মাশরাফি বিন মুর্তজা কী ২০২৩ বিশ্বকাপ খেলবেন?
ধরে নিলাম এর উত্তর-না! যদি তিনি ২০২৩ বিশ্বকাপ না খেলেন, তাহলে মাশরাফি এবং নির্বাচকেরা দলে তাঁকে এই মুহূর্তে দেখেন ঠিক কোন ভূমিকাতে?
সামনেই আসছে উইন্ডিজ সিরিজ। দেশের মাটিতে এই সিরিজটা হচ্ছে দীর্ঘ করোনাকালের পর আন্তর্জাতিক ম্যাচ ফেরার দরজা হিসেবে। এই সিরিজ দিয়েই নতুন করে বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে ভাবতে হবে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সবার। এখন, এই ভাবনাতে তারা ঠিক কোথায় দেখেন মাশরাফিকে?
আপনি হয়তো বলতে পারেন, মাশরাফি তো পারফর্ম করছেন, ছন্দে আছেন। এত এত বোলারের ভিড়ে তিনিই শেষ বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি তে পাঁচ উইকেট পেয়েছেন। তাহলে তাঁর দলে ফিরতে সমস্যা কোথায়?
সমস্যা আছে! এই যে শহীদ আফ্রিদি এখন বিভিন্ন প্রিমিয়ার লিগে খেলে বেড়াচ্ছেন, এই মুহুর্তে তিনি যদি ফিটনেস টেস্টে উতরেও যান, চাঞ্চল্যকর সব ইনিংস খেলেন, এই মুহূর্তে কি তিনি পাকিস্তান জাতীয় দলে ফিরতে পারেন?
ড্যারেন স্যামি, যার ঝুলিতেই আছে দুটো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার কৃতিত্ব- অধিনায়ক হিসেবেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজে আস্ত একটা স্টেডিয়াম আছে তাঁর নামে। সেই ড্যারেন স্যামি গেল ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (সিপিএল) আগে বলেছিলেন, তিনি দলে ফিরতে চান। তা ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে যে দলটার দায়িত্বে ছিলেন তিনি, সে দলটাকে সেমি ফাইনালেও নিয়ে গেছিলেন। যদি আপনি টুর্নামেন্টটা দেখে থাকেন, ড্যারেন স্যামির অধিনায়কত্ব দলে কতটা প্রভাব রেখেছিল ঘুণাক্ষরেও অস্বীকার করতে পারবেন না। এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ কি স্যামিকে গোণায় ধরেছে? ধরেনি; আর ধরবেও না!
শেন ওয়াটসন তো এই মৌসুম পর্যন্তই নিয়মিত খেলে বেড়াচ্ছেন টি-টোয়েন্টিতে বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজির হয়ে। চেন্নাই সুপার কিংসের প্রাণ ভোমরা এই অজি অলরাউন্ডার নিয়মিতভাবেই পারফর্ম করেছেন বিভিন্ন লিগে। সেই ওয়াটসন যদি হঠাৎ করে ২০১৮ তে ফিরতে চাইতেন, তাতে কি অস্ট্রেলিয়া তাকে হিসাবে নিতো?
মোহাম্মদ আশরাফুল তো নিজের ফেরার কথা জানাচ্ছে বেশ অনেকদিন ধরেই। সেই যে নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরার পর ডিপিএলে তিনি গুণে গুণে চার চারটে সেঞ্চুরি করে ফেললেন, তাতে কি আমরা তাকে ওয়ানডেতে দলে নিয়েছি?
এখানেই আসছে মাশরাফির প্রসঙ্গ!
একটা দল চলে পরিকল্পনাতে। আমরা যে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপটা জিতলাম, সেটার পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল ২০১৮ থেকে, বিসিবিই করেছিল। সুতরাং, ২০২৩ বিশ্বকাপ পরিকল্পনাও আমাদের করতে হবে এখন থেকেই। সেই পরিকল্পনাতে কি আমরা এমন কাউকে নেব যে কিনা পরিকল্পনার লক্ষ্যবিন্দুতে খেলবেনই না?
আর তাছাড়াও, সবচাইতে বড় প্রশ্ন মাশরাফি কি ৫০ ওভারের ফর্ম্যাটে খেলার জন্যে ফিট? ২০১৯ বিশ্বকাপেই আমরা দেখে ফেলেছি, দল হিসেবে কতগুলো আনফিট খেলোয়াড় নিয়ে গেছিলাম আমরা।
আর বিশ্বমঞ্চে পারফর্ম করার মত এই মুহুর্তের মাশরাফিও ঠিক কতটা যোগ্য সেটাও ভাবতে হবে জোরেশোরেই! তবে, শহীদ আফ্রিদি, শেন ওয়াটসন, ড্যারেন স্যামির প্রসঙ্গ টানতে টানতে আপনি হয়তো মোহাম্মদ হাফিজ আর আশীষ নেহরার প্রসঙ্গ টানতে পারেন!
যদি সেই প্রসঙ্গ টেনে থাকেন, তাহলে প্রথমেই পার্থক্য টা চোখে পড়বে ফর্ম্যাটে। হাফিজ আর নেহরা দু’জনেই অনেক বয়স পর্যন্ত খেলেছিলেন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। মাশরাফি ফিরতে চাইছেন ওয়ানডে। ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টির ফিটনেস যে এক নয় সেটা তো আমরা সবাই জানি। আর তাছাড়াও,আশিষ নেহরার ফিরেছিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কেন্দ্র করেই। মোহাম্মদ হাফিজও ২০২১ টি-টোয়ন্টি বিশ্বকাপ ভাবনাতে আছেন। এখানেই আবার প্রশ্ন আসে, মাশরাফি কি ২০২৩ বিশ্বকাপ খেলতে চান?
দেখুন, মাশরাফি ক্রিকেটের মানুষ। ক্রিকেট তাঁর কাছে একটা আবেগের জায়গা। এত এত ইনজুরি কাটিয়ে, ক্রিকেটের বাইরের জগতে নিজেকে যুক্ত করেও তিনি ক্রিকেট প্রেমের টানে ফিরে এসেছেন বারবার । সেই প্রেমকে, সেই ক্রিকেটের আবেগকে আমরা সবাই সম্মান করি। আর সেজন্যেই, মাশরাফি দলে ফিরতে চাইলে নির্বাচকেরা সরাসরি তাঁকে বাদ দিতে পারছেন না।
আমাদের দলে এখন উঠতি পেসার আছে। যাদেরকে তৈরি করা দরকার। মাশরাফি যদি বিশ্বকাপ পরিকল্পনাতে না থাকেন। তাহলে শেষ পর্যন্ত যিনি বিশ্বকাপে যাবেন, তাঁর জায়গাটা এখন আটকে থাকছে। তাহলে বিশ্বকাপে মাশরাফির ঐ জায়গাটাতে আমরা কাকে পাঠাব? কাকে তৈরি করব?
শুরু প্রশ্নে ফিরে আসি- মাশরাফি বিন মুর্তজা কী ২০২৩ বিশ্বকাপ খেলবেন?
যদি এর উত্তর হয়- হ্যাঁ, তাহলে কোন সমস্যা নেই। খেলতে থাকুন, লড়াই করতে থাকুন।
কিন্তু সেই উত্তরটা কী খুব বাস্তবিক মনে হচ্ছে?