দেহে এই ম্যাচটি ভারত-পাকিস্তানের লড়াইয়ের ইতিহাসে আপন মাহাত্ম্যে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।
মেন ইন ব্লু-রা যখন চার উইকেটে ৩১ রানের অবস্থানে ছিল, যখন ভারতের সম্ভাব্য পরাজয়ের আশঙ্কায় ভারত ভক্তদের ভেতরটা ধুকপুক করছিলো, ঠিক তখন মঞ্চে আবির্ভাব ঘটল বিরাট কোহলির। কোটি কোটি উৎসুক জনটার মনে তখন একটাই প্রশ্ন, কোহলি পারবেন তো? হ্যাঁ, কোহলি ঠিকই পেরেছেন। পেরেছেন বললে ভুল হবে, বরং বলা উচিত জীবনের সেরা ইনিংসটাই উপহার দিতে পেরেছেন ভক্তদের।
পঞ্চম উইকেটে তিনি হার্দিক পান্ডিয়ার সাথে ১১৩ রানের জুটিটা বিশ্বব্যাপী ভক্তদের আশাজাগানিয়া গান শোনাচ্ছিলো যেন। কোহলি শক্ত হাতে, ঠাণ্ডা মস্তিষ্কে খেলে গেলেন ম্যাচের শেষ অবধি। দল জেতার পর তবেই বীরদর্পে মাঠ ছাড়লেন। ম্যাচ শেষে নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে কোহলি বলেন, ‘এটা প্রথমে অসম্ভব বলে মনে হচ্ছিল, কিন্তু তারপর হার্দিক আমাকে উৎসাহ দিতে থাকে। এরপর আমরা কিছুটা চাপ নিয়ে কেবল খেলে যাচ্ছিলাম।’
রউফের বিরুদ্ধে দুটি ছক্কা মারার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সহজাতভাবে আমি বলটি দেখেছিলাম এবং নিজেকে বলেছিলাম শুধু স্থির থাকতে। লং–অনে একটি অপ্রত্যাশিত ছিল। এটি একটি ব্যাক অব লেন্থ স্লোয়ার বল ছিল। এবং পরেরটি, আমি শুধু আমার ব্যাটটি সুইং করেছিলাম। এবং বলটি পায়ের উপর দিয়ে উড়ে গেল। এখন এখানে দাঁড়িয়ে, আমার মনে হচ্ছে এটি হওয়ার কথা ছিল। তবে এটি খুব, খুব বিশেষ মুহূর্ত।’
নিজের সেরা ইনিংস নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে কোহলি বলেন, ‘আজ পর্যন্ত আমি সবসময় বলেছি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মোহালিতে আমার সেরা ইনিংস ছিল। তখন আমি ৫২ (আদতে ৫১) বলে ৮২ করেছিলাম। আজ আমি ৫৩ বলে ৮২ রান পেয়েছি। যদিও একই রকমের ইনিংস, কিন্তু আমি মনে করি আজকে আমি এটিকে এগিয়ে রাখব। কারণ এই খেলার গুরুত্ব এবং পরিস্থিতি অন্যরকম ছিল।’
দীর্ঘদিন অফফর্ম কাটানোর পর নিজেকে যেন আরও ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে ফিরেছেন কোহলি। নিজেকে নিয়ে যেতে চাইছেন আরও সুউচ্চ অবস্থানে, যেখানে তাঁকে কেউ ছুঁতে পারবে না। কেবল তিনি সবার কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় আপন মহিমায় জ্বলজ্বল করবেন। আফটার অল ‘ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা’ হওয়ার দৌড়ে আছেন তিনি।