ভারত শাসন করলেন পোপ! হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। হায়দ্রাবাদ টেস্টে ইংলিশ ব্যাটাররা যেখানে খাবি খেয়েছে, সেখানে ভারতীয় বোলারদের প্রতাপের বিপরীতে মৃত্যু কূপে দাঁড়িয়ে একাই দলকে টেনে নিয়ে গেছেন ওলি পোপ, টেস্টের ফলাফল যাই হোক না কেন – হায়দ্রাবাদ টেস্ট মনে রাখবে পোপকে।
ওপেনিং থেকে মিডল অর্ডার কিংবা লোয়ার মিডল অর্ডার, ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে পঞ্চাশ পেরোতে পারেননি কেউই। ১৬৩ রানের মাঝেই ৫ উইকেট হারানো ইংল্যান্ড তখন ইনিংস হারের শঙ্কায়। আর রোহিত শর্মার ভারতের জন্য জয় তখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু সেখান থেকেই তৃতীয় দিন শেষে দলকে ভদ্রস্থ অবস্থায় নিয়ে যান পোপ। তাঁর সেঞ্চুরির উপরেই ভর করে ১২৬ রানে লিড পায় ইংল্যান্ড ৷ চতুর্থ দিনে এসে সেই লিডটা ২৩০ রানে নিয়ে যান পোপ। তবে আক্ষেপ হয়ে থাকলো, ডাবল সেঞ্চুরির পথে হেঁটেও শেষ পর্যন্ত ১৯৬ রানে থামতে হয়েছে পোপকে।
অথচ দিনের শুরুতেও চিত্রটা ছিল ভিন্ন। যশস্বী জয়সওয়াল, লোকেশ রাহুলের পর রবীন্দ্র জাদেজার অর্ধ-শতকে দ্বিতীয় দিনেই বড় লিড পেয়েছিল ভারত। তৃতীয় দিনে এসে ছন্দপতন ঘটলেও ১৯০ রানের লিড যোগ করে টিম ইন্ডিয়া। আর তার বিপরীতে ১৬৩ রানেই ৫ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।
তবে, দলের সংকটময় পরিস্থিতিতে আশার প্রদীপ জ্বালাতে শুরু করেন ওলি পোপ। ষষ্ঠ উইকেটে বেন ফোকসকে নিয়ে যোগ করেন ১১২ রানের জুটি। ব্যক্তিগত ৩৪ রানে ফোকস আউট হলেও এক প্রান্তে উইকেট আগলে রেখে থেকে পোপ তুলে নেন টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম শতক। তৃতীয় দিন পোপের ওই সেঞ্চুরিতেই স্কোরবোর্ডে জমা হয় ৩১৬ রান।
এই সেঞ্চুরি দিয়েই অনন্য এক কীর্তিতে নাম লিখিয়েছেন পোপ। ১৭ চারে ২০৮ বলে ১৪৮ রানে অপরাজিত থাকা এ ব্যাটার নাম লিখিয়েছেন দিমুথ করুণারত্নের গড়া একটি কীর্তির পাশে। কারণ পোপের এ শতকটি ২০১৮ সালের পর ভারতের মাটিতে কোনো সফরকারী দলের দ্বিতীয় ইনিংসে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। এর আগে দ্বিতীয় ইনিংসে শতকটি ছিল শ্রীলঙ্কার করুণারত্নের। ২০২২ সালে ব্যাঙ্গালুরু টেস্টে তিনি খেলেছিলেন ১০৭ রানের একটি ইনিংস।
পোপের সামনে সুযোগ ছিল আরেকটি কীর্তিকেও ছাপিয়ে যাওয়ার। চতুর্থ দিনে আর ২৭ রান যোগ করতে পারলেই তিনি ছাপিয়ে যেতেন অ্যালিস্টার কুককে। ২০১২ সালে আহমেদাবাদ টেস্টে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭৬ রান করেছিলেন সাবেক অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক। যা সফরকারী ব্যাটার হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের রেকর্ড ছিল এতদিন। ১৯৬ রানের ইনিংস খেলে এবার সেই রেকর্ডটিই ছাপিয়ে গেলেন পোপ।
তবে প্রশ্ন হচ্ছে, ইংলিশ ব্যাটারদের ব্যর্থতার মাঝেও কীভাবে পোপ এত সাবলীল ব্যাটিং করলেন? যেখানে তৃতীয় দিনের শুরু থেকেই পিচ মন্থর হয়ে আসছিল। তবে ভারতের স্পিন আক্রমণের মোক্ষম জবাব দিতে মূলত ভিন্ন এক কৌশলে এগিয়েছিলেন পোপ।
সিংহভাগ শট তিনি সুইপ, রিভার্স সুইপ করে খেলেছেন। কারণটা, ভারতীয় স্পিনারদের বিপক্ষে পাল্টা আক্রমণ করার প্রধান রসদ ছিল এটাই। একটা সময় ইংলিশদের হয়ে এমন রিভার্স সুইপের পসরা সাজাতেন কেভিন পিটারসেন। ঠিক যেন কেপির উত্তরসূরি হয়েই লাল বলের ক্রিকেটেও আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায় ব্যাট করে সফল হয়েছে পোপ।
ওলি পোপ, এই মুহূর্তে টেস্ট ক্রিকেটে বড় কোনো নাম নয়। তবে ভারতের বিপক্ষে এই ইনিংস দিয়ে ঠিকই এক নতুন চর্চিত নাম হতে যাচ্ছেন তিনি। ওলি পোপ নিশ্চয়ই সেই আলোচিত চরিত্রের আস্থার ছাপ রাখতে চাইবেন নিয়মিতই।