আধুনিক ক্রিকেটে, আলো ঝলমলে টি-টোয়েন্টির পরিবর্তে যিনি বিবর্ণ সাদা জার্সিটাকে ভালবাসতেন তিনি জেমস অ্যান্ডারসন। ক্যারিয়ারের প্রায় অর্ধেকের বেশি সময় শুভ্রতার সাধনায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন তিনি; তবে এবার ইতি ঘটতে যাচ্ছে তাঁর বর্ণাঢ্য পথ চলার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে শেষবারের মত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখা যাবে তাঁকে।
২১ বছর আগে যেই ভেন্যুতে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল এই বোলারের, ঠিক সেই জীবনের শেষ টেস্ট খেলতে নামছেন তিনি। খানিক পরেই সবকিছু শেষ হবে, দর্শকরা হাত নেড়ে বিদায় বলবে তাঁকে। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর জায়গায় এরপর অন্য কেউ আসবেন নিশ্চয়ই, কিন্তু তিনি আদৌ সমর্থকদের হৃদয় থেকে দূরে সরবেন?
বয়সটা ৪২ ছুঁই ছুঁই, ১৮৭ টেস্ট আগেই খেলে ফেলেছেন। উইকেটের ঝুলিটা নেহাত ছোট নয়, সংখ্যার হিসেবে ৭০০! ইতিহাসে তাঁর চেয়ে বেশি উইকেট আছে কেবল দুজনেরই, তাঁরা স্পিন কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরন ও শেন ওয়ার্ন। এতকিছুর পরও কিন্তু অ্যান্ডারসনের আসল মাহাত্ম্য উইকেট কিংবা পরিসংখ্যানে নয়।
এই ক্রিকেটারের মাহাত্ম্য আসলে নিহিত আছে তাঁর চলনে বলনে। ক্রিকেটের দীর্ঘতম সংস্করণে নিজেকে যেভাবে বিলিয়ে দিয়েছেন তিনি সেটা সত্যি অনন্য। বাকিদের মত টি-টোয়েন্টি কিংবা সাদা বলে মনোযোগী হলে এখনের চেয়ে অনেক বেশি টাকা উপার্জন করতে পারতেন, কিন্তু তিনি বেছে নিলেন কঠিন পথ; মহারথী হওয়ার পথ।
সেই কঠিন পথে হাঁটতে হাঁটতে কত কিছুই করে ফেলেছেন ইংলিশ গ্রেট; নতুন নতুন সব রেকর্ডের জন্ম দিয়েছেন, পুরনো রেকর্ড ভেঙে নিজের করে নিয়েছেন। বয়স যত বেড়েছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে তত ক্ষুরধার হয়েছেন তিনি।
জেমস অ্যান্ডারসন ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা বোলারদের একজন কি না সেটা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, তাঁকে সেরা মানতে অনেকের আপত্তি থাকতেও পারে। কিন্তু তিনি যেভাবে স্রোতের বিপরীতে দাঁড়ানোর দুঃসাহস দেখিয়েছেন সেটা অনুপ্রেরণা দিবে অজস্র ক্রিকেটপ্রেমীকে। তাই তো জিমি ক্রিকেট ছাড়লেও, ক্রিকেট জিমিকে ছাড়বে না। আলোচনায়, স্মৃতিতে কিংবা কল্পনায় তিনি সবসময়ই থাকবেন।