রোনালদো, দ্য চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যান

তুলনামুলক দূর্বল দলের সাথে লিগের প্রথম ম্যাচে হেরে আত্মবিশ্বাসে নির্ঘাত এক জলরাশী সমপরিমাণ ঘাটতি নিয়ে খেলতে নামা একটা অতিরিক্ত চাপের কারণ সৃষ্টি করে। তার উপর যদি খেলা হয় ঘরের মাঠে তবে তো তা আরো বেশি চাপে ফেলে দেয়। প্রত্যাশার চাপ, ভাল করার চাপ, না জিততে পারার।

এতসব চাপ মাথায় নিয়ে ‘দ্য থিয়েটার অব ড্রিম’-এ খেলতে নেমেছিল ম্যানচেস্টার। প্রতিপক্ষ স্প্যানিশ ক্লাব ভিয়ারিয়াল। যথেষ্ট শক্ত প্রতিপক্ষ ভিয়ারিয়াল। তার প্রমাণ মিলিছে পুরো ম্যাচ জুড়েই।

তবে আপনার দলে যদি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো থাকে, তাহলে আপনার খুব বেশি চিন্তায় ঘুম হারাম করবার কোন কারণ বিশেষ একটা নেই। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কতশত ম্যাচ যে তিনি রিয়াল মাদ্রিদকে একাই জিতিয়েছেন তার হিসাব কষতে গেলে দিন পার হয়ে যাবে, আর বড় হবে লেখা। তাই হিসাব বাদ দিয়ে গত ম্যাচ নিয়েই আলোচনা সেরে নেওয়া যাক।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডের শুরুর দিনে অঘটন ঘটেছে, আবার ঠিক উল্টো ঘটনা হিসেবে গোল খড়া কেটেছে লিওনেল মেসির। দ্বিতীয় রাউন্ডের দ্বিতীয় দিনে তাই ফুটবল সমর্থকেরা অপেক্ষায় ছিলেন অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটবার। কারণ ফুটবল এক চরম অনিশ্চয়তার খেলা। অঘটন এদিনও ঘটেছে ১৯৬০/৬১ মৌসুমের পর এবার বার্সেলোনাকে হারিয়েছে পর্তুগালের ক্লাব বেনফিকা। কিন্তু এদিনের সব আলো আগের দিনের মেসির মতো করে নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।

ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে ম্যান ইউ কোচ ওলে গুনার সোলশায়ার তাঁর সবচেয়ে পছন্দের একাদশ নিয়েই নেমেছিলেন ৪-৩-২-১। জ্যাডন সাঞ্চো, গ্রিনউড, পগবা, ব্রুনো ফার্নান্দেজদের নিয়ে সাজানো আক্রমণভাগের নেতৃত্বে স্বভাবতই রোনালদো। ওল্ড ট্রাফোড, ঘরের মাঠ, দর্শকদের চাপ ছাপিয়ে যায় তাঁদের উৎসাহে। তাই হয়ত জয়ের আশাতেই খেলতে নেমেছিল রেড ডেভিলরা।

জয় ঠিকই পায় ম্যান ইউ কিন্তু তা ছিল কষ্টার্জিত। খেলার প্রথম মিনিট থেকে ছিলো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, ভিয়ারিয়াল খেলেছিল সমান তালে। আক্রমণ, প্রতি-আক্রমণ চলেছে প্রথমার্ধের পুরো সময় জুড়ে। দু’দলই বেশকিছু আক্রমণ উভয়পক্ষের রক্ষণে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে গোল শূন্যতা নিয়ে ড্রেসিং রুমে যায়।

দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণের হার সমান গতিতেই চলতে থাকে। ম্যাচের ৫৩ মিনিটে কাঙ্খিত গোলের দেখা পেয়ে যায় ভিয়ারিয়াল। কাউন্টার অ্যাটাকে আরনাউত ডানজুমার বাড়ানো বলে বল জালে জড়ান ভিয়ারিয়াল স্ট্রাইকার পাকো আলকাসেয়ার।

তারপর হন্যে হয়ে গোলের সন্ধান করতে থাকে রেড ডেভিলরা। বেশি একটা কালক্ষেপণ করতে হয়নি তাঁদেরকে। ম্যাচের ৬০ মিনিটের মাথায় অসাধারণ শক্তিশালী ভলিতে গোল আদায় করে নেয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ব্রাজিলিয়ান লেফট ব্যাক অ্যালেক্স টেলেস।

মাঠের ডান কর্ণার থেকে ব্রুনো ফার্নান্দেজের চিপ করা বল ডি-বক্সের বাইরে আসে। উড়ন্ত বলেই নিজের পূর্ণ শক্তিতে শট চালান টেলেস। মনোমুগ্ধকর! অসাধারণ ফুটবলীয় শৈলী! ১-১ গোলের সমতায় চলতে থাকে বাকি ম্যাচ।

দু’দল প্রায় নিশ্চিত ড্র হতে চলেছে ম্যাচ। কিন্তু ইউসিএলে ম্যাচে রোনালদো থাকবেন নির্জীব তা কি করে হয়! নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ। অতিরিক্ত ফাউল হওয়ায় সময় নষ্ট হয়েছে বেশ খানিকটা। তাইতো অরিরিক্ত আরো পাঁচ মিনিটের খেলা হবে ঘোষোণা এলো চতুর্থ অফিসিয়ালের কাছ থেকে। চলছে খেলা। দু’দলই খুঁজে বেড়াচ্ছে গোলের ঠিকানা।

ম্যাচ শেষ হতে বাকি তখন আর কিছু সেকেন্ড। রোনালদোর এলো যে সময়, গোল এবার কে ঠেকায় ? সংবদ্ধ আক্রমণে যখন লিংগার্ড ভিয়ারিয়াল রক্ষণে কুপকাত। তখন বল চলে যায় রোনালদোর পায়ে। ডান পায়ের জোড়ালো শট, হাতে লাগলো গোলকিপারের। কিন্তু তাঁর আর কি সাধ্যি, ঠেকায় শত রোনালদোর? বল জালে জড়িয়ে গেলো। তারপর আবার পুরো বিশ্ব দেখলো এক ছত্রিশ বছর বয়সী বুড়োর ফিটনেস। বুনো উল্লাসে ফেটে পড়লো পুরো ওল্ড ট্রাফোড।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেরা তারকা, আবার কেড়ে নিলেন সব আলো। শেষ মিনিটের গোলে জিতিয়ে নিলেন নিজ দলকে , বাগিয়ে নিলেন পূর্ণ তিন পয়েন্ট। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো খেলতে নামবেন আর রেকর্ড গড়বেন না তা হবে না, তা হবে না।

তিনি একক খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বোচ্চ ১৭৮ ম্যাচে অংশগ্রহণ করার রেকর্ড নিজের ঝুলিতে। এর পাশাপাশি এক গোল করে ১৩৬ এ নিয়ে গেলেন নিজের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গোল সংখ্যা। দ্বিতীয়তে থাকা মেসির সাথে তাঁর এখন গোল ব্যবধান ১৫। নিশ্চয়ই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এই মহাতারকা নিজেকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে যাবেন, যেই উচ্চতায় উঠতে বাকিদের কষ্ট করতে হবে এভারেস্টের চূড়ায় উঠবার মতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link