তিক্ততায় শেষ রোনালদোর ইউনাইটেড অধ্যায়

বিশ্বকাপ ফুটবল শুরুর আর মাত্র দিন তিনেক বাকি। তবে রোনালদো-ম্যান ইউ ইস্যু নিয়ে ফুটবল পাড়ায় উত্তাপ যেন থামছেই না। এবারের মৌসুম জুড়ে নিরুত্তাপ থাকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো উত্তাপ ছড়িয়েছেন কথা দিয়ে। তাঁর কথার তীরে বিদ্ধ হয়েছে ম্যান ইউ কোচ সহ সাবেক ফুটবলাররাও। আর সেই সব সূত্র ধরেই ধারণা করা হচ্ছে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাথে এখানেই বোধহয় রোনালদোর পথচলার ফুলস্টপ বসে গেল! 

সম্প্রতি পিয়ার্স মরগ্যানের সাক্ষাৎকারে পর্তুগিজ সুপারস্টার দাবি করেন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে তিনি প্রতারিত হয়েছেন। তাছাড়া ইউনাইটেড কোচ এরিক টেন হ্যাগকে নিয়ে বলেন, তাঁর প্রতি কোনো সম্মান নেই রোনালদোর। এমনকি রোনালদো সেই সাক্ষাৎকারে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বর্তমান মালিক গ্লেজার ফ্যামিলির দিকেও আঙুল তোলেন। 

আর রোনালদোর এমন বিবৃতির পরেই তোলপাড় শুরু হয়ে যায় ফুটবল বিশ্বে। তবে রোনালদোর এমন মন্তব্যের পরেও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে এখন পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। তবে একটি সূত্রে জানা যায়, রোনালদোর সেই সাক্ষাৎকার এখনও অসম্পূর্ণ থাকায় তারা বিষয়টি আরও কিছুদিনের জন্য বিবেচনায় রাখছে। বিবেচনাতে থাকলেও, ইতোমধ্যে একটি আভাস নিশ্চিতই হয়ে গিয়েছে যে, ওল্ড ট্রাফোর্ডে আর রোনালদোর ফেরা হচ্ছে না। সেটা এখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ম্যানেজমেন্টও চাচ্ছে না। 

ইএসপিএনের করা এক রিপোর্টে বলা হচ্ছে, এরিক টেন হ্যাগ নাকি বলেই দিয়েছেন রোনালদোর আর এই ক্লাবে খেলা উচিত না। অর্থাৎ ম্যান ইউ এর সাথে রোনালদোর সম্পর্কের পরিসমাপ্তি এখানেই ঘটছে , তা অনুমান করাই যায়।  ম্যান ইউ এর সাথে রোনালদোর দ্বিতীয় অধ্যায়টা ঠিক ঠাক আর জমে উঠলো না। দুই পক্ষের জন্য বিচ্ছেদটাই এখন শ্রেয়। 

সামনে জানুয়ারিতে উইন্টার ট্রান্সফার উইন্ডো। সে সময়েই সিআরসেভেন অন্য ক্লাবে পাড়ি জমাতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ইউরোপের সেরা ক্লাবগুলোর সাথে তাঁর পথচলা হবে কিনা সেটি নিয়ে প্রবল সন্দেহ থাকছে। কারণ সামার ট্রান্সফার উইন্ডোতেই তাঁকে বড় কোনো দল ভেড়াতে চায়নি। আর এমন বিতর্কিত কান্ডের পর, সেটির সম্ভাবনা বরং আরেকটু ক্ষীণই হয়েছে। 

পর্তুগালের ক্লাব স্পোর্টিং লিসবনের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন রোনালদো। এখন শোনা যাচ্ছে, শৈশবের সেই ক্লাবেই হয়তো ফিরে যেতে পারেন রোনালদো। গুঞ্জন আছে, স্পোর্টিং লিসবন থেকে রোনালদোকে নাকি সপ্তাহ প্রতি ৫ লক্ষ ইউরোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সৌদি আরবের একটি ক্লাব থেকেও তাঁর প্রস্তাব পাওয়ার কথা শোনা গিয়েছে। তবে, আপাতত এ সব ভেসে আসার খবর গুঞ্জনের মধ্যেই আটকে রয়েছে। আগামী বছরের জানুয়ারিতেই রোনালদো নতুন ভাগ্য নির্ধারণ হবে। 

যে তিক্ততা নিয়ে রোনালদোর ইউনাইটেড অধায়ের সমাপ্তি হতে চলেছে, সেই ম্যান ইউতেই তাঁর শুরুর সব সুখস্মৃতির জন্ম হয়েছে। নিজের প্রথম ব্যালন ডি অর পেয়েছিলেন ম্যান ইউয়ে খেলার সময়, ক্যারিয়ারের প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপাও জিতেছিলেন ম্যান ইউ এর জার্সি গায়ে চাপিয়ে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ছয় বছর কাটানোর পর রেকর্ড ট্রান্সফারে পাড়ি জমিয়েছিলেন রিয়াল মাদ্রিদে। আর সেখানে থেকেই তাঁর দুর্দান্ত গতিতে চলা। গ্রেটনেসের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।  

এরপর রোনালদো জুভেন্টার হয়ে আবারও এসেছিলেন ওল্ড ট্রাফোর্ডের লাল দুর্গে। কিন্তু এ বারের যাত্রাটা আর সুখকর হল না তাঁর জন্য। এবারের মৌসুম নিজেকে যেন হারিয়ে খুঁজছেন। পুরো মৌসুমে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩ টি গোলের দেখা পেয়েছেন।

রেড ডেভিলদের নেতৃত্ব দেওয়া ম্যাচে অ্যাশটন ভিলার কাছে হেরেছেন ৩-১ গোলে। ম্যাচের পুরো নব্বই মিনিটে খেলার সুযোগও পেয়েছেন কম ম্যাচে। এসব পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে যে বোমা ফাটালেন তাতে যেন বেরিয়ে আসল এতদিন পুষে রাখা সব ক্ষোভ। 

তবে দিনশেষে, এমন বিতর্কে বোধহয় ক্ষতিটা হল রোনালদোরই। কারণ, ধারণা করা হচ্ছে, ম্যান ইউ দিয়েই তিনি ইউরোপের টপ ফাইভ লিগে খেলার ইতি টানতে যাচ্ছেন। অর্থাৎ ইউরোপের ফুটবলে তাঁকে ভবিষ্যতে দেখা যাবে কিনা, সেটি নিয়েও সন্দেহ থাকছেন। তবে, নাম তাঁর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। খাদের কিনারা থেকে শীর্ষে ওঠার তাঁর সক্ষমতা আছে, অদ্ভুত ধরনের দৃঢ়চেতা মানসিকতা রয়েছে। আর সেই বলেই, ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই রোনালদোকে ফুরিয়ে যাওয়া বললে বড্ড বড় ভুল হবে।      

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link