বোলার পুরান, একটি রোলার কোস্টার রাইড

টি-টোয়েন্টির এই সময়ে চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছড়াতে বেশ খ্যাতি আছে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের ক্রিকেটারদের। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ক্রিস গেইল, মারলন স্যামুয়েলস, আন্দ্রে রাসেল ছাড়াও হালের আন্দ্রে ফ্লেচার, শিমরন হেটমায়ারদের চাহিদা ব্যাপক। এদের মতই ক্রিকেটে পা রাখার পর থেকে হার্ডহিটার হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন উইন্ডিজ উইকেট কিপার নিকোলাস পুরান।

তবে এবার হার্ড হিটিং দিয়ে নয়, বরং নিকোলাস আলো ছড়িয়েছেন বল হাতে। চামড়ার গোলককে পিটিয়ে সীমানা ছাড়া করতে পারায় যার এত খ্যাতি, সেই পুরানই এবার বল হাতে রীতিমতো পুরোদস্তুর বোলার হয়ে উঠেছেন।

পাকিস্তানের বিপক্ষে চলতি সিরিজের তৃতীয় ম্যাচের কথা। ইনিংসের তখন তেরো ওভার শুরু হতে যাচ্ছে। পাকিস্তানি দুই ওপেনার ফখর জামান এবং ইমাম-উল-হক তখন ভালভাবেই দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। ক্যারিবিয়ান বোলাররা জুটি ভাঙ্গার কোন সুযোগই সৃষ্টি করতে পারছিল না বলা যায়। সেসময়ই হঠাৎ বোলিং মার্কে দেখা যায় নিকোলাস পুরানকে।

বল হাতে নিকোলাস কতটা সফল হবেন সেই আলোচনা করা তো দূরে থাক, বরং উইকেট কিপার পুরানকে বোলিংয়ে দেখে বিস্মিতই হয়েছিল মাঠের ধারাভাষ্যকার আর দর্শকরা। কিন্তু বল হাতে নিকোলাসের কাজ যে শুধু অবাক করা নয়, সেটি প্রমাণ করলেন একটু পরেই।

নিজের প্রথম ওভার পাঁচ রান দিয়ে শেষ করেন তিনি। এর পরের ওভারটা একটু খরুচে, আট রান আসে সেই ওভারটায়। কিন্তু এরপরই সফলতা দেখা দেয়; নিকোলাস পুরানের ফ্লাইট ডেলিভারিতে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে সরাসরি বোল্ড হন ফখর জামান। আর পুরানের ঝুলিতে জমা হয় প্রথম আন্তজার্তিক ওয়ানডে উইকেট।

এরপর পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপের উপর আরো চেপে বসেন এই অফ স্পিনার। অন্য পাশ থেকে হাইডেন ওয়ালশের ইকোনমিক্যাল বোলিংও সাহায্য করছিল পুরানকে। প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার পূর্ন ফায়দাটা পুরান তুলেন নেন নিজের ষষ্ঠ ওভারে। ওভারের তৃতীয় বলে ইমাম উল হক আর পঞ্চম বলে মোহাম্মদ হারিসকে সাজঘরে পাঠানোর বন্দোবস্ত করেন তিনি।

এর পরের ওভারে ফিরেই আবার ইনফর্ম ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজওয়ানকে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন নিকোলাস পুরান। শেষপর্যন্ত আর কোন উইকেট না পেলেও নিজের টাইট বোলিং চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। সবমিলিয়ে নিজের দশ ওভারের টানা স্পেলে ৪৮ রান খরচায় চার উইকেট পকেটে পুরেছেন উইন্ডিজ তারকা।

পরিসংখ্যানে আসে নিকোলাস পুরানের স্পেলের মাহাত্ম্য সবটা ফুটে উঠবে না। তিনি যখন বোলিংয়ে এসেছিলেন তখন পাকিস্তান বিনা উইকেটে প্রায় ছয়ের কাছাকাছি রান রেটে ব্যাট করছিল। সেখান থেকে পঞ্চাশ রানের মাঝেই পাকিস্তানের অর্ধেক ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নে ফেরানোর কৃতিত্বটা তাঁরই।

উল্লেখ্য, পাক অধিনায়ক বাবর আজমকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলে আউট করেছেন লেগ স্পিনার হাইডেন ওয়ালশ। উইকেটের হিসেব ছাড়াও নিকোলাসের বোলিংয়ে ছিল টার্ন, ফ্লাইট, বাউন্স আর গতির ভ্যারিয়েশন। সর্বোপরি দেখর মতই একটি স্পেল!

মজার ব্যাপার, এর আগে পুরো ক্যারিয়ারে আন্তজার্তিক ক্রিকেটে মাত্র তিনটি বল করেছিলেন নিকোলাস পুরান। অথচ একজন পার্ট টাইম বোলার না হয়েও, এই ম্যাচে রীতিমতো স্ট্রাইক বোলারের মতই পারফর্ম করেছেন তিনি। ইমাম-উল-হক আর মোহাম্মদ রিজওয়ানের মত দুইজন ইনফর্ম ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেয়াটা হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচে ফেরার উপলক্ষ হতে পারে।

পাকিস্তান সিরিজ দিয়েই জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন নিকোলাস পুরান। কিন্তু শুরুটা একেবারেই ভাল হয়। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হেরে ইতোমধ্যে সিরিজ খুইয়েছে সফরকারী দল। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাট হাতেও পুরোপুরি অনুজ্জ্বল নিকোলাস পুরান। কি জানি, হয়তো ব্যাট হাতে পারফর্ম করতে না পারায় নিজের ভাগ্য পরীক্ষার জন্যই বল হাতে বাইশ গজে ফিরেছিলেন পুরান। আর এই সাহসিকতা তাকে ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা একটি মুহূর্ত উপহার দিয়েছে।

এমনও হতে পারে হয়তো এরপর থেকে উইকেট কিপিং ছেড়ে বোলিংয়েই নিয়মিত হয়ে উঠবেন নিকোলাস পুরান। তাহলে কি নতুন আরেকজন অলরাউন্ডার পেতে চলছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট? উত্তরটা আপাতত সময়ের হাতেই তোলা থাক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link