বিপর্যয় সামলে শামীমের প্রথম ফিফটি

রীতিমত ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। ব্যাটাররা উইকেট এসেছেন, উইকেট খুইয়েছেন। ৪১ রানের মাঝেই ততক্ষণে প্যাভিলিয়নের পথে হেঁটেছেন স্বীকৃত ৫ ব্যাটার। আগের দুই ম্যাচের আগ্রাসী বাংলাদেশের তখন দলীয় সংগ্রহ ১০০ না পেরোনোর শঙ্কা। ঠিক এমন সময়েই যেন এক নিঃসঙ্গ লড়াই চালিয়ে গেলেন শামীম পাটোয়ারি।

শামীম পাটোয়ারি উইকেটে যখন আসলেন তখন বাংলাদেশের ইনিংসে কালো মেঘ জমেছে। এর মধ্যে আবার তাওহীদ হৃদয়ও বিদায় নিলেন। স্বীকৃত ব্যাটার বলতে তখন শুধু শামীমই। বাকিদের মতো শামীম থামলেন না। একাই লড়াই চালিয়ে গেলেন। টেল এন্ডারদের সাথে জুটি বেঁধে অন্তত বাংলাদেশের ইনিংসটা কিছুটা সংহত করার চেষ্টা করলেন। শামীমের সেই প্রচেষ্টা বাংলাদেশকে কিছুটা পথ দেখায়। বাংলাদেশ পায় মান বাঁচানো সংগ্রহ।

শুরুটা করেছিলেন কার্টিস ক্যাম্ফারকে একটি চার মেরে। এরপর নাসুম আহমেদকে নিয়ে ধীরগতিতে এগিয়েছেন। ইনিংসের ১৬ তম ওভারে ভাঙে সেই জুটিও। তবে বাংলাদেশের এমন বাজে দিনেও হল একটি রেকর্ড। নাসুমকে নিয়ে শামীম যে ৩৩ রানের জুটি গড়লেন, সেটিই এখন অষ্টম উইকেটে বাংলাদেশের  সর্বোচ্চ রানের জুটি।

শামীমের দৃঢ়তায় বাংলাদেশ ১০০ পেরোয় ১৬ তম ওভারেই। কিন্তু কেউই যে তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারছিলেন না। নাসুমের পর শরিফুল ইসলাম উইকেটে এসেছেন, ফিরেও গেছেন কয়েক বল বাদেই। ফলাফল, বাংলাদেশের ইনিংসকে কিছুটা এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব একার কাঁধেই নিতে হয় শামীমকে।

শামীম সেই লক্ষ্যেই হাঁটলেন। দলের সংগ্রহ ১০০ টপকানোর পর নিজের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ পাল্টালেন। কার্টিস ক্যাম্ফারের অফ স্টাম্পের বাইরে করা বলে চালালেন অনায়াসে। তাতে হলো ছক্কা! এরপর আরো আগ্রাসী শামীম। মার্ক অ্যাডারের পরের ওভারেই ফুলটস বলে হাঁকালেন আরো একটি ছক্কা। পরের বলে স্কুপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলেছিলেন, কিন্তু ফাইন লেগে থাকা হামফ্রিস আর সে ক্যাচটা লুফে নিতে পারেননি। আর ঐ শটেই চার পেয়ে শামীম পেয়ে যান আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি।

শামীমের ফিফটিতে বাংলাদেশও পায় ১২৪ রানের লড়াই করার মতো সংগ্রহ। ইনিংসের শেষ ওভারে ফিওন হ্যান্ডকে পুল করে মেরেছিলেন। কিন্তু শামীমের সেই শট আর বাউন্ডারি অতিক্রম করেনি। ডিপ স্কয়ার লেগে জর্জ ডকরেলের তালুবন্দী হয় সে শট। শামীম থামেন ব্যক্তিগত ৫১ রানে। শামীম থামার সাথে সাথে বাংলাদেশের ইনিংসও শেষ হয় ১২৪ রান।

৬১ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর স্কোরবোর্ডে ১২৪। কৃতিত্বটা শামীমকে দিতে বোধহয় একটুও আপত্তি থাকার কথা নয়। ডুবুরী হয়ে ডুবে যাওয়া বাংলাদেহশের ইনিংসকে রক্ষা করার প্রচেষ্টায় শামীম এ ম্যাচের নায়ক হয়তো হতে পারলেন না। কিন্তু পুরো ইনিংসে অসংখ্য নেতিবাচকতার ভিড়ে অন্তত তিনি ইতিবাচক ব্যাটিং করার চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশকে সম্ভাব্য লজ্জা থেকে বাঁচিয়েছেন। এটুকুই বা কম কিসে!

শামীমের ক্যারিয়ারটাই অবশ্য এক রোলার কোস্টার। শুরুটা করেছিলেন মারকুটে ফিনিশার হিসেবে। ক্লিন হিটিংয়ে কেড়েছিলেন সবার। কিন্তু সিংহভাগের চক্ষুশূল হতেও আবার বেশি সময় নেন নি। হারিয়ে গেলেন একসময়। বিপিএলে পারফর্ম করে আবারও ফিরলেন। ফেরাটা স্মরণীয় করলেন একটা ফিফটি দিয়ে।

অবশ্য এমন একটা ইনিংসের আভাস দিয়েছিলেন সিরিজের প্রথম ম্যাচেই। চার নম্বরে ব্যাটে সুযোগ পেয়েই খেলেছিলেন কার্যকরী ৩০ রানের ইনিংস। বাংলাদেশের ঘোর বিপদের দিনে এবার পেলেন ফিফটিও। শামীম নিশ্চয় এবারও সবার আগ্রহের কেন্দ্রে নিজেকে নিয়ে যেতে চাইবেন। একই ভাবে, সেই আগ্রহের কেন্দ্রচ্যূতি যেন না ঘটে সে দিকেও হয়তো চোখ থাকবে শামীমের।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link