সবার অংক মেলে, আমার অংক মেলে না

আমও গেল ছালাও গেল – প্রবাদটার সাথেই নিশ্চয়ই পরিচয় রয়েছে। বাঙালি হয়ে এই প্রবাদের সাথে পরিচয় না থাকাটা বেমামান। বাংলার এই প্রবাদের মতো পরিস্থিতির সম্মুখীন এক আফগান। শুধুমাত্র একজন আফগান বললে অবশ্য তাঁর পরিচয়টা ঠিক বলা হয়ে ওঠে না। তিনি একজন আফগানিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়। নাম তাঁর নাভিন উল হক।

নাভিন-উল হক বেশ প্রসিদ্ধ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। এই ফরম্যাটটায় তাঁর খেলা ম্যাচের সংখ্যা তুলনামূলক অনেকটাই বেশি। এই ফরম্যাটে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছন ১৩টি। তবে তা ছাড়া তাঁর খেলা মোট টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সংখ্যা ৯৩টি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ১৮ উইকেটের বিপরীতে ১০৯টি উইকেট রয়েছে তাঁর নামের পাশে।

দেশ বিদেশের ফ্রাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতেও খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, লংকান প্রিমিয়ার লিগের মতো ফ্রাঞ্চাইজি লিগগুলোতে খেলেছেন নাভিন। এ সব কিছুই ইতিবাচক বিষয়। হয়ত প্রশ্ন আসতে পারে তাঁর আমছালা সব যাওয়ার সম্পর্ক কি। আচ্ছা তবে আসল ঘটনায় ফিরি।

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তাঁর অভিজ্ঞতা এবং পারফর্মেন্সের বদৌলতেই নাভিনের ডাক এসেছিলো বিশ্বে চলমান সব ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক টুর্নামেন্টের মধ্যে অন্যতম সাড়া ফেলানো টুর্নামেন্ট পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) থেকে। তাঁকে দলে নিতে চেয়েছিলেন কোয়েট্টা গ্ল্যাডিয়েটর্স। সবকিছুই মোটামুটি ঠিকঠাক ছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই নাভিন-উল হকের ম্যানেজার মারফত খবর এলো তিনি খেলবেন না পিএসএলে।

এর পেছনে ব্যক্তিগত কারণই দেখিয়েছেন তাঁর ম্যানেজার। কিন্তু পরক্ষণেই ঘোষণা এলো নাভিন-উল হক খেলবেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। তাঁকে দলে নিয়েছে খুলনা টাইগার্স। তিনি খেলতেও এলেন বিপিএল। তবে এক ফ্রাঞ্চাইজি লিগ বাদ দিয়ে অন্য আরেকটি লিগ খেলায় বেশ একটা প্রশ্ন উঠেছিলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে।

নাভিনের এমন সিদ্ধান্তের পেছনে দু’টি ভিন্ন কারণ দাঁড় করানো যায়। প্রথম কারণটা সহজ সরল। অর্থচুক্তির একটা তারতম্য ছিলো। আরেকটি কারণ আরো সরল। বিপিএল পরবর্তী সময়ে আফগানিস্তান পূর্ণ এক সাদা বলের সিরিজ খেলতে চলেছে বাংলাদেশের মাটিতে। সেই চিন্তা মাথায় এনেই হয়ত তিনি কন্ডিশন বুঝতে খেলতে চেয়েছিলেন বিপিএল। সে নিতান্তই এক দেশপ্রেমিকের কাজ অথবা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে গুরুত্ব দেওয়া।

কিন্তু আফসোস এবারের বিপিএলটা ঠিক মন মতো হলো না তাঁর। কন্ডিশন যেন ঠিক এক গোলকধাঁধা হয়ে রইলো তাঁর জন্যে। কি এক বিপত্তি তিনি খুলনা টাইগার্সের হয়ে ম্যাচ খেলেছেন মোটে তিনটি। এই ছোট্ট সময়ে ১৩৪ রান দিয়েছেন নাভিন। টি-টোয়েন্টির যেকোন ধরণের ক্রিকেটে এ রান বড্ড দৃষ্টিকটু। তাঁর থেকেও দৃষ্টিকটু বিষয় তিনি উইকেট নিয়েছেন মাত্র দুইটি। যা তাঁর মতো একজন বোলারের ক্ষেত্রে আরো বেশি বেমানান।

স্বাভাবিকভাবেই তাঁর উপর আর ভরসা রাখতে পারলো না খুলনা টাইগার্স। অগ্যতা তিনি সেই তিন ম্যাচ খেলেই সন্তুষ্ট থাকলেন তিনি। এই বিপিএলের ঝক্কি সামলিয়ে উঠতে পারার আগেই অবশ্য অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যকার ওয়ানডে সিরিজ। ভেবেছিলেন পুরো টুর্নামেন্ট খেলে দারুণ ক্লান্ত থাকবেন তাই ওয়ানডেতে থেকে ছুটি চেয়ে নিয়েছিলেন।

তাকেও আর আটকায়নি আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। দিয়ে দিলো ছুটি। নাভিন হয়ত ভেবেছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে নিজের জাতটা চিনিয়ে দেবেন তিনি। কিন্তু ওই যে আম-ছালা সব গেলো বলেছিলাম। বিপিএলের বাজে পারফর্মেন্স তাঁকে জায়গা দেয়নি আফগানিস্তানের টি-টোয়েন্টি দলে। ১৬ জনের টি-টোয়েন্টি দলেও জায়গা মেলেনি তাঁর।

অন্যদিকে অনেক আশা হয়ত তিনি করেছিলেন যে তরুণ বোলার হিসেবে হয়ত দল পাবেন বিশ্বের অন্যতম আকর্ষনীয় ফ্রাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে। তবে সেখানেও দল পাননি তিনি। কি অদ্ভুত! একেবারে আমাদের বাংলার প্রবাদের যথাযথ উদাহরণ হয়ে গেলেন একজন আফগান ক্রিকেটার। নাভিন হয়ত এখন বসে বসে ভাবছেন সবার অংক মেলে, আমার অংক মেলে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link