মিয়াঁদাদ হয়ে পাকিস্তানের শারজাহ-প্রত্যাবর্তন

অস্ট্রালশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচ। মরুর বুকে সে ম্যাচ নিয়ে উত্তাপের অন্ত নেই। এর উপর ফাইনালটা যখন ভারত-পাকিস্তান মধ্যকার, শারজার মাটিতে যেন সেদিন আগুনের ফুলকি নেমে আসলো। সেটির তীব্রতা আরো বেড়ে গেল যখন ম্যাচের শেষ বলে পাকিস্তানের ৪ রানের দরকার পড়ে।

‘ডু অর ডাই সিচুয়েশন’ – এমন পরিস্থিতিতে যে কেউ ম্যাচ জিততে পারে। চেতন শর্মার শেষ বলটিতে তাই জাভেদ মিয়াঁদাদকে একটি বাউন্ডারি মারতেই হতো। একে তো ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল ম্যাচ। তার উপর ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হতে যাচ্ছে ম্যাচেরই শেষ বলে। পাহাড়সহ এক চাপ।

এমন অবস্থায় চেতন শর্মার করা পরের বলটিতে জাভেদ মিয়াঁদাদ সজোরে ব্যাট চালালেন। এবং ছয়! কমেন্ট্রি বক্সে সাথে সাথেই ভেসে উঠলো, ‘দিস ইজ সিক্স এন্ড পাকিস্তান হ্যাভ ওন। আনবিলিভেবল ভিক্টোরি বাই পাকিস্তান এন্ড জাভেদ মিয়াঁদাদ হিরো অব দ্য মোমেন্ট।’ পাকিস্তান ফাইনাল ম্যাচটি জিতে নিল ১ উইকেটে। একই সাথে অস্ট্রলশিয়া কাপের শিরোপা গেল পাকিস্তানের ঘরে।

বহু বছর বাদে সেই শারজাতেই জাভেদ মিয়াঁদাদের স্মৃতি ফিরিয়ে আনলো নাসিম শাহ। পার্থক্য বলতে শুধু, সে ম্যাচটি ছিল ফাইনাল আর এ ম্যাচটি ছিলে ফাইনালে ওঠার ম্যাচ। তাছাড়া মাঠ, মুহূর্ত,উত্তেজনা- সব কিছুতেই যেন সাদৃশ্য। শেষ ওভারে ১১ রানের সমীকরণে ফজল হক ফারুকির প্রথম ২ বলেই বাউন্ডারি ছাড়া করে পাকিস্তানের নায়ক বনে গেলেন নাসিম শাহ।

প্রায় ডুবতে থাকা একটা দলকে নাবিক ভূমিকায় তীরে এনে বাঁচালেন। যেমনটি করে ১৯৮৬ সালে ভারতের বিপক্ষে করেছিলেন জাভেদ মিয়াঁদাদ। আর নাসিম শাহ তরীতে চেপে পাকিস্তানের জয়ে এ দিনের উন্মত্ত গ্যালারির দৃশ্যও ছিল তিন যুগ আগের সেই ফাইনাল ম্যাচের মতোই।

তবে সে দৃশ্যের আগে জাভেদ মিয়াঁদাদের আরো একটি কাণ্ড যেন স্মৃতি হাতড়ে বেরিয়ে আসলো। ম্যাচের ১৯ তম ওভারের চতুর্থ বলে আফগান পেসার ফরিদের বলে ছক্কা মারেন আসিফ আলী। দলের শেষ ভরসা হিসেবে তিনিই তখন পর্যন্ত টিকে ছিলেন। কিন্তু পরের বলেই শর্ট ফাইন লেগে দেন ক্যাচ। পাকিস্তানের শেষ ভরসাকে আউট করায় একটু উগ্র উদযাপনই করে ফেলেন ফরিদ। আর এতেই বাঁধে বাগবিতণ্ডা।

এর মাধ্যমেই ফিরে এসেছিল মিয়াঁদাদের স্মৃতি। ফিরে এসেছিল ১৯৮১ সালের পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া পার্থ টেস্ট। যখন অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার ডেনিস লিলিকে ব্যাট উঁচিয়ে মারতে গিয়েছিলেন মিয়াঁদাদ। এদিন শারজায় আসিফ আলীও ব্যাট তুলেছিলেন ফরিদ আহমেদকে মারতে।

একটি ম্যাচ। একটি জয়। সাথে জাভেদ মিয়াঁদাদের দুই স্মৃতি। তবে প্রথমটির জন্য মিয়াঁদাদ যেমন প্রশংসা কুঁড়িয়েছিলেন, দ্বিতীয়টির জন্য পেয়েছিলেন সমান নিন্দা। বব সিম্পসন তো বলেই দিয়েছিলেন, তাঁর দেখা মাঠের মধ্যে সবচেয়ে ডিসগ্রেসফুল ঘটনা ছিল এটি।

এখন আসিফ আলীর তেড়েফুঁড়ে এসে ব্যাট উঁচিয়ে ধরার ঘটনাটা ম্যাচজয়ের আড়ালে চলে যাবে কিনা সেটিই দেখার বিষয়। তবে একটা ডিমেরিট পয়েন্ট যে আসিফ আলী পেতে যাচ্ছেন সেটি এক প্রকার নিশ্চিতই।

বাইশ গজের ক্রিকেটটা বোধহয় এমনই। যুগ যুগান্তর আগের ঘটনা জোর করে স্মৃতির ফ্রেমে বেঁধে রাখা লাগে না। ক্রিকেট মাঠেই যেন প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে সেটা ফিরে আসে। এই যেমন শারজার মাটিতে ফিরে এলেন জাভেদ মিয়াঁদাদ।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link