রুলফ ভ্যান ডার মারউই – এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ক্রিকেটারদের একজন। কাগজে কলমে তাঁর বয়স ৩৮ বছর, শরীরে চামড়ায় ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে। সাধারণ জামাকাপড়ে তাঁকে অনায়াসে অবসরপ্রাপ্ত কোন খেলোয়াড় বলে চালিয়ে দেয়া যাবে।
কিন্তু বাস্তবে ভ্যান ডার মারউই এখনো খেলে যাচ্ছেন। শুধু খেলছেনই না, পারফর্ম করছেন নিজের সবটুকু দিয়ে। এই বয়সেও এসে মাঠের সবচেয়ে উদ্যমী সদস্য তিনি। ক্লান্ত মনে হয় না ক্ষণিকের জন্যও, হয়তো মনে মনে নিজেকে ২২ বছরের তরুণ ভাবেন এই ডাচ তারকা।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নেদারল্যান্ডস যখন ইতিহাস গড়া জয় পেয়েছে, তখনো তারুণ্যের জোয়ারে ভেসেছেন এই অলরাউন্ডার। ৩৮ বছর বয়সেও ব্যাটে, বলে অবদান রেখেছেন সমান তালে। এমনকি ফিল্ডিংয়ের সময়ও ছাড় দেননি এক ফোঁটা। তাঁর এমন সজীবতাই সতীর্থদের অনুপ্রাণিত করেছে প্রোটিয়াদের চোখে চোখ রেখে লড়াই করার।
ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে নয় নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে বাইশ গজে এসেছিলেন এই ডানহাতি; এরপর দলকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টায় থাকা অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসকে সঙ্গ দিয়েছেন দারুণভাবে। তাঁদের দুজনের ৬৪ রানের জুটিতেই চ্যালেঞ্জিং স্কোরের পথ খুঁজে পায় কমলা জার্সি ধারীরা, আর এই জুটিতে মারইউর অবদান ১৯ বলে ২৯ রান।
দ্বিতীয় ইনিংসেও দক্ষিণ আফ্রিকার অগ্নি পরীক্ষা নিয়েছেন তিনি। কিপ্টে বোলিংয়ে রানের চাকা আটকে দিয়ে চাপ সৃষ্টি করেছেন প্রতিপক্ষের ওপর, যার ফায়দা নিয়েছে সতীর্থ বোলাররা। সবমিলিয়ে নয় ওভার হাত ঘুরিয়ে ওভারপ্রতি মাত্র ৩.৮ করে রান দিয়েছেন তিনি। এছাড়া শিকার করেছেন টেম্বা বাভুমা এবং রসি ভ্যান ডার ডুসেনের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট।
এর আগে ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও প্রোটিয়াদের নাস্তানাবুদ করেছিল নেদারল্যান্ডস। সেদিন টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা ক্যাচ তালুবন্দি করে দলের জয়ে অবদান রেখেছিলেন এই ক্রিকেটার।
মজার ব্যাপার যে, ভ্যান ডার মারউইয়ের দেশ কিন্তু সেই দক্ষিণ আফ্রিকা-ই। ক্রিকেটের হাতেখড়িও হয়েছে সেখানে, দক্ষিণ আফ্রিকা দলেও এখন সময় ছিলেন নিয়মিত। কিন্তু ভাগ্যচক্রে তিনি এখন ডাচ শিবিরের অংশ – আর ডাচদের নিয়েই দুই দুইবার বধ করেছেন নিজের সাবেক দলকে।
পরিসংখ্যানের বিচারে তাঁকে খুব উপরে রাখার সুযোগ আসলে নেই। কিন্তু তুলনার মানদণ্ড যদি হয় খেলার প্রতি ‘প্যাশন’, তবে তিনি নিশ্চিতভাবে থাকবেন তালিকার ওপরের দিকেই।