মহামারি করোনার কারণে প্রায় একটি বছর থমকে গিয়েছিল মাঠের ক্রিকেট। তবে করোনার এই প্রকোপ থেকে বেরিয়ে আবার মাঠে ফিরেছে ক্রিকেট। এই ফেরার যাত্রাটা শুরু হয় ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের হাত ধরে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইংল্যান্ড সফরের মাধ্যমে মাঠে ফিরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট।
ক্রিকেটকে কীভাবে আবার মাঠে নিয়ে আসা যায় তা নিয়ে মোটামুটি সব ক্রিকেট বোর্ডই পরিকল্পনা করছিল। আসলে ক্রিকেটটাকে মাঠে ফেরানো একটু বেশিই জরুরি হয়ে গিয়েছিল বোর্ডগুলোর জন্য। বিশেষ করে ইংল্যান্ডের মত দেশ যাদের বেতন কাঠামো বেশ বড় মাপের। এত গুলো ক্রিকেটারের এত মোটা অংকের বেতন দিতে হিমসিমই খাচ্ছিল বোর্ডটি। ফলে তাঁরাই বের করলো এক নয়া থিওরি-জৈব বলয়। যেই থিওরি মেনেই এখন বাকি দলগুলোও মাঠে ফিরেছে।
তবে ইংল্যান্ড শুধু মাঠে ফিরেই খুশি নয়। তারা পরিকল্পনা করেছে কী করে তাঁদের জমে থাকা ম্যাচ গুলোও শেষ করা যায়। তারা ঠিক করেছে গতবছর করোনার জন্য খেলতে না পারা ম্যাচগুলো সব এবছরই খেলে শেষ করবে। সাথে এই বছরের ম্যাচ গুলো তো রয়েছেই। তবে ক্রিকেটাররা কিভাবে এত গুলো ম্যাচ টানা খেলবেন সেটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা।
এই সমস্যার ও একটি সমাধান বের করেছে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। তারা এবার বের করেছে রোটেশন পদ্ধতি। যেহেতু ক্রিকেটারদের পক্ষে টানা এতগুলো ম্যাচ খেলা সম্ভব নয় তাই তারা তাঁদের পাইপলাইনের ক্রিকেটারদের রোটেট করে খেলানোর সিদ্ধ্বান্ত নিয়েছে।
এই শ্রীলঙ্কা ও ভারত সিরিজেই তারা এই পদ্ধতির প্রয়োগ করেছে।
শ্রীলংকা ও ভারতের বিপক্ষে মোট ৬ টি টেস্ট কে তারা তিনটি ব্লকে বিভক্ত করেছে। প্রতিটি ব্লকে পড়েছে ২টি করে ম্যাচ। ক্রিকেটারদেরও ব্লক গুলোতে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। যারা প্রথম ব্লকের ম্যাচগুলো খেলবেন তারা দ্বিতীয় ব্লকে বিশ্রাম নিবেন। যেমন শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম ব্লকের টেস্ট দুটিতে বেন স্টোকস ও জোফরা আর্চারকে বিশ্রাম দিয়েছিল বোর্ড। আবার মার্ক উড, জনি বেয়ারস্ট্রোরা যেহেতু প্রথম ব্লকে খেলেছেন তাই দ্বিতীয় ব্লকে তাঁদের বিশ্রাম দেয়া হয়েছিল। তারা তাঁদের এই নীতিতে এতটাই অটল যে জেমস এন্ডারসন ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে এমন একটি স্পেল করার পরেও তাঁকে দ্বিতীয় টেস্টে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে।
ইংল্যান্ড জাতীয় দলের নির্বাচক এড স্মিথ বলেন, ‘আমরা বাস্তবতা মেনেই সিদ্ধান্ত গুলো নিয়েছি। আমরা বুঝতে পারছি ক্রিকেটারদের জন্য বিষয়টা একটু কঠিন। কেননা তারা ইংল্যান্ডের হয়ে প্রতিটি ম্যাচই খেলতে চায়। তবে তাঁদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থাটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। ক্রিকেটাররাও সেটা বুঝতে পেরেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘যেহেতু রোটেট করে খেলানো হচ্ছে তাই নতুন অনেক ক্রিকেটারই হয়তো খেলার সুযোগ পাবে। ফলে ইংল্যান্ডের পাইপলাইন কতটা মজবুত সেটাও পরীক্ষা করে নেয়া যাবে। যেহেতু আমরা সব ম্যাচে আমাদের মূল ক্রিকেটারদের খেলাতে পারবো না তাই আমাদের ম্যাচের রেজাল্ট ও খারাপ হতে পারে। তবে এই মুহুর্তে আমাদের হাতে আর কোনো অপশন নেই। ইংল্যান্ডের ক্রিকেটকে সচল রাখতে আমাদের এই ঝুকি টুকু নিতেই হচ্ছে।’
এদিকে জো রুট যেহেতু ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক তাই তিনি সবগুলো টেস্টই খেলবেন। তবে তাকে হয়তো ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে বিশ্রাম দেয়া হবে।
যদিও ইংল্যান্ডের এই পরিকল্পনা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে সত্যি বলতে এই বছর ১৭ টি টেস্ট খেলতে হলে ইংল্যান্ডের হাতে অন্য কোনো অপশন ও নেই। এই প্রক্রিয়া হয়তো খুব লম্বা সময় ধরে চলবে না বা চলা সম্ভবও না তবে এই পরিস্থিতি থেকে সামলে উঠার জন্য ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের এই পরিকল্পনার প্রশংসা করতেই হয়।