শরীরে নেভি ব্লু টি- শার্ট আর ধুসর রঙা শর্টস। লিটন কুমার দাসকে দেখা গেল মিরপুর স্টেডিয়ামের জিম থেকে বের হতে। লিটনের ক্যারিয়ারের অবস্থাটাও বর্তমানে তাঁর শর্টসের রঙের মতোই ধূসর। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিনি এশিয়া কাপ সামনে রেখে অনুশীলন করার জন্য আসেননি, বরং এসেছেন নিজের হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে।
শেষবার লিটনকে যখন দেখা গিয়েছিল, তখন স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি বাঁধিয়ে পুরো সিরিজ থেকে ছিটকে পড়েছিলেন তিনি। এরপর অনেকদিন বাদে আজ আবার লিটনের দেখা মিললো।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ফিজিও মুজাদ্দিদ আলফা সানি জানিয়েছিলেন লিটনের ইনজুরির জন্য তাঁকে ৩-৪ সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকতে হবে। এশিয়া কাপের আসর শুরু হতে যাচ্ছে চলতি মাসের ২৭ তারিখ থেকে। দুর্ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এই গুরুত্বপূর্ণ আসরে লিটনের দক্ষতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ পাবেনা। কারণ ততদিনে ইনজুরি কাটিয়ে ফিট হয়ে ফিরবেন না লিটন। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার- উইকেটকিপারের অনুপস্থিতি বাংলাদেশ দলকে বেশ ভোগাবে।
লিটন এখন ইনজুরি কাটানোর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। সেই প্রক্রিয়ার অংশস্বরূপ জিমে শরীরচর্চা শুরু করেছেন। শরীরচর্চা শেষ করে বের হওয়ার মুহুর্ততেই খেলা ৭১-এর ক্যামেরা খুঁজে নিলো তাঁকে। লিটনের ফর্মে ফেরার আপ্রাণ চেষ্টাতে হঠাৎ এই ইনজুরি বাধ সাধিয়ে দিলো। এখন পারফরম্যান্স বাদ দিয়ে তাঁকে মনোযোগ দিতে হচ্ছে ইনজুরি কাটানোর দিকে। অথচ ২০২২ সালটা নিজের করে নেয়ার কথা ছিলো লিটন দাসের। কিন্তু এই সালটাই হয়তো আরেকটু চ্যালেঞ্জিং রূপে ধরা দিলো লিটনের ভাগ্যে।
ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে লিটনের পথচলা শুরু হয় ২০১৫ সাল থেকে। সর্বমোট ৩৫ টেস্ট খেলে ৩৫.৭৯ গড়ে তাঁর মোট রানসংখ্যা ২১১২। টেস্টে তাঁর সেঞ্চুরি রয়েছে ৩ টি এবং হাফসেঞ্চুরি রয়েছে ১৪টি। আবার ৫৭ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে করেছেন ১৮৩৫ রান। ওয়ানডেতে তাঁর রানের গড় ৩৫.২৮।
পাঁচটি সেঞ্চুরি ও ৭ টি হাফসেঞ্চুরি রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। তবে ওয়ানডে আর টেস্টে যতোটা দুর্দান্ত লিটন, টি- টোয়েন্টিতে যেন ঠিক ততটাই মলিন। ৫৪ টি টি- টোয়েন্টি ম্যাচে তাঁর রানসংখ্যা ১০৮১। যার মধ্যে ছয়টি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে।
২০২১ সালটা ভালো কাটাননি লিটন দাস। ক্রিকেটপ্রেমী থেকে ক্রিকেটবোর্ড কেউই ভরসা করতে পারছিলেন না আর তাঁর উপর। অনেক সমালোচনার স্বীকার হতে হয়েছিলো। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাজার ট্রলের স্বীকার হতে হয়েছে তাঁকে। রান পাচ্ছিলেন না বলে তাঁর স্কোরের সম পরিমান ছাড় দিতে দেখা গেছে অনলাইন দোকানগুলোকে। সেইসব আমাদের সবার চোখের সামনেই ঘটেছে। সেই টানাপোড়েনের সময়টা পেরিয়ে লিটন ঘুরে দাড়াচ্ছিলেন।
বিপিএলে পারফরম্যান্স দিয়ে লিটন সবকিছুর যোগ্য জবাব দিতে শুরু করেছিলেন। যার ফলে জাতীয় দলের পরিকল্পনায় আবারো নিজেকে ঠাই দিয়েছেন। ২০২২ এর শুরু থেকেই ভালো পারফর্ম করছিলেন। নিয়মিত বড় ইনিংস খেলছিলেন। ২০২২ সালেই ৮ টেস্টে তিনি ২ টি সেঞ্চুরি ও ৪ টি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। এবং ১০ টি ওয়ানডে খেলে একটি সেঞ্চুরি ও চারটি হাফসেঞ্চুরি করেছেন। আর আট টি-টোয়েন্টি তে দু’টি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে তাঁর। গত আট মাসে টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটেই তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভরসা হয়ে উঠেছিলেন।
ইনজুরি কাটিয়ে তিনি আবার ফর্মে ফিরবেন, দারুণ সব ইনিংস উপহার দিবেন বাংলাদেশকে, হতাশার মেঘগুলো কেটে যাবে আবার। তেমনটাই প্রত্যাশা।