ম্যাচ বাঁচাতে বাংলাদেশকে ব্যাট করতে হবে ১৯২ ওভার। জিততে হলে করতে হবে ৫১৩ রান। প্রায় অসম্ভব এমন দুটি সমীকরণকে সামনে রেখেই চট্টগ্রামে চতুর্থ ইনিংস শুরু করেছিল বাংলাদেশ। সাগরিকায় তৃতীয় দিনের শেষবেলায় ব্যাট করতে নেমেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও জাকির হাসান। দিনের শেষ ১২ ওভার টিকে থাকার কাজটা বেশ দৃঢ়তার সাথেই করেছেন এই দুজন।
তবে পথ হাঁটতে হবে অনেকটা। দিনের শেষে ৪২ রানে অপরাজিত থাকা এই দুই ওপেনারকেই নিতে হবে গুরুদায়িত্ব। নাজমুল হোসেন শান্ত খুব একটা ছন্দে নেই। আগের ইনিংসেও হয়েছিলেন গোল্ডেন ডাক। ওদিকে এই টেস্টেই অভিষেক হয়েছে জাকির হাসানের। ফলে কতটুকুই আর আশা করা যায় এই দুজনের কাছ থেকে?
প্রত্যাশার চাপ না থাকলেও আজ সকালে দায়িত্বটা নিজেদের কাঁধে তুলে নিলেন এই দুই ব্যাটার। সাগরিকায় টেস্টের চতুর্থ দিনের সকালকে পরিণত করলেন এক রাঙা সকালে। সাদা পোশাকের টেস্ট ক্রিকেটেও রং ছড়ালেন শান্ত, জাকির। যারা ধরেই নিয়েছিলেন এই টেস্ট থেকে বাংলাদেশের আর কিছু পাবার নেই তাঁদের একটু থামতে বললেন যেন দুজনে।
দুজনে মিলে একে একে ভাঙতে শুরু করলেন নানা রেকর্ড। নিজেরাও গড়লেন নতুন করে। ভারতের বিপক্ষে টেস্টে সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি এসেছিল তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের কাছ থেকে। ২০১০ সালে এই চট্টগ্রামেই দুজনে মিলে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিলে ৫৩ রানের ওপেনিং জুটি।
ফলে ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের ওপেনিং জুটি করতে বেশি সময় নেননি এই দুজন। ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকেন তাঁরা। শান্ত প্রথম ইনিংসে রানের খাতা খুলতে না পারলেও দ্বিতীয় ইনিংসে করলেন দায়িত্বশীল ব্যাটিং ১০৮ বল খেলে করেছেন নিজের অর্ধশতক। এরপর মোহাম্মদ সিরাজকে বাউন্ডারি মেরেই ওপেনিং জুটিতে শতরান পূর্ণ করে বাংলাদেশ।
আর এই শতরানও জায়গা করে নেয় ইতিহাসের পাতায়। কেননা টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে এর আগে বাংলাদেশের শতরানের জুটি ছিল মাত্র একটি। ১৩৩ রানের সেই জুটিটি এসেছিল নাফিস ইকবাল ও জাভেদ ওমর বেলিমের ব্যাট থেকে। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই জুটি গড়েছিলেন এই দুজন।
১৭ বছর পরে এসে আরেকবার চতুর্থ ইনিংসে শতরানের জুটি পেল বাংলাদেশ। সেটাও করলেন অনভিজ্ঞ দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ও জাকির হাসান মিলেই। তাঁদের সামনে সুযোগ আছে ১৩৩ রানের সর্বোচ্চ সেই জুটিকেও ছাড়িয়ে যাবার। কেননা চতুর্থ দিনের প্রথম সেশন শেষ হবার পরেও অপরাজিত আছেন এই দুজনে।
লাঞ্চের বিরতিতে যাবার আগে বাংলাদেশ করতে পেরেছে ১১৯ রান। তবে ১৩৩ রানের জুটি ভাঙলেই দুইজনের কাজ শেষ হয় না। বাংলাদেশকে এখনো পাড়ি দিতে হবে লম্বা পথ। আর সেই পথচলায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে এই দুজনকেই।
এতসব রেকর্ডের মাঝে জাকির হাসান নিজেও লিখে ফেলেছেন আরেকটি ইতিহাস। অভিষেক টেস্টেই অর্ধশতকের দেখা পেলেন তিনি। ১০১ বল খেলেই ছুয়েছেন সাদা পোশাকে নিজের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। কিছুদিন আগেই ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে বিশাল সেঞ্চুরি করেছিলেন। আজ জাতীয় দলের হয়েও নিশ্চয়ই নিজের ইনিংসটা আরো লম্বা করতে চাইবেন জাকির। তাহলেই ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে জাকিরের নামও।