লিটন দাসের সুন্দর ব্যাটিং, সৌম্য সরকারের ভয়ডরহীন ব্যাটিং, তামিম ইকবালের স্বভাবসুলভ স্লথ ব্যাটিং কিংবা আনিসুল ইসলাম ইমনের উত্থান – এত কিছুর ভিড়ে নাজমুল হোসেন শান্ত নামক ব্যক্তিটিকে নিয়ে আলোচনা ছিল না বললেই চলে।
এমন না যে, তিনি গোটা আসরে রান পাননি। এর আগেও তিনি করে ফেলেছেন দু’টি হাফ সেঞ্চুরি। তারপরও তিনি ছিলেন আলোচনার বাইরে।
কিন্তু, শান্ত যেদিন অশান্ত হন, সেদিন আলোচনায় থাকেন কেবল তিনিই। শান্ত এবার সেটাই করলেন। তাঁর সুবাদে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেল। শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীর অধিনায়ক এদিন রূদ্রমূর্তি ধারণ করেছিলেন।
তামিম ইকবালের দল ফরচুন বরিশালের বিরুদ্ধে ৫৫ বলে করেন ১০৯ রান। ইনিংসে ছক্কাই ছিল ১১ টা। চার মাত্র চারটা। চমৎকার এক অধিনায়ক সুলভ ইনিংস। রাজশাহীর ব্যাটসম্যানরা এদিন ছক্কার বৃষ্টি নামিয়েছিলেন। ২২০ রানের ইনিংসে ছক্কা এসেছে মোট ১৮ টা। চার ১২ টা। ইনিংস জুড়েই ছিল ক্লিন আর বিগ হিটের অনবদ্য প্রদর্শনী!
টি-টোয়েন্টিতে এটা শান্তর দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। অধিনায়কত্বের চাপ মাথায় নিয়ে নিখুঁত এক ইনিংস খেলেছেন। উদ্বোধনী জুটিতে ১৩১ রান তিনি যোগ করেন আরেক তরুণ আনিসুল ইসলাম ইমনের সাথে। বলে না দিলেও চলে যে, এটা চলতি আসরে এখন অবধি সবচেয়ে বড় রানের জুটি।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে শান্তর আবির্ভাব ২০১৬ সালের যুব বিশ্বকাপ দিয়ে। যুব ক্রিকেটে তিনি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেই বড় তারকা, সেরা তারকা। আজো অনূর্ধ্ব ১৯ পর্যায়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনিই। ডি কক, বাবর আজম, বিরাট কোহলি – সবাইকে পেছনে ফেলে। ‘ফিউচার বিগ থিঙ’ এই তকমা তিনি শুরু থেকেই নামের সাথে বয়ে নিয়ে আসছেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) শুরু থেকেই শান্তর ব্যাপারে সচেতন ছিল। তাকে ঘিরে বিস্তর পরিকল্পনা, তাঁর পেছনে বিস্তর বিনিয়োগের শুরুও সেই প্রথম থেকেই।
২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে পাঠানো হয় জাতীয় দলের সঙ্গী করে। ম্যাচ খেলানোর জন্য নয়, স্রেফ দলের হয়ে অভিজ্ঞতা নিতে, ড্রেসিংরুমের আবহ বুঝতে। এটা বিসিবির জন্য বিরাট একটা বিনিয়োগ।
সেবার স্রেফ ভাগ্যক্রমে টেস্ট অভিষেক হয়ে যায়। এক গাদা ইনজুরির কারণে টিম ম্যানেজমেন্টের হাতে আর কোনো উপায় ছিল না। পরের বছর ওয়ানডে অভিষেক। বড় মঞ্চ, আবু ধাবির এশিয়া কাপ। শান্ত চূড়ান্ত ফ্লপ। অবস্থা এতটাই বেগতিক ছিল যে, দেশ থেকে একে একে সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস – সবাইকে উড়িয়ে এনেছিল বিসিবি। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি। ফাইনালে ওপেনার হিসেবে লিটনের সঙ্গী হয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
তবে, সেই দু:সময়টা কাটিয়ে উঠেছেন শান্ত। সম্প্রতি টেস্ট দলে জায়গা করে পাকিস্তানে ভাল করেছেন। দেশের মাটিতে করেছেন হাফ সেঞ্চুরি। স্টিল আ লঙ ওয়ে টু গো!
এর মধ্যে বিসিবিরও আস্থা রেখেছে শান্তর ওপর। তাকে ‘এ’ দলের অধিনায়ক করে দেশের বাইরে পাঠানো, ইমার্জিং দলের অধিনায়ক করা, সিনিয়রদের মাঝে বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে একটা দলকে নেতৃত্ব দেওয়া – সবই বিসিবির দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের অংশ।
শান্তও আস্তে আস্তে সেই আস্থার প্রতিদান দিতে শুরু করেছেন। পায়ের নিচে হারানো মাটিটা ফিরে পাচ্ছেন। এবার শুধুই এটা ধরে রাখার পালা।