সব শেষ ভেবেছিলেন পৃথ্বী

অস্ট্রেলিয়া সফরে তার ব্যাট-প্যাডের মাঝে বিরাট ফাঁক ধরা পড়লো। বাদ পড়লেন দল থেকে।

এখানে সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। নিজেকে নিয়ে কাজ করে আবার ফিরে এসেছেন পৃথ্বী শ। আর বিজয় হাজারে ট্রফিতে দূরন্ত পারফরম্যান্সের পর শ বলছেন, তিনি ভেবেছিলেন, তার ক্যারিয়ার বুঝি শেষ হয়ে গেছে।

ক্যারিয়ার শুরুর আগে পৃথ্বী শ’কে নিয়ে ভারতে জল্পনা কল্পনার শেষ ছিল না। ১৪ বছর বয়সে বয়স ভিত্তিক দলের হয়ে ৫৪৬ রানের একটি ইনিংস খেলার পর থেকেই তাঁকে নজরে রাখে ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)।

তারপর ২০১৮ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই ভারতের হয়ে টেস্টে অভিষিক্ত হন তিনি। ভারতের ক্রিকেট গ্রেটরাও তাঁকে নিয়ে আশার ফুলঝুড়ি খুলে বসেন। তাঁর নামে পাশে যুক্ত হয় ভবিষ্যতের শচীন, দ্রাবিড়ের তকমা।

তবে এই এত গ্রেট তকমা গুলোই বোধহয় কাল হয়ে দাঁড়াল পৃথ্বীর জন্য। ১৯ বছর বয়সের একজন টগবগে তরুণ বোধহয় এত ভারী ভারী নামের চাপে নিজেকেই হারিয়ে ফেলছিলেন। ফলে জাতীয় দলের হয়ে ৫টি টেস্ট খেললেও উইন্ডিজের বিপক্ষে একটি সেঞ্চুরি বাদে নামের সুবিচার করতে পারেননি তিনি।

তাঁর খেলা শেষ টেস্ট ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাঁর সংগ্রহ ০ এবং ৪। তাঁর এই বাজে পারফর্মেন্সের কারণ হিসেবে এই চাপের পাশাপাশি কিছু ট্যাকনিকাল সমস্যাও খুঁজে পেয়েছেন এই ব্যাটসম্যান। ভারতে ফিরে এসে সমস্যা গুলো নিয়ে কাজ করেছেন। তাই ওয়ানডে টুর্নামেন্ট বিজয় হাজারে ট্রফিতে রানের ফোয়ারা খুলে বসেন এই ব্যাটসম্যান।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই বাজে দিনগুলোর কথা স্মরণ করে পৃথ্বী একটি সাক্ষাতকারে বলেন, ‘প্রথম টেস্টের পর বাদ পড়লে আমি খুবই দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। দল ভালো করলেও আমি আমার পারফর্মেন্স নিয়ে খুবই বিরক্ত ছিলাম। আমি তখন নিজেকে বলেছিলাম যে পরিশ্রম না করলে এই এত ট্যালেন্টের আসলে কোনো রেজাল্ট আসবে না। তাই আমাকে আরো অনেক কাজ করতে হবে আমার ব্যাটিং নিয়ে।’

সেদিনের কথা মনে করে তিনি বলেন, ‘বাদ পড়াটা বোধহয় আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে দিন ছিল। আমি আমার রুমে এসে একদম ভেঙে পড়েছিলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম কোথাও একটা ভুল আছে। আমার দ্রুত সেই ভুলটা খুঁজে বের করা দরকার ছিল।’

ভারতে ফিরে আসার পর কোচ রবী শাস্ত্রীর কাছে তাঁর ভুল খুঁজে পান পৃথ্বী। তিনি খুব ছোট একটা ভুল করে এসেছেন একদম ছোটবেলা থেকেই। তবে এই ছোট ভুল টিই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বড় ব্যবধান গড়ে দিচ্ছিল। তাঁর ব্যাট আর পায়ের মাঝে একটা গ্যাপ থেকে যাচ্ছিল। তাই তিনি বারবার এই ব্যাট-প্যাডের মাঝের বলগুলোতে পরাস্ত হচ্ছিলেন। এই ট্যাকনিকাল ব্যাপার গুলো নিয়ে শচীন টেন্ডুলকারের সাথেও কথা বলেছেন তিনি।

শচীনের সাথে আলচনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশে আসার পরে আমার শচীন স্যারের সাথে দেখা হয়েছে। তিনি বলেছেন খুব বেশি পরিবর্তন না করে শুধু ব্যাট আর পায়ের মাঝে গ্যাপটা কমিয়ে আনতে। তারপর আমি এই সমস্যা গুলো নিয়ে অনেক কাজ করেছি।’

নেটে যে তিনি সমস্যা গুলো নিয়ে প্রচুর কাজ করেছেন তা সম্প্রতি তাঁর বিজয় হাজারে ট্রফির পারফর্মেন্স দেখলেই বোঝা যায়। একদিনের এই ঘরোয়া টুর্নামেন্টে ৭ ম্যাচে মোট ৭৫৪ রান করেছেন তিনি। এই সাত ম্যাচের চারটি তেই সেঞ্চুরি করেছেন এই ব্যাটসম্যান। এরমধ্যে একটি ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংস ও আছে। সবমিলিয়ে ১৮৮.৫ গড়ে এবং ১৩৪ স্ট্রাইকরেটে এই রান করেন তিনি।

টুর্নামেন্টে এই অতিমানবীয় ব্যাটিং নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি অনেক বড় ইনিংস খেলতে চাচ্ছিলাম এবং ম্যাচ শেষ করতে ফিরতে চাইছিলাম। অনেক রান করাই ছিল আমার একমাত্র লক্ষ্য। মাঝে আমার ব্যাকপেইন থাকা সত্ত্বেপ আমি খেলে গেছি রান করবো বলে।’

তবে এত এত রান করার পরেও তিনি মনে করেন সব ঠিক হয়ে যায়নি। এখনো তাঁর লক্ষ্য পূরন হয়নি। এই নিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘জাতীয় দলে ফিরার আগ পর্যন্ত এসব কিছু দিয়েই আমি খুশি হতে পারব না। যখনই আমি ভারতের হয়ে আবার সুযোগ পাব, আমি সেটা কাজে লাগাতে চাই। কারণ এই যে এখন আমি দলের বাইরে এর জন্য শুধু আমিই দায়ী।’

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link