সেনা দেশগুলিতে, মানে দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে চতুর্থ ইনিংসেই খেলা কঠিন, প্রথম ইনিংসে নয়, এটা কি সত্যিই মেনে নেওয়া যায়? শচীন টেন্ডুলকারের ক্যারিয়ারের মধ্যভাগের আগে এরকম কোনো ধারণা ক্রিকেট বিশ্বে কি প্রচলিত ছিল?
সুনীল গাভাস্কার যখন চতুর্থ ইনিংসে প্রায় ৬০ গড় রেখেছেন তখন কি কেউ বলত যে চতুর্থ ইনিংস খেলা সবচেয়ে কঠিন? ইন্ডিয়া বা এশিয়াতে হতে পারে, কিন্তু সেনা দেশগুলোতে প্রথম ইনিংসেই পিচের ফ্রেশনেস বেশি থাকে আর ফাস্ট বোলিং খেলা কঠিন হয়। ওই দেশগুলিতে মূলত স্পিনিং ট্র্যাক হয় না, তাই পঞ্চম দিনেও পিচ ব্যাটিং এর উপযোগী থাকে, অন্তত ভারত বা বাংলাদেশ বা শ্রীলঙ্কার মতো মাইনফিল্ড হয়ে যায় না।
আমরা অনেকক্ষেত্রেই দেখেছি, শচীনের ব্যর্থতা মানেই কাজটা কঠিন হবে এমন একটা ধারণা মানুষের মনে গেঁথে যায়। ক্রিকেটে এমন অনেক ঘটনা থাকে যার ব্যাখ্যা কোনো পরিসংখ্যান দিয়ে হয় না। যেমন সৌরভ গাঙ্গুলির ১১ টা ফাইনালে হার, বা বিরাট কোহলির গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে টস জেতার শতাংশ ৩০% এর কম।
যার কোনো যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা নেই। সেনা দেশে সুনীল গাভাস্কার, বিরাট কোহলি, গর্ডন গ্রিনিজ, গ্যারি কার্স্টেন, রস টেলর, জিওফ বয়কট, গ্রায়েম স্মিথ, নাসের হুসেইন – এদের সবার চতুর্থ ইনিংসের গড় অনেক ভাল। গাভাস্কার ছাড়া বাকিদের কেউ টেস্ট ব্যটার হিসেবে শচীনের চেয়ে বড় ব্যাটসম্যান এমন কথা শোনা যায় না কারও মুখে।
চতুর্থ ইনিংস খেলা বাস্তবে এতটাই কঠিন হলে এরা এবং এরা ছাড়াও অনেক ততটাও লিজেন্ডারি নন এমন মানের ব্যাটসম্যান ভালো করলেন কিভাবে? সত্যিই চতুর্থ ইনিংস খেলা সেনা দেশে বেশি কঠিন নাকি শচীন আউট হলেই সেটা ম্যাচের সেরা ডেলিভারির মত এটাও একটা মিথ, যা শচীনের ব্যাখ্যাহীন ব্যর্থতার কারণে প্রচলিত হয়েছে?
এখানে আলাদা করে বলতে হয় স্যার ভিভ রিচার্ডসনের কথা। এই ভদ্রলোক ১৯ টেস্টের মধ্যে ১০ বার চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করে ৭৭.৬ গড়ে ৪৬৬ রান করেছেন, হ্যাঁ, সেনা দেশেই, যদিও তখন দক্ষিণ আফ্রিকা ছিল না। আর এই গড় স্বয়ং স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের থেকেও বেশি।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলেছেন এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে চতুর্থ ইনিংসে সেরা হলেন মাইকেল হাসি। এরপরে আছেন যথাক্রমে কেন উইলিয়ামসন, ডিন এলগার, রিকি পন্টিং।
সেনা দেশের কেউ নন, এবং এই চারটি দেশেই খেলেছেন এমন প্লেয়ারদের মধ্যে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ গড় ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিবনারায়ণ চন্দরপলের। – ৫৪.৬ গড়ে ৫৪৬ রান করেছেন তিনি। এখানে ন্যূনতম ক্রাইটেরিয়া – কমপক্ষে ১০ টি চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করতে হবে। এরকম করলে ঋষাভ পান্তও আসতে পারতেন।