একটি দিন, বাংলাদেশের দিন!

প্রথমত দিনটা সাকিবের রেকর্ড, এরপর অভিষেকেই তৌহিদের রেকর্ড। তারপর দলগতভাবে সর্বোচ্চ সংগ্রহ। দলগতভাবে রেকর্ড ব্যবধানে জয়। দিনটা সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঠিক যেখানে শেষ করেছিল বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঠিক সেখান থেকেই শুরু করেছে টাইগাররা। নামের ভার কিংবা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আয়ারল্যান্ডের আধিপত্য ততটা বিস্তৃত নয়। তবুও বাংলাদেশ একটা দাপট দেখাতে পেরেছে। স্বপ্নে বিভোর আইরিশ দলকে বাস্তবতার স্বাদ দিয়েছে বাংলাদেশ।

সিলেটের দৃষ্টিনন্দন আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দিনটা নিজেদের করে রাখে গোটা বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলটায় একটা উজ্জীবনি আবহাওয়ার আন্দাজ করা গিয়েছিল। সেই বাতাস ছড়িয়ে গেছে ওয়ানডে দলেও। তবে অধিনায়ক তামিম ইকবাল নিজের হারিয়ে ফেলা ছন্দের খোঁজ এখন অবধি পাননি।

অন্যদিকে লিটন দাস দারুণ শুরু পেলেও নিজের ইনিংসটি বড় করতে পারেননি। তবে লিটনের ব্যাটে মিলেছে বহু পরিচিত নান্দনিকতা। ধারাবাহিকভাবে রান করে যাওয়া শান্ত নিজের স্বরুপটা ঠিক মেলে ধরতে পারেননি। একেবারে খালি হাতে তাকেও ফিরে যেতে হয়নি। রান এসেছে তাঁর ব্যাটেও।

তবে এদিনে আলো কেড়ে নেওয়ার কাজটা আরও একবার নিজের করে নেন সাকিব আল হাসান। সাম্প্রতিক সময়ে আরও একবার বিতর্কের সাথে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছেন সাকিব। সেই বিতর্ক ছাপিয়ে সাকিব মাঠের ক্রিকেটে অনবদ্য। ক্রিকেটে সবুজ গালিচায় পা রাখা মাত্রই তিনি পুরোদস্তুর পেশাদার ক্রিকেটার। যদিও অল্পের জন্যে সেঞ্চুরি সংখ্যা নয় থেকে দশ হয়নি। তবুও এদিন সাত হাজার রানের ঘরে পা রেখেছেন তৃতীয় অলরাউন্ডার হয়ে। দ্রুততমও তিনিই বটে।

অন্যদিকে অভিষেকের নাকি চাপ থাকে। সেটা টেরই পাওয়া যায়নি তৌহিদ হৃদয়ের ৯২ রানের ঝকঝকে ইনিংসে। তিনিও রেকর্ড করেছেন। তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে অভিষেকে অর্ধশতক করেছেন। রানের বিচারে সবার উপরে এখন তরুণ এই ব্যাটার। তবে তিনি একটা স্বস্তির বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টকে। খাসা একজন ব্যাটারই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন।

হঠাৎ করে পুরনো সেই মুশফিকুর রহিমের দেখা। চারিদিকে গুঞ্জন। তিনি নাকি থাকবেন না বিশ্বকাপের দলে। সেই গুঞ্জনে কান না দিয়ে, মুশফিক নিজের ক্লাসটা দেখিয়ে গেলেন। একটা লম্বা সময় বাদে ছয় নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ধুন্ধুমার এক ইনিংস খেললেন। আক্ষেপ তিনিও রেখে গেছেন, অর্ধশতক না হওয়ার। আবার উইকেটের পেছনে দস্তানা হাতেও তিনি জবাব দিয়েছেন সমালোচনার। দূর্দান্ত সব ক্যাচ লুফে নিয়েছেন তিনি।

ব্যাটারদের দক্ষতায় ইতিহাস রচনা করে ফেলে বাংলার টাইগাররা। ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় রানের দেখা পেয়ে যায় বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডকে ছুড়ে দেয় ৩৩৯ রানের লক্ষ্যমাত্রা।  এরপরের গল্পে বোলারদের আধিক্য। উঁচুতে দাঁড়িয়ে রয়েছে এবাদত হোসেন। একটু খরচ বেশি করেছেন। তবে উইকেটের প্রাচুর্যতায় তিনি সবার থেকে এগিয়ে।

যদিও শুরুটা করে দিয়েছিলেন সেই সাকিব আল হাসান। স্টিফেন ডোহেনির উইকেট তুলে নিয়ে তিনি বাংলাদেশের বোলারদের পথটা দেখিয়ে দেন। সে পথ অবলম্বন করেই নাসুম নিজের পকেটে পুরেছেন তিন খানা উইকেট। উজ্জ্বলতার বিচারে তাসকিন আহমেদ ছাপিয়ে গেছেন সবাইকে। খরচ কম করেছেন। উইকেটও নিয়েছেন দু’খানা।

সব মিলিয়ে গোটা দলটাই দারুণ এক ক্রিকেটীয় প্রদর্শনীর আয়োজন করে সিলেটে। সে প্রদর্শনীর অন্তিম ফলাফল ১৮৩ রানের বিশাল জয়। প্রথমত দিনটা সাকিবের রেকর্ড, এরপর অভিষেকেই তৌহিদের রেকর্ড। তারপর দলগতভাবে সর্বোচ্চ সংগ্রহ। দলগতভাবে রেকর্ড ব্যবধানে জয়। দিনটা সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের। প্রতিপক্ষ নিশ্চয়ই ফেলনা নয়।

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...