টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের স্তম্ভ হবার কথা ছিল তাঁর। সেই বিশ্বাসটা আরও জোর পেয়েছিল ত্রিদেশীয় সিরিজে অমন পারফর্মেন্সের পর। তবে বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসান যেন অন্য মানুষ। সাকিবের ব্যাট বাংলাদেশকে করেছে হতাশ, সাকিব নিজেও হয়তো হতাশই। আর চেনা সেই রূপ ফিরে পাবার শেষ সুযোগ আগামীকাল, পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ খুব শক্তিশালী কোন ব্যাটিং লাইন আপ নিয়ে যায়নি। এছাড়া এই ফরম্যাটে ব্যাটিং লাইন আপের নানা জায়গাতেই খুঁত ছিল। সেজন্যই এই দলটায় ব্যাট হাতে সবচেয়ে বড় আশার নাম ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। সাকিবের ফর্মও ভয় ধরিয়েছিল প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের বুকে।
অথচ বিশ্বকাপে এসেই বদলে গেল সব হিসেব নিকেশ। দলের অধিনায়ক কোনভাবেই নিজেকে খুঁজে পাচ্ছেন না। সাকিব আল হাসান সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেবে সেটাই হবার কথা ছিল। অথচ এই বিশ্বকাপটা একেবারেই স্মরণীয় করে রাখতে পারলেন না সাকিব। সুপার টুয়েলভের চার ম্যাচ খেলে ফেললেও ব্যাট হাতে এখন পর্যন্ত ভাল একটা ইনিংসের দেখা পাননি।
গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে ব্যাট করা সাকিব রান না পাওয়ায় ভুগতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকেও। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে চার ম্যাচ খেলা সাকিব রান করেছেন সব মিলিয়ে মাত্র ৪৪ রান। সর্বোচ্চ ২৩ রানের ইনিংস এসেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এছাড়া বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে করেছিলেন মাত্র ১ রান।
অথচ বিশ্বকাপে যাবার আগেই কী দুরন্ত ছিল সাকিবের ব্যাট। ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেললেন ৭০ রানের ইনিংস। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচেও তাঁর ব্যাট থেকে আসলো ৬৮ রান। এমন দুটি ইনিংস খেলে বিশ্বকাপে আসা সাকিবের কাছ থেকে বড় স্বপ্নই ছিল।
সাকিবও নিশ্চয়ই ব্যাট-বল হাতে এই বিশ্বকাপটা রাঙিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। তবে ব্যাট হাতে এখন পর্যন্ত চার ম্যাচেই ব্যর্থ তিনি। সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছেন ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের পর। লিটন দারুণ শুরু এনে দেয়ার পরেও অভিজ্ঞ ব্যাটার হিসেবে ম্যাচটা শেষ করে আসতে পারেননি সাকিব। আউট হয়ে গিয়েছিলেন মাত্র ১৩ রান করেই। ভারতের বিপক্ষে দায়িত্ব নিতে না পারাতেই সাকিব কে নিয়ে সমালোচনাটা আরও বেশি।
সে কারণেই হয়তো পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচে ফর্মে ফিরতে চান সাকিব। অ্যাডিলেডে অনুশীলনে ব্যাটিংটাতেই দিয়েছেন বাড়তি মনোযোগ। বেশিরভাগ সময়ই চেষ্টা করেছেন বড় শট খেলার। সাকিবের রানে ফেরাটা কতটা জরুরী সেটা তো সাকিবই সবচেয়ে ভাল বোঝেন।
ওদিকে তাঁর ব্যাটিং নিয়ে অনেক কথা হলেও আড়ালে থেকে যাচ্ছে বোলিং পারফর্মেন্স। বল হাতেও বিশ্বকাপটা খুব একটা ভাল কাটছে না তাঁর। চার ম্যাচ খেলে উইকেট পেয়েছেন পাঁচটি। এছাড়া বল হাতেও ছিলেন বেশ খরুচে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ওভার বোলিং করেই খরচ করেছিলেন ৩৩ রান।
সব মিলিয়ে ব্যাট কিংবা বল কোনটাতেই খুব একটা ভাল করতে পারছেন না সাকিব। দুই ডিপার্টমেন্টেই একসাথে ভুগছেন এমন সময় সাকিবের খুব কমই যায়। এবারও নিশ্চয়ই এই অফ ফর্মের মেয়াদ বেশি দীর্ঘ হবে না। শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষেই দেখা মিলুক চেনা সাকিবের।