ঢাকায় এসেছেন দুই-চার বছর আগেও।
মোটামুটি চেনা জায়গা তার। লোকজনও চেনা। হোটেলে উঠেই ফোন করলেন এক আবাহনী কর্মকর্তাকে। এবার বায়ো বাবলে থাকছেন বলে আড্ডাটা হচ্ছে না, তাই দুঃখ প্রকাশ করলেন।
হ্যাঁ, ইলিংওয়ার্থ ঢাকা শহরের আড্ডাটাও মিস করেন। কারণ, এই শহরে কিছুদিন হলেও তার বসতি ছিল। তিনি চিরকাল এরকম আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ ছিলেন না। এক সময় তার পরিচয় ছিল-আবাহনীর ইলিংওয়ার্থ।
রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ একটা রেকর্ড করে ফেলেছেন এরই মধ্যে।
কোভিড পরিস্থিতিতে আইসিসি নিরপেক্ষ আম্পায়ার ব্যাপারটা তুলে দিয়েছিল। ফলে সব দেশ যার যার আম্পায়ার দিয়েই টেস্ট পরিচালনা করছিল। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। এখানে তো সে রকম অভিজ্ঞ আম্পায়ারই নেই। তাই এক প্রান্তে অন্তত নিরপেক্ষ আম্পায়ার পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলো আইসিসি। এই কাজ করতে, এই করোনার সময়ে বিদেশে আসতে রাজী হলেন ইংলিশ আম্পায়ার ইলিংওয়ার্থ।
সাথে সাথে রেকর্ড হয়ে গেল। করোনা শুরুর পর প্রথম নিরেপক্ষ টেস্ট আম্পায়ার হলেন রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ।
কিন্তু তিনি রাজী হলেন কেন? আমরা ধরে নিতে পারি, কারণটা হলো এই দেশটাকে তিনি ভালো চেনেন।
ইলিংওয়ার্থ ১৯৯৩৯৪ মৌসুমে ছিলেন আবাহনীর খেলোয়াড়। তার আগের বছর অস্ট্রেলিয়াতে বিশ্বকাপ খেলেছেন ইংলিশ এই বাঁ-হাতি স্পিনার। খুব বড় কোনো পারফরম্যান্স ছিল না বিশ্বকাপে।
আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটেই ইলিংওয়ার্থের খুব বলার মতো তেমন কিছু নেই। ইংল্যান্ডের হয়ে ৯টি টেস্ট ও ২৫টি ওয়ানডে খেলেছেন। ১৯টি টেস্ট উইকেট ও ৩০টি ওয়ানডে উইকেট নিয়েছেন। প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে অবশ্য ৩৭৬ ম্যাচে ৮৩১ উইকেট শিকার করেছেন এই বাঁ-হাতি স্পিনার। তারপরও বাংলাদেশের আবাহনী কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছিলেন তিনি।
ইলিংওয়ার্থকে যখন আনা হয়, সেই সময়ও বোর্ড পরিচালক ও আবাহনীর কর্মকর্তা ছিলেন আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি। তিনি বলছিলেন, কেবল একজন বাঁ-হাতি স্পিনার হিসেবে আনেননি তারা ইলিংওয়ার্থকে। তার ব্যাখ্যা ছিল, ‘সে সময় ইংলিশ একজন ক্রিকেটারকে আনার নানা রকম কারণ ছিল। একজন বিদেশী ভালো পারফরমারকে আনলে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষন হতো। দর্শকের আগ্রহ তৈরী হতো। আর এগুলো হলে আমরা স্পন্সরদের পাশে পেতাম। এই কারণেই আমরা নীল ফেয়ারব্রাদার থেকে শুরু করে বিভিন্ন তারকাকে তখন দলে এনেছি।’
ববি বলছিলেন, আরেকটা বড় কারণ হলো, ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড়দের ক্রিকেট সংষ্কৃতি ও সর্বোচ্চ স্তরের ক্রিকেটের সাথে পরিচিত করা। তিনি বলছিলেন, ‘আমরা তখনও টেস্ট খেলি না। ওয়ানডেও খুব বেশী খেলার সুযোগ হয় না। ফলে বোর্ড হিসেবে আমরা সব ক্লাবকেই বিদেশী খেলোয়াড় আনার জন্য উৎসাহ দিতাম। এদের কাছ থেকে ড্রেসিংরুমে অন্য খেলোয়াড়রা ক্রিকেট কালচারটা বুঝতে পারতো।’
ইলিংওয়ার্থকে যে কারণেই আনা হোক না কেনো, তিনি আবাহনীর ঘরের ছেলেতে পরিণত হয়েছিলেন। আবাহনীর কর্মকর্তারা এখনও তার মিশুক স্বভাব মনে করতে পারেন। ববি বলছিলেন, ‘একটা ধারণা থাকে যে, ইংলিশ খেলোয়াড়রা বুঝি নাক উচু হয়। কিন্তু ও অসাধারণ একটা খেলোয়াড় ছিল। কোনো কিছু নিয়ে কমপ্লেইন নেই, কোনো নাক উচু ব্যাপার ছিল না। সবার সঙ্গে মিশতে পারত খুব ভালো। ইনফ্যাক্ট ওর সাথে আবাহনীর অনেকেরই এখনও সম্পর্ক আছে।’
ইলিংওয়ার্থ খেলা ছাড়ার পর আম্পায়ারিংয়ে জড়িয়েছেন। আম্পায়ার হিসেবেই সেই জীবনের পর আবার প্রথম বাংলাদেশে এসেছিলেন ২০১২ সালে। সেবার এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই দুটি টেস্ট পরিচালনা করতে এসেছিলেন তিনি। এরপরও ২০১৩ সালের নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর, ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১৫ সালের দক্ষিণ আফ্রিকার বাংলাদেশ সফর পরিচালনা করেছেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৮ সালেও এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফরের সময় এক প্রান্তে ছিলেন ইলিংওয়ার্থ।
মানে, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছেন আর কী!