ছবির মানুষটাকে চেনেন? একটু অচেনাই লাগছে বোধহয়। তাই না? মনশ্চক্ষুতে দেখতে পাচ্ছি আপনার চোখজোড়া উৎসাহী হয়ে উঠেছে। চেহারাতেও একটু অস্থির ভাব। আপাতত এই অস্থির ভাবনায় ডুবে থাকুন, যদি তাকে চিনে না থাকেন। আর যারা নিউরনের গোডাউন হাতড়ে চিনে ফেলেছেন, তারা তো একটু বিজয়ীর হাসি হাসছেন মনে মনে। এই ভেবে ‘চিনে ফেলেছি’। হাসতে থাকুন আপনারাও।
নাম পরিচয় পরেই দিই। যারা চেনেননি তাদের শুধু এতটুকু বলে রাখি তার ডাকনাম ‘দ্য ডেমন’। প্লিজ ব্রাউজারের ট্যাবটা কেটে দিন। আমি দেখতে পাচ্ছি নতুন একটা ট্যাব খোলার জন্য আপনি উশখুশ করছেন। আহা! এত অধৈর্য্য হলে চলবে? ছায়াসঙ্গী গুগলকে জিজ্ঞাসা করে কী পাবেন? বড়জোর গোটা কয়েক ইংলিশ আর্টিকেল। সেসবে যাচাই বাছাই করে আপনার তৃষ্ণা মিটবে হয়তো। তবে এই অধমের কাঁচা হাতের লেখাটাও খারাপ লাগবে না বোধহয়। একটু সাথে থাকুন।
ছবির মানুষটার প্রথম পছন্দ ছিল ফুটবল। বুটজোড়া আর বড় চর্মগোলকেই সঁপেছিলেন মনপ্রাণ। প্রয়াত দাদার সাথে সেই জুটিতে বাঁধ সাধলেন তার মা। যিনি আবার ক্রিকেট ফুটবলসহ যাবতীয় সব খেলাই খেলেছেন। মেয়ের ঘাড়ে তুলে দিলেন ক্রিকেটের ভুত। কিটব্যাগ এল, কোচিং চলল। টেক্সট বইয়ের সাথে ডেস্কে ক্রিকেটের বইও জায়গা করে নিলো। ক্রিকেটেই বসবাস।
তার মা নিজে বড় হয়েছেন ছেলেদের সাথে খেলে। খেলতেন মূলত মনের আনন্দে। মেয়েও হাঁটলেন একই রাস্তায়। পার্থক্য ছিল কেবল এক জায়গায়। শুধু আনন্দের জন্য না, তিনি খেলতেন সবাইকে ছাড়িয়ে যেতেও। সেটা অবশ্য ভালোই পেরেছেন। অনেক ছেলেই তখন বলতো, ‘ওর সাথে আমি খেলব না। ও আমার চেয়ে ভালো।’
ছেলেদের মধ্যে তাঁর চেয়ে ভালো কেউও ছিলেন। ভারনন ফিল্যান্ডার। আফ্রিকার সেরাদেরই একজনই হয়ে ওঠেন পরবর্তীতে। সেই ফিল্যান্ডার আউট হতেন তার বলে। খুব অপছন্দ ছিল ব্যাপারটা ফিল্যান্ডারের। অবশ্য বল হাতে নিয়ে ছবির মানুষটাকে সামনে পেলে সেই অপছন্দের ব্যাপারটার মীমাংসা করতে চাইতেন ফিল্যান্ডার।
এমন অনেক গল্পই আছে। সেসব থাক। এবার একটু সামনে আগাই চলুন। কোনো ট্রায়াল-ফায়ালের ধার ধারেননি। ক্লাব ক্রিকেটের কোচ বললেন, এই মেয়েকে আমি খেলাব। সেখানে গিয়ে নাম পড়ে গেল ‘দ্য ডেমন’। ছোট্ট শরীর নিয়ে এতো জোরে বল করে মেয়ে!
ছোট্ট মেয়ে নিজেও অবাক হয়ে কোচকে প্রশ্ন করে, ‘আমি এত জোরে বল করি কেন?’ কোচ কী বলেছিলেন তার মনে নেই। তবে সেই উত্তর প্রতিনিয়ত খুঁজে বেড়িয়েছে তার প্রতিপক্ষ। সময়ের সাথে বলের গতিও যে বেড়েছে।
আন্দ্রে নেলকে ফলো করতেন। আনকনভেনশনাল বোলিং অ্যাকশন। আর তুমুল গতির ডেলিভারি। ফলো করলে কী হবে? অমন ওয়াইড স্টান্সে, দুই পা দুদিকে ছড়িয়ে দিয়ে বল করা তো কঠিন। নেলের মতো না পারলেও, তার স্পিরিট ঠিকই ছিল ভেতরে। বাউন্সার, স্লোয়ার আর ইনসুইংগারে আবার ডেল স্টেইনের সাথে নিজের মিল খুঁজে পান। দারুণ না? দুই প্রজন্মের দুই ফাস্ট বোলারের ব্লেন্ড।
দুটোর মিশেলে তার টিমমেটরাই ভুগেছেন। বাধ্য হয়েই বলেছেন, ‘একটু আস্তে বল করবে? বাউন্সারটা করো না। এসে লেগে যাবে।’ টিমমেটরা বেঁচে গেছেন। কিন্তু প্রতিপক্ষের তো রক্ষা নেই। আর এত কথা বললাম, অর্জন কী? সেটাও বলি। নারীদের ওয়ানডের চতুর্থ সর্বোচ্চ ও টি-টোয়েন্টিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক।
একাগ্রতার একটা উদাহরণ দিই। টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগার হচ্ছে ১২/৫। সেটার মালিক তিনি। পেছনের গল্পটাও শুনুন।
পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই ম্যাচের আগের রাতে কোচদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এর মাঝে বলে বসলেন, কাল কম হলেও চারটা উইকেট চাই। জুটে গেল পাঁচটা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, চার নাম্বারটা পাওয়ার পর তিনি হাসছিলেন। কী ভাবছেন? চাওয়ার সাথে পাওয়া মিলে গেল বলে? না, তিঞ্জ হাসছিলেন, জানতেন আরেকটা উইকেট ঢুকতে চলেছে পকেটে। আত্মবিশ্বাস বটে!!
ধাপে ধাপে উঠে আসার গল্প, এখান থেকে ওখানে, ক্যারিয়ার, আপস এন্ড ডাউন্স, টার্নিং পয়েন্ট আর স্ট্যাটস। ওসব তোলাই থাকুক। একটা ইন্টারেস্টিং তথ্য দিই।
গতির জন্য নাম পড়ে গেছে দ্য ডেমন। কিন্তু বড় মঞ্চে ডেমন হওয়ার আগেই কাজ করেছেন ‘স্পিড’ নিয়ে। স্পিড পয়েন্ট টেকনিশিয়ান, সেটাই তার প্রথম পেইড জব। স্পিড পয়েন্ট টেকনিশিয়ান আবার কী? বোলিং মেশিন মতো কিছু নাকি?নাহ, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড যেখানে সোয়াইপ করে সেটাকেই স্পিড পয়েন্ট বলে। মিল আছে বটে!
অবসরে রান্নাবান্না করতে পছন্দ করেন। সিগনেচার ডিশ মাটন কারি, প্রচুর ঝাল দিয়ে। টিমমেটদের খাওয়ান? না, কারণ ঝাল তারা খেতে পারেন না। তাই সোজাসাপটা জবাব ‘না’। ফাস্ট বোলাররা তো এমনই হবে। তুমুল ঝালের মাটন কারি, সোজাসাপটা,একাগ্র, নিবিড়।
নামটাই তো বলা হয়নি তাঁর। শবনিম ইসমাইল।