শাণিত শানাকা

সেই অসম্ভবটা কাজটাই করেছেন দাসুন শানাকা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে দলকে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দিয়েছেন লঙ্কান অধিনায়ক।

একসময় শ্রীলঙ্কা ছিল ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি। কিন্তু সময়ের আবর্তনে লঙ্কান কিংবদন্তি’রা যখন অবসরে গিয়েছেন, সাথে করে নিয়ে গিয়েছেন লঙ্কান ক্রিকেটের জৌলুশ। তিলকারত্নে দিলশান, সনাথ জয়াসুরিয়া, কুমার সাঙ্গাকারা-দের অবসরের পরেই মূলত পিছিয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট। তবে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কানরা।

ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার মত একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটারদের ঘিরে স্বপ্ন বুনছে তারা। হয়তো নিকট ভবিষ্যতে আবার ক্রিকেটে পরাশক্তি হয়ে উঠবে দ্বীপরাষ্ট্রটি। বর্তমানে লঙ্কানদের ভরসা করার মত যে কয়েকজন ক্রিকেটার রয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক দাসুন শানাকা। তরুণদের নিয়ে নতুন করে লঙ্কানদের ঢেলে সাজানোর দায়িত্ব নিয়েই অধিনায়কত্ব শুরু করেছিলেন শানাকা।

টি-টোয়েন্টির ধুমধাড়াক্কার যুগে ডেথওভারে অধিকাংশ সময়েই সুবিধাটা পান ব্যাটসম্যানরা। শেষ দুই তিন ওভারে যদি ৪০-৪৫ রানের প্রয়োজন হয় জিততে, তাহলেও জয়ের পাল্লা ঝুলে থাকে ব্যাটসম্যানের দিকেই। কিন্তু যদি বলা হয় বিশের কাছাকাছি রান রেটে ব্যাট করতে? কয়জন ব্যাটসম্যান পারবেন সেটা? মহেন্দ্র সিং ধোনি কিংবা শহীদ আফ্রিদির মত ফিনিশারদের জন্যও হয়তো কাজটা অসম্ভবই বটে।

আর সেই অসম্ভবটা কাজটাই করেছেন দাসুন শানাকা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে দলকে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দিয়েছেন লঙ্কান অধিনায়ক। শানাকা যখন ব্যাট করতে এসেছিলেন জয়ের জন্য তখন দলের প্রয়োজন ছিল সাত ওভারে আশি রানের; হাতে ছিল ছয় উইকেট। খুব সম্ভবই বটে কিন্তু অজি বোলারদের কৃতিত্বেই শ্রীলঙ্কার জন্য সমীকরন এসে দাঁড়ায় ৪ ওভারে ৬৫ রানের, হাতে তখন মাত্র চার উইকেট।

এখানেই শেষ নয়, দারুন এক ওভার করেন অ্যাস্টন অ্যাগার। শেষ তিন ওভারে তখন শ্রীলঙ্কার দরকার হয় ৫৯ রানের। স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বলতে শুধুই দাসুন শানাকা। অজি ক্রিকেটাররা হয়তো জয় অবধারিত ধরেই রেখেছিলেন, স্বাগতিক দর্শকরাও হয়তো প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আরেকটি পরাজয়ের। কিন্তু এরপরই যেন পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামের বুকে শুরু হয় ঝড়। না, প্রাকৃতিক কোন ঝড় নয় বরং অধিনায়ক শানাকা শুরু করেছিলেন বাউন্ডারি ঝড়।

১৮তম ওভারে জস হ্যাজলউডের এক ওভারে দুই চার আর দুই ছক্কায় তুলেছিলেন বাইশ রান। এরপরের ওভারে ঝাই রিচার্ডসনকে হজম করতে হয়েছে এক ছয় আর দুই চারসহ আঠারো রান। শেষ ওভারে তখনও প্রয়োজন ছিল আরো উনিশ রান।

কেন রিচার্ডসন শুরুতে দুই ওয়াইডে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছেন স্বাগতিক শিবিরে কিন্তু এরপরের দুই বলে দুই রান দিয়ে আবারো ট্র্যাকে ফিরে আসেন। কিন্তু শেষ চার বলে যখন প্রয়োজন ছিল পনেরো রান, তখন আর পারেননি শানাকাকে থামাতে। দুই চার আর এক ছক্কার পর আরেকটি ওয়াইডে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় লঙ্কানরা।

শানাকার নামের পাশে তখন জ্বলজ্বল করছিল অপরাজিত ৫৪ রানের একটি ইনিংস। মাত্র ২৫ বলে ৫৪ রান অবশ্য পুরোপুরি শানাকা-ঝড়ের প্রতিফলন নয়। তবে যদি জানা থাকে, ম্যাচের একটাসময় দাসুন ১০ বলে চার রান করে ক্রিজে ছিলেন, তাহলে আন্দাজ করাই যায় অধিনায়কের সেই রুদ্ররূপ। নিজের শেষ পনেরো বলেই চারটি ছয় আর পাঁচটি চারের সাহায্যে ৫০ রান করেছিলেন দাসুন শানাকা।

চোখ বন্ধ করেই বলা যায়, সাম্প্রতিককালের অন্যতম সেরা টি-টোয়েন্টি ইনিংস এটি। এমনকি টি-টোয়েন্টি ইতিহাসেও এমন ম্যাচ পরিস্থিতি থেকে দলকে জেতানোর ঘটনা খুব একটা নেই। অবশ্য হার্ডহিটিং ব্যাটিং একেবারে নতুন নয় শানাকা’র জন্য। শক্তভাবে নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি বলকে পিটিয়ে সীমানা ছাড়া করতেও জানেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার অধিনায়কত্ব এবং ফিনিশিংয়ের দায়িত্বটা তো আর এমনি এমনি পেয়ে যাননি এই ডানহাতি অলরাউন্ডার।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...