বা হাতের একটা ইনসুইং ডেলিভারি। স্ট্যাম্প তাতে ছত্রখান। হতভম্ব ব্যাটার। দু’হাত প্রসারিত করে আকাশ পানে একে দিলেন চুম্বন। মুহূর্তের মধ্যে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার সাথে আমরা সবাই নিশ্চয়ই পরিচিত। শাহীন শাহ আফ্রিদি বহুবার এমন দৃশ্যের মঞ্চায়ন ঘটিয়েছেন। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তেমন উদযাপন নিশ্চয়ই তিনি নিয়মিত করতে চাইবেন।
কেননা একটা কষ্ট যে জমে আছে তার বুকের মধ্যে খানে। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল যে তিনি খেলতে পারেননি পুরোটা। নিজেকে নিঙড়ে দিয়ে দলকে জেতাতে পারেননি শিরোপা। ১১ খানা বল করতে পারেননি। ক্যাচ ধরতে গিয়ে হাঁটুতে ব্যথা পান। এরপর আর ফাইনালে নিজ ছন্দে বোলিংটা করা হয়ে ওঠেনি।
ঠিক সে কারণেই হয়ত শাহীন আফ্রিদি মুখিয়ে থাকবেন নিজের সেরাটা উজাড় করে দেওয়ার জন্য। তবে এছাড়াও রয়েছে আরও কারণ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে তার অধিনায়কত্ব নিয়ে হয়েছে জলঘোলা। শেষ অবধি তাকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে অধিনায়কের পদ থেকে। সেই ক্ষোভ কিংবা অভিমানও নিশ্চয়ই পুষে রেখেছেন শাহীন।
আহত বাঘ নাকি সবচেয়ে ভয়ংকর। শাহীনের হৃদয়ে যে হয়েছে ক্ষতের ছড়াছড়ি। তিনি ঠিক কতটা হিংস্র তা নিশ্চয়ই বলে দেওয়ার নয়। মাত্র দু’টো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছেন শাহীন। ১৩ ইনিংসে নিজের গতির ঝড় তুলেছেন বাইশ গজে, উইকেট বাগিয়ে নিয়েছেন ১৮টি। তাতেও অন্তত তার শিকারি মনোভাবের প্রতিফলন ঘটে।
শুধু যে শিকার করেই ক্ষান্ত হন তিনি, তাও তো নয়। রান খরচেও বেশ কৃপণতার পরিচয় দিয়েছেন ২০২১ ও ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। মাত্র ৬.৪৮ ইকোনমিতে রান দিয়েছেন। প্রশংসা না করে যে উপায়ও খুব বেশি বাকি নেই। একা হাতে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা যে শাহীন লালন করেন, সেটাও নতুন করে বলবার নয়।
পাকিস্তানের এবারের বিশ্বকাপের পেস আক্রমণে নিয়ে খানিকটা রয়েছে শঙ্কা। মোহাম্মদ আমির অবসর ভেঙে ফিরেছেন, তবে পারফর্ম করতে পারছেন না আশানুরূপ। অন্যদিকে, হারিস রউফ সদ্যই ইনজুরি কাটিয়ে ফিরেছেন বিশ্বকাপের আগে। এই যখন পরিস্থিতি তখন পাকিস্তানের পেস আক্রমণের দায়িত্ব শাহীনকে নিজ কাঁধেই তুলে নিতে হবে।
পেস আক্রমণের নেতৃত্ব দেওয়ার মত বলিষ্ঠ কাঁধ রয়েছে শাহীনের। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৬৫ ম্যাচে ৯১ উইকেট শিকার করা শাহীন অন্তত জানেন উইকেট কি করে আদায় করতে হয়। তাছাড়া রান আটকে রাখার কাজটাও জানা তার।
শেষ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শিরোপার খুব কাছ থেকেই ফিরেছে পাকিস্তান। এদফা শিরোপা জয়ের জন্যই মাঠে নামবে ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়নরা। আর সে যাত্রায় শাহীনই হতে চলেছেন পাকিস্তানের অন্যতম সেরা হাতিয়ার। সকলের প্রার্থনা সম্ভবত শাহীনের ইনজুরি মুক্ত থাকা।