ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শেষ হওয়ার দিন পাঁচেক না গড়াতেই আবার আরেকটি সিরিজ। ব্যস্তসূচির এই ক্লান্তিতেই ক্রিকেটাররা মনঃসংযোগ হারিয়ে ফেলেন কিনা! এমন একটা আশঙ্কা ছিল বটে। তবে সে সব আশঙ্কা তুড়ি মেরে উড়িয়ে পূর্ণ আধিপত্য বিস্তার করেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে রেকর্ড সংগ্রহ গড়ার দিনে তারা আইরিশদের হারিয়েছে ১৮৩ রানে।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে এ দিন টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ দল। তবে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি তাদের। ব্যক্তিগত ৩ রানের মাথায় আইরিশ পেসার মার্ক অ্যাডায়ারের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান ওপেনার তামিম ইকবাল। অপর ওপেনার লিটন দাশ শুরুটা ভালই করেছিলেন। কিন্তু উইকেটে থিতু হয়েও ব্যক্তিগত ২৬ রানে আউট হয়ে যান তিনি।
৪৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে তখন কিছুটা চাপে বাংলাদেশ। তবে চারে নেমে বাংলাদেশকে পথ দেখাতে শুরু করেন সাকিব আল হাসান। নাজমুল হোসেন শান্ত ব্যক্তিগত ২৫ রানে ফিরে গেলেও অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয়ের সাথে গড়েন ১৩৫ রানের জুটি। আরেকটু সাবধানী ক্রিকেট খেললে সেঞ্চুরিটা পেতেই পারতেন সাকিব। কিন্তু ৯৩ রানের মাথায় গ্রাহাম হিউমের বলে আউট হয়ে বিদায় নেন তিনি। অবশ্য সেঞ্চুরি না পেলেও এ দিন ক্যারিয়ারের সাত হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব।
সাকিব আউট হওয়ার পর দলের হাল ধরতে থাকেন তৌহিদ হৃদয়। আর অপর প্রান্তে মারমুখী ভূমিকায় এ দিন আবর্তিত হন মুশফিকুর রহিম। ৩ চার আর ৩ ছক্কায় ২৬ বলে ৪৪ রানের কার্যকরী এক ইনিংস খেলেন তিনি। মুশফিক ফেরার পরও উইকেটে টিকে ছিলেন তৌহিদ হৃদয়। সুযোগ ছিল অভিষেকেই সেঞ্চুরি হাঁকানোর।
কিন্তু এখানেই এক রাশ আক্ষেপের জন্ম দেন এ ব্যাটার। সাকিবের মতো তিনিও নার্ভাস নাইন্টিজে কাঁটা পড়েন। গ্রাহাম হিউমের বলে বোল্ড হয়ে শেষ পর্যন্ত ৮৫ বলে ৯২ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন হৃদয়।
এরপর শেষ দিকে ইয়াসির রাব্বি, তাসকিন, নাসুমরা ছোট ছোট ইনিংস খেলে দলকে এগিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে জমা করে ৩৩৮ রান। আইরিশদের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট সংগ্রহ করেন গ্রাহাম হিউম।
৩৩৯ রানের পাহাড়সহ লক্ষ্যে নেমে শুরুটা ভালই করেছিল আইরিশরা। দুই ওপেনার মিলে প্রথম উইকেটে তোলে ৬০ রান। তবে এরপরেই ছন্দপতন। আইরিশদের ইনিংসে প্রথম আঘাত হানেন সাকিব। সাকিবের বলে কাট করার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে মুশফিকের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন স্টিফেন দোহানি।
প্রথম উইকেট পতনের পরই আইরিশ ব্যাটিং অর্ডার তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে যেতে শুরু করে। ১৬ রানের ব্যবধানেই তারা হারায় ৪ উইকেট। এবাদত আর তাসকিনের বলে শিকার হয়ে একে একে ফিরে যান পল স্টার্লিং, বালবার্নি, টেক্টর, টাকাররা।
৭৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে আয়ারল্যান্ডের জয়ের স্বপ্ন কার্যত সেখানেই শেষ হয়ে যায়। যদিও কার্টিস ক্যাম্ফার আর জর্জ ডকরেল মিলে সামান্য প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে তা নস্যাত হয়ে যায় নাসুমের স্পিন ঘূর্ণিতে। ১০ রানের ব্যবধানে আইরিশদের লোয়ার মিডল অর্ডার একাই গুড়িয়ে দেন এ বাঁহাতি স্পিনার।
আয়ারল্যান্ডের ইনিংসে শেষ আঘাত হানেন এবাদত হোসেন। এ দিন বল হাতে একটু খরুচে থাকলেও দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ টি উইকেট নেন এ পেসার। আর তার বোলিং তোপেই শেষ পর্যন্ত ৩০.১ ওভারে ১৫৫ রানে গুটিয়ে যায় আয়ারল্যান্ড।
১৮৩ রানের বড় এ জয়ে সিরিজে দুর্দান্ত শুরু করলো টাইগাররা। এক দিন বিরতি দিয়েই আগামী ২০ মার্চে আবারো আইরিশদের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। দারুণ শুরুর পর নিশ্চিতভাবেই পরের ম্যাচে জয় দিয়েই সিরিজ জিততে চাইবে তামিম ইকবালের দল।