‘ভুল করেছেন’ – আবারো স্বীকার করে নিলেন সাকিব আল হাসান। জুয়ারির কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েছিলেন। কিন্তু, সে কথা জানাননি আইসিসি কিংবা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি)। সেই দায়ে তাঁকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে আইসিসি।
বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডারের নিষেধাজ্ঞা এখনো চলছে। এই সময়ে যতবারই কোনো সাক্ষাৎকারে মুখোমুখি হন, তখন ঘুরে ফিরেই আসে সেই ‘তথ্য গোপন’ করার প্রসঙ্গ। এবার ক্রিকেট বিষয়ক গণমাধ্যম ইএসপিএন ক্রিকইনফোর অনুষ্ঠান ‘ক্রিকেটবাজি’-তে যেমন জিজ্ঞেস করলেন সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার দীপ দাশগুপ্ত।
গেল অক্টোবরের কথা। আইসিসির দূর্নীতি বিরোধী নীতিমালার তিনটি ভঙ্গ করেন সাকিব। দু’টি টুর্নামেন্টে তাঁর কাছে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব আসে ২০১৮ সালে। একটা হল সে বছরের জানুয়ারির ত্রিদেশীয় সিরিজ, আর সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে আইপিএল ম্যাচ। তবে, দুবারই আইসিসিকে জানাতে ব্যর্থ হন সাকিব। তাই তাকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। নিষেধাজ্ঞা শেষে আগামী ২৯ অক্টোবর তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন।
সাকিব বলেন, ‘আপনাকে সৎ থাকতে হবে। আপনি মানুষকে মিথ্যা বলতে পারবেন না, তা যাই ঘটুক না কেন। তারপরও মানুষ ভুল করেই। কেউ শতভাগ সঠিক হতে পারে না। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, ভুলগুলো মুছে আপনি আবার ফিরতে পারেন। অন্যদের আপনার ভুলের ব্যাপারে সতর্ক করতে পারেন। আপনার পথে আসতে নিষেধ করতে পারেন।’
‘এটা অন্য কারো ক্ষেত্রেও হতে পারতো। আমি এই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছি। আমার ক্ষেত্রে যা হয়েছে, তা থেকে অন্য কেউও শিক্ষা নিতে পারে। আমি প্রথম দিন থেকেই সৎ থাকতে চেয়েছিলাম। যখন আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তখন কোনো কিছুই লুকাইনি। আমি সোজাসাপ্টা বলি – আমি ভুল করেছি। এটা আমার মত খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে হওয়ার উচিৎ নয়। আমি এর জন্য ক্ষমা চেয়েছি। আমি এসব ভুলে সামনে এগোতে চাই, আমি চাই সবাই আমার ভুল থেকে শিক্ষা নিক।’ যোগ করেন সাকিব।
২০০৯৯ সালে প্রথম বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব পান সাকিব। এরপর থেকে অনেক বিতর্কই সঙ্গী হয়েছে তাঁর। বোর্ড সভাপতি, নির্বাচক এমনকি গণমাধ্যমের সাথেও তাঁর গোল বাঁধে। পূর্ণ মেয়াদে অধিনায়কত্ব পাচ্ছেন না এই নিয়ে ২০০৯ থেকে ২০১০ সাল অবধি প্রায়ই ক্ষোভ প্রকাশ করেন গণমাধ্যমে। সাকিব বিশ্বাস করেন, তিনি এখন নিজেকে মানুষ হিসেবে অনেকটাই পাল্টেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি খুব তরুণ বয়সে দায়িত্ব পাই। ভুল তো হবেই। যখন অধিনায়ক হই, তখন বয়স ছিল ২১। আমি অনেক ভুল করেছি। মানুষ আমার ব্যাপারে অনেক কিছুই ভাবতো। এখন আমি বুঝি, আমর ঠিক কোথায় কোথায় ভুল ছিল। আর কিছু বিষয় আমি নিজেও ভুল বুঝতাম। এখন আমি ধরতে পেরেছি, উপমহাদেশে এসব হবেই।’
২০১১ সালে সাকিবের নেতৃত্বে বিশ্বকাপ খেলে বাংলাদেশ। পারফরম্যান্স আশানুরূপ ছিল না। নিজের দেশে প্রথম পর্বের বাঁধা টপকাতে পারেনি তারা। বরং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৮ রানে অলআউট হওয়ার পর সামর্থ্য নিয়েও ওঠে প্রশ্ন। বিশ্বকাপের পর আর মাত্র সাত মাস টেকে সাকিবের অধিনায়কত্ব। বিশ্বকাপের পর জিম্বাবুয়েতে গিয়েও সিরিজ হারার পর বিসিবি আর ভরসা রাখতে পারেনি।
দলে সেসময় মাশরাফি বিন মুর্তজা ও মোহাম্মদ আশরাফুলের মত সিনিয়র ক্রিকেটার ছিলেন। তাঁদের সাথে সাকিবের বনিবনা হত না বলে গুঞ্জনও ছিল। সাকিব বলেন, ‘সিনিয়ররা দলে থাকায় আমার কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি। দল হিসেবে আমরা একটু ভুগছিলাম। তাই নিজেদের খেলাটায় কি করে উন্নতি আনা যায় – সেদিকেই সবার চোখ ছিল। মাঠের বাইরে কিছু ইস্যু ছিল। গণমাধ্যমে সেসব খবর আসার পর ইস্যুগুলো অন্যদিকে চলে যায়। আমার মনে হয়, সেসবের দরকারও ছিল। আমি এখন যে অবস্থানে আছি, তাতে এ সব কিছুর অবদান আছে।’
জুলাই আগস্টে বাংলাদেশ দলের শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে, সেই সফর পিছিয়ে চলে গেছে অক্টোবরে। সেই সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার মঞ্চ প্রস্তত সাকিবের।