অধিনায়কের পছন্দের খেলোয়াড় দলে নেবার রীতি নতুন নয়। দল নিয়ে অধিনায়ককেই মাঠে লড়তে হয়,তাই অধিনায়কের পছন্দকে গুরুত্ব দেয়াও দোষের কিছু নয়। কিন্তু, কোনো অধিনায়ক যোগ্য কাউকে বাদ দিয়ে নিজের পছন্দের কাউকে দলে চাইলে – আর এ বিষয়ের সাথে নির্বাচকরা একমত না হলে সেটা নিয়ে আলোচনা হওয়াই স্বাভাবিক।
জানা গেল, এবার নাকি তেমনটাই হয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিতব্য ইংল্যান্ড সিরিজের দল নির্বাচন নিয়ে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আসন্ন হোম সিরিজের দল ঘোষণার পরই সাদা বলের ক্রিকেটে অনেকটা নিয়মিত হয়ে যাওয়া স্পিনার নাসুম আহমেদের জায়গায় তাইজুল ইসলামকে দলে নেবার প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় নির্বাচকদের।
তাইজুলের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু জানিয়েছিলেন, স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথের পরামর্শেই দলে নেয়া হয়েছে তাইজুলকে। কিন্তু এর দিন দুয়েক পরেই হেরাথ জানান, বিষয়টি পুরোপুরি সঠিক নয়। কিন্তু এবার বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এক সাক্ষাৎকারে থলের বেড়াল বের করে আনলেন। জানালেন, অধিনায়ক তামিমের পছন্দেই দলে এসেছেন তাইজুল।
ক্রিকেট পাড়ায় গুঞ্জন, তামিমের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো তাইজুলের। সেই সম্পর্ক তামিমের ‘কোটা’ প্রয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। শুধু তাই নয়, দলের ১৫ তম সদস্য হিসেবে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দল থেকে বাদ পড়া ব্যাটার ইয়াসির আলী রাব্বিকেও দলে চাইছেন তামিম। এ নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকদের মধ্যে অসন্তুষ্টি অনেকটাও স্পষ্ট। নির্বাচকরা মনে করছেন, এতে করে অনেক যোগ্য খেলোয়াড়ই বঞ্চিত হচ্ছে।
অধিনায়কের পছন্দের খেলোয়াড় দলে নেওয়া নিয়ে এর আগেও সরগরম হয়েছে ক্রিকেট পাড়া। ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ড সফরের দলে সাব্বির রহমানকে দলে চেয়েছিলেন তখনকার অধিনায়ক মাশরাফি। কিন্তু তখন শৃঙ্খলাজনিত কারণে নিষিদ্ধ সাব্বিরকে দলে নেয়ায় আলোচনা কম হয়নি। এছাড়াও অধিনায়ক হবার পরেই ওপেনার ইমরুল কায়েসকে মিডল অর্ডারে খেলানোর ইচ্ছা গণমাধ্যমেই বলেছিলেন তামিম। কিন্তু কোচ ও ম্যানেজমেন্টের অনিচ্ছায় তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।
স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথ তাইজুলকে দলে নেবার দায় নিতে না চাওয়ার পর মিনহাজুল আবেদীন নান্নু কাছে ফের এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তিনি বিষয়টাকে ‘ভেতরের তথ্য’ বলে এড়িয়ে যান। পরে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন আসল তথ্য প্রকাশ করে দেয়ায় হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন নান্নু।
লালবলের ক্রিকেটে নিয়মিত হলেও সাদা বলের ক্রিকেটে ক্যারিয়ারে কখনোই নিয়মিত ছিলেন না তাইজুল। ২০১৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেকেই হ্যাট্রিকের বিশ্ব রেকর্ড করার পরেও গত আট বছরে মোটে ১২ টি ওয়ানডে খেলেছেন এই বাঁ-হাতি স্পিনার।
গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে দীর্ঘদিন পর ওয়ানডে দলে ফিরে প্রথম ম্যাচেই পাঁচ উইকেট পেলেও পরের জিম্বাবুয়ে সিরিজটা ভালো যায়নি তাঁর। এছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেটেও সাদা বলে রেকর্ড খুব ভালো না তাইজুলের। সর্বশেষ বিসিএলের ওয়ানডে টুর্নামেন্টে তিন ম্যাচে তিন উইকেট পান তিনি। এছাড়া বিপিএলে তো একাদশেই জায়গা পান না খুব বেশি।
এমন পরিস্থিতিতে তাইজুলের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। এদিকে, আবার দ্বিতীয় মেয়াদে কোচ হয়ে আসা চান্দিকা হাথুরুসিংহেও সাদা বলের জন্য খুব বেশি পছন্দ করেন না তাইজুলকে। ২০১৫ বিশ্বকাপ চলাকালীন এই স্পিনারকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন চান্দিকা। তাই তাইজুলকে দলে নেয়াটা অনেকটাও হিতে বিপরীত হতে পারে। এদিকে ১৫ তম সদস্য হিসেবে নির্বাচকরা মাহমুদুল হাসান জয়কে দলে চাইলেও অধিনায়ক চাইছেন অফ ফর্মে থাকা ক্রিকেটার রাব্বিকে।
দলের প্রয়োজনে অধিনায়ক কাউকে দলে চাইতেই পারেন। দলের কখন কাকে দরকার তা সবচেয়ে ভালো বোঝার কথা অধিনায়কের। কিন্তু অধিনায়ক দলের উর্ধ্বে গিয়ে ব্যক্তিগত পছন্দকে গুরুত্ব দিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দলটাই। তামিমের এমন আচরণে তাই মিরপুরে ক্রিকেট পাড়ায় কান পাতলেই শোনা যায় সমালোচনা। টিম ম্যানেজমেন্ট কিংবা বোর্ডের অনেকেই খুশি নন এই কোটা পদ্ধতিতে।